বৈঠকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আগামী ২৩ আগষ্ট চা বাগান মালিক–শ্রমিকদের সাথে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর ত্রি-পাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকে শ্রমিকদের দাবীর পক্ষে তিনি কথা বলবেন বলে জানান। তিনি শোকের মাস, চা শিল্প ও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আগামী ২৩ তারিখ পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ আসার পরপরই সাধারণ শ্রমিকরা বৈঠকে হট্টগোল শুরু করেন। তারা দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দিয়ে বৈঠক থেকে বের হয়ে এসে শ্লোগান দিতে থাকেন।
এসময় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক মুলতবি হয়ে যায়।
পরে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে কর্মবিরতির আহ্বান সাধারণ শ্রমিকরা মেনে নেয়নি। ফলে আমরা আন্দোলন ও আলোচনা এক সাথে চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের অপর একটি অংশ দুপুরে চা শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটির ব্যানারে নগদ এবং সুযোগ-সুবিধা সহ দৈনিক ৫’শ টাকা মজুরীর দাবীতে শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমোহনা চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে। পরে কমিটির সভাপতি ও রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জির নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ শেষে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি বরাবর একটি বিভিন্ন দাবী দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এসময় শ্রমিকনেতা বিজয় বুনার্জি ৩শ’ টাকা মজুরী দাবিতে আন্দোলরত শ্রমিক নেতৃবৃন্দের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ দাবী করে বলেন, তারা মালিক পক্ষের সাথে আতাঁত করে দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই শ্রমিক নেতারা চা বাগান মালিকদের সাথে আতাঁত করে শ্রমিকদের ১শ’ ২০ টাকা মজুরির কাজ করিয়ে নিজেরা অট্টালিকার মালিক হয়ে গেছেন। চা শ্রমিকরা পাকা ঘর নির্মাণ করলে বাগান কর্তৃপক্ষ বাধা দেয় কিন্তু শ্রমিক নেতারা অট্টালিকা নির্মাণ করলেও কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হয় না। বিজয় বুনার্জী বলেন, গত ১৯ মাস থেকে শ্রমিকদের স্বার্থে কোন দাবী আদায় করতে পারেনি তারা। এখন আবার ৩শ’ টাকা মজুরীর দাবীতে আন্দোলনের নামে কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়েছে। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য ইউনিয়নের নেতাদের প্রতি মাসে ১৫ টাকা করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মাসে ১৫ লক্ষাধিক টাকা ইউনিয়ন নেতাদের হাতে আসে। যে আন্দোলন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের করার কথা, সে আন্দোলন শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে করবে কেন। বিজয় বুনার্জী শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ, ব্যর্থ এবং অবৈধ আখ্যায়িত করে তাদের দ্রুত পদত্যাগ করে লেবার হাউস ত্যাগ করার আহ্বান জানান।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলছে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি অনেক আগে থেকেই আমি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করে আসছি। তিনি শ্রমিকদের সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৩ আগষ্ট সকাল থেকে মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে শ্রীমঙ্গলসহ দেশের ১৬৭ টি চা বাগানে শ্রমিকরা একযোগে কর্মবিরতি পালন করছে।
|