লন্ডন: রোহিঙ্গা বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় রাখাইনের সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের মাঝে অবিলম্বে মানবিক সাহায্য কার্যক্রম শুরু ও কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়নে জোর দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। শক্তিশালী সমন্বিত ও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সকল আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরৎ নেয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও বৃটেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো চায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা। সেই নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব আসতে পারে পরিষদের বৈঠকে বলেছে ভয়েস অব আমেরিকা। তবে এতে ভেটো দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রাশিয়া আর চীনের।
লন্ডনের এক কূটনৈতিক সূত্র থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রথমতঃ মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ। দ্বিতীয়তঃ রোহিঙ্গাদের মাঝে অবিলম্বে মানবিক সাহায্য কার্যক্রম শুরু এবং তৃতীয়তঃ কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাজাখস্তান, সেনেগাল এবং সুইডেন, পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী এ ৭ সদস্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানায় বলে খবর দিয়েছে এএফপি। জানা গেছে আসছে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবে ইথিওপিয়া। বুধবার, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স’এর বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘দ্রুত এবং কার্যকর’ পদক্ষেপ চান। এদিকে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জনাথন অ্যালেনের বরাত দিয়ে বাংলাট্রিবিউন লিখেছে, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সহিংসতা বন্ধের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে’। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রহারা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী কিংবা নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতির প্রশ্নটি আলোচনা করা হবে।
জাতিসংঘের নেতৃত্বে মায়ানমারের নাগরীক চিহ্নিত করণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সামরিক অভিযানে বিধ্বস্ত রাখাইনের রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরৎ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর মায়ানমারের নেতৃ অং সান সু কি তাদের নাগরীকদের চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে ফেরৎ নিতে প্রস্তুত জানালে বাংলাদেশ এ প্রস্তাব দেয়। এমন খবর প্রকাশ করেছে সাউথএশিয়ানমনিটর.কম।
জাতিসংঘের ভাষায়, মায়ানমারে “সংখ্যালঘু নিধন”(এথনিক ক্লিনসিং) এর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য একমাসে প্রায় ৪,৮০,০০০ রোহিঙ্গা পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ৪,০০,০০০ এর উপরে রোহিঙ্গাদের একটি বিরাট অংশ বিগত এক দশক ধরে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে। তাদের আজো ফেরৎ নেয়ার কোন ব্যবস্থা মায়ানমার করেনি।
রাখাইনে মায়ানমার সামরিক বাহিনীর, দেশের সাধারণ নাগরীকদের উপর আক্রমন অভিযান বন্ধে তেমন শক্ত কোন ভূমিকা নেননি বলে অং সান সু কি ইতিমধ্যেই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন, খুব চতুরতার সাথে তিনি এড়িয়ে যান ঠিকই কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, রাখাইনে নিরীহ সাধারণ নাগরীকদের উপর সেনাবাহিনীর নগ্ন আক্রমনের খুবই জোড়ালো নিন্দা জানায় এবং বিলম্ব না করে যথাশীঘ্র এই হিংস্র আক্রমন বন্ধ করার কথা বলে দিয়েছে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সু কি গত ১৯শে সেপ্টেম্বর বলেন যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের নাগরীকদের ফেরৎ নিতে তারা রাজী আছেন এবং যে কোন সময় একাজ শুরু করতেও প্রস্তুত।
অং সু কি’র দেয়া বক্তব্যে একটি প্রশ্ন খুব বড় করে দেখা দিয়েছে যে কি করে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের নাগরীকত্ব চিহ্নিত করা যাবে। মায়ানমার প্রায় একদশক আগেই ওদের নাগরীকত্ব কেড়ে নিয়েছিল। এখন ওরা জান বাছিয়ে পালিয়ে এসেছে। তাদের ঘর-বাড়ী সব পুড়িয়ে দিয়ে, তাদেরকে হত্যা করে একেবারে নির্মূল করে দিতে মায়ানমার এ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে যারা জান বাচিয়ে পালিয়ে আসতে পারছে তারাই আসছে।
ফলে বাংলাদেশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি পরীক্ষক দলের মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের নাগরীকত্ব তদন্তের কাজ শুসার করার প্রস্তাব দিয়েছে।
অং সু কি বলেছেন, উভয় দেশ ১৯৯২ সালে একমত হয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরৎ নেয়ার বিষয়ে যে চুক্তিতে সই করেছিল সে অনুসারেই ফেরৎ নেয়ার কাজ চলবে। ওই সময় মায়ানমার ২,৫০,০০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ নিয়েছিল। সূত্র: দি গার্ডিয়ান, এএফপি, বাংলাট্রিবিউন ও সাউথএশিয়ানমনিটর.কম।