দেবী হলেন তিনি যাকে মূর্তি রূপে পূজা করা হয়। তবে কখনো কি শুনেছেন দেবী সয়ং জীবন্ত। আজ তেমনি এক জন দেবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব যাকে মানার পর থেকে তার পা কখনো মাটি স্পর্শ করে। সব সময় সোনার পাল্কিতে চরে বেড়াতেন। তাহলে আসুন শুরু করা যাক। জীবন্ত দেবী শুনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এই দেবী কোনো মাটির তৈরি মূর্তি নন বরং একজন রক্ত মাংস সম্বৃদ্ধ এক কুমারী। হে ঠিক একজন কুমারী এক অল্প বয়সের কুমারী মেয়ে। যেহেতু একজন কুমারীকে দেবী বানানো হত তাই তারা পূজাকে কুমরী পূজা বলা হয়। নেপালে বহু বছর ধরে এ পূজা করা হয়। কুমারী দেবীর প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত আছে, তাদের একটার মতে, মল্ল বংশের রাজা ত্রিলয়া মল্ল তন্ত্রশক্তির চর্চা করত। এই শক্তির চর্চায় সে এমন সিদ্ধি লাভ করেছিল যে তালেজু দেবীর সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ হতো। প্রতি রাতে মানুষের রূপ ধরে দেবী প্রাসাদে আসতেন। তিনি এবং রাজা পাশা খেলতেন আর দেশের মঙ্গলের জন্য বিভিন্ন আলোচনা করতেন।
কিন্তু দিনের পর দিন রাজা দেবীর উপর আকৃষ্ট হয়ে উঠছিলেন। একথা বুঝতে পেরে দেবী বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হন। তিনি প্রাসাদে আসা বন্ধ করে দেন। অনুতপ্ত ত্রিলয়া বারবার দেবীর কাছে ক্ষমা চান, কঠোর সাধনা শুরু করেন। অবশেষে দেবী তালেজু ভক্তকে ক্ষমা করেন। তিনি বলে যান তার আবির্ভাব হবে ‘শাক্য’ আর ‘বজ্রাচার্য’ জাতের কুমারী মেয়ের মাঝে।
অনেক অনেক কাল আগে থেকে নেপালে জীবন্ত কুমারী পূজার প্রথা চালু আছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী কুমারী হল তালেজু দেবীর মানুষ রূপের অবতার, নিজ ক্ষমতাবলে তিনি সবকিছুকে রক্ষা করেন। মল্ল যুগ থেকেই কুমারী দেবীদের নেপালের রক্ষাকর্তা দেবী বলে মানা হয়। তবে এই দেবী হওয়া চারটে খানি কথা নয়। কুমারী দেবী হতে হলে মেয়েদের অনেক পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রথমতো মেয়েটিকে অবশ্যই অল্প বয়সের কুমারী হওয়া লাগবে। কখনো কাঁটাছেড়া দাগ, এমন মেয়ে যার শরীর থেকে কখনো রক্তপাত হয়নি, শরীরে কোনো রোগ বা রোগের চিহ্ন, যেমন বসন্তের দাগ থাকা যাবে না। পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এমন কোনো লক্ষণও থাকা যাবেনা। তাদের ত্বক হবে ত্রুটিমুক্ত, শরীর দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া চলবে না, সবগুলো দাঁত থাকতে হবে, কালো চোখ আর কালো চুল থাকবে, সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন হাত-পা হবে এবং অতি অবশ্যই তাদের রজঃস্বলা হওয়া চলবে না।(আগামীতে ২য় পর্ব)
|