ধলাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন;
ঝুঁকিপূর্ণ ধলাই নদীর বাঁধ ও সেতু; হুমকিতে পরিবেশ, প্রতিবেশ
২ ব্যক্তিকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত ২ ব্যক্তিবে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাখন চন্দ্র সূত্রধর এর নের্তৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত এ জরিমানা করেন।
জানা যায়, উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদীর একাধিক স্থান থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। লিজের বাহিরেও বালু উত্তোলনের পর কৃষিজমিতে স্তুপীকৃত হচ্ছে। এতে মানা হচ্ছেনা কোন আইন। ড্রেজার মেশিনে উচ্চ শব্দে বালু উত্তোলনে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ধ্বসে পড়ছে। একাধিক ট্রাকযোগে বালু পরিবহনে ভেঙ্গে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী রাস্তাঘাট। ধর্মপুর গ্রামের প্রায় অর্ধ কি.মি. জুড়ে বালু উত্তোলনের ফলে গ্রাম্য রাস্তার বিভিন্ন অংশে গর্ত ও ভাংঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেজার মেশিনের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা। হুমকির মুখে পড়েছে নদীর উপর স্টিলের ব্রিজ। নদীর বাঁধ ধ্বসে এই এলাকার কয়েকটি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে।
তবে ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বালু মহালের ইজারাদারের প্রতিনিধি বদরুল ইসলামকে তিন লক্ষ টাকা এবং অন্য ইজারাদারের প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলমকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। মাটি ও বালি ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে বালু উত্তোলনের ফলে ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময়ী সম্পদ। বালু মহাল নয় এমন কিছু জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনজীবনে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক হুমকি। তবে বালু উত্তোলনকারীরা দাবি করছে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে এ বছর দুই খন্ডে দুইজন বালু ইজারাদার থাকায় সীমানা নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গত ৮ নভেম্বর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এঘটনায় সোয়েব আহমদ তরফদার বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ খোরশেদ আলমকে প্রধান আসামী করে কমলগঞ্জ থানায় মামলাও রয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে বালু মহাল ইজারাদারের প্রতিনিধি ইমন আহমদ তরফদার বলেন, আমরা ধলাই নদীর প্রথম খন্ড এক কোটি ৯০ লাখ টাকায় ইজারা গ্রহন করি। তবে অন্য ইজারাদার খোরশেদ আলম অবৈধভাবে ব্রিজের নিচ ও আমাদের প্রথম খন্ড থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। এনিয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। তিনি কোন সাড়া দেননি। ফলে গত ৮ নভেম্বর আমাদের অংশে বালু উত্তোলন করার সময় আমরা বাঁধা দিলে খোরশেদ আমাদের উপর দলবল নিয়ে হামলা করে। এতে আমাদের ৬ জনকে জখম করে। শনিবার ভ্রাম্যমান আদালত অভিযানের সময় অন্যায়ভাবে আমাদেরকে তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন। অথচ এর আগে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দেখানো জায়গা থেকেই বালু উত্তোলন কওে আসছি।
অভিযুক্ত বালু মহাল ইজারাদার খোরশেদ আলম বলেন, আমার ইজারার স্থান হচ্ছে ব্রিজের কাছাকাছি। তাই ব্রিজ বাঁচাতে একটু দুরে বালু উত্তোলন করায় আমাকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর মৌজায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ২ জন ব্যক্তিকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর আওতায় ৫ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে।