লণ্ডন শহর রোমানগন প্রতিষ্ঠা করেন আজ থেকে ১৯৭৫ বছর আগে। সে প্রায় ২ হাজার বছরের ইতিহাস। প্রকৃতির অনন্ত শোভাবৈভবে সমৃদ্ধ এ পাথুরে মাটির সন্ধান পেয়ে রোমানগন ০০৪৩খৃষ্টাব্দে বৃটেনে প্রথম পদার্পণ করেন। বলা যায় সেই থেকেই লণ্ডন শহুরে জীবনের চলার শুরু। রোমানগন অবশ্য নাম দিয়েছিল ‘লণ্ডিনিয়াম’।
রোমান লণ্ডনের বয়স প্রায় ৪১০ বছর বলে গবেষকদের অনুমান। ০০৪৩ থেকে ৪১০সিই(খৃষ্টাব্দ)। এর পর লণ্ডন প্রবেশ করে এঙ্গলো-সেক্সন সময়ে। ৫ম শতাব্দি থেকে ১০৬৬সিই পর্যন্ত। ১০৬৬ সিই থেকে শুরু হয় নরমেন ও মধ্যযুগীয় লণ্ডনের যা ১৫শ শতাব্দি পর্যন্ত চলেছিল। গবেষকদের মতে ১৪৮৫ সিই বা খৃষ্টাব্দ থেকে আধুনিক লণ্ডনের যাত্রা শুরু। সুদীর্ঘ এই চলার পথে সৃষ্টির লণ্ডন হারিয়েছে বেশী, পেয়েছে কম। জন্ম লগ্ন থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ বছরের চড়াই উৎরাই অবিশ্রাম পথ হেঁটে তিলে তিলে যে ঐষিরূপসুষমায় বিকশিত হয়েছিল; পাথুরে পাহাড়ি কন্যার নিটোল সে রূপ আজ লণ্ডনের কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবখানেই কৃত্তিম সব বৈভব ফ্যাকাশেমুখে হাসে!
সবচেয়ে দামী যা হারিয়েছে, যা কোনদিন আর ফিরে পাবে না লণ্ডন; সে হলো তার চিরতরে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি থেকে পাওয়া রূপ বৈচিত্র।
লণ্ডন হারিয়েছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সুশোভনা সুষমা। লক্ষ লক্ষ বছরের প্রাকৃতিক নিয়মে, প্রাচীন প্রকৃতি ঘেরা যে লণ্ডন গড়ে উঠেছিল সৃষ্টির আপন নিয়মে সে লণ্ডন এখন আর নেই। আধুনিক লণ্ডনে আকাশচুম্বি দালান আছে কিন্তু হারিয়েছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সারি সারি বৃক্ষ, গুল্ম-লতার অপার নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য। যা একসময় বিমোহিত করেছিল রোমানদের।
ইন্ডিয়ান বিন গাছ এখন আর পাওয়াই যায় না। বিচ গাছ, ইউ গাছ, কর্ক ওক গাছ, হোম ওক গাছ, পাথর পাইন গাছ, কালো ওয়ালনাট গাছ ইত্যাদি ইত্যাদি, সে অনেক অনেক গাছ-গাছালি এখনও যা আছে তা খুবই হাতে গোনা। কাটা-ছেঁড়ায় ক্ষতবিক্ষত! আধুনিক নগরায়ন, শিল্পের প্রসার, তড়িৎ যোগাযোগের পথ খোলা কিংবা গৃহায়নের ব্যবস্থা করতে গিয়ে লণ্ডনকে হারাতে হয়েছে তার সৃষ্টির সেরা সেরা বৈভব বৃক্ষ-লতাগুল্ম। সৃষ্টির দান সুপেয় পানীয় আর প্রাণী রক্ষাকবজ লতাগুল্ম আর বৃক্ষরাজি। হিসেব করে সবই আছে তবে মিশেল দেয়া। খাঁটী নেই।
এখন যা আছে তা খুব হিসেবের। বৃটেনের কোন শহরে কি কি গাছ কতটি আছে তা অবশ্য বনবিভাগের খাতায় লিখা আছে। প্রকৃতির প্রতি হাজার বছরের অবজ্ঞায় এখন লণ্ডন বুঝতে পেরেছে কি ভায়নক ক্ষতিই না তার হয়েছে। শহরের পরিবেশ ও বাতাসের গুণগতমান আর বিনোদনের কাজে এ বৃক্ষরাজির ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এইসব অভিজ্ঞতা থেকে যেখানে সিডনী নগরের পরিবেশকে কৃত্তিম উষ্ণতা থেকে বাঁচানোর জন্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সেখানে ৫০ লক্ষ বৃক্ষ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অবস্থান থেকে বলতে হয়, এতো অভিজ্ঞতার পরও ‘ইউস্টন স্কোয়ার গার্ডেন’-এ মাত্র ১৬টি গাছকে বাঁচানো গেছে। এইচএস-২ লিমিটেড ২৮টি গাছ কেটে ফেলেছে। এরা সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী কাজ করেছে ‘সেন্ট জেমস গার্ডেনে’। ৫০টি গাছ সেখানে ফেলে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে খুবই অসন্তুস্টি প্রকাশ করে টুইট করেছেন ‘নেটলি স্কুল গভর্নর’ ডরোথি হেকমেন। জরিপে দেখা গেছে জংলী প্রাণী থেকে শুরু করে লতাগুল্ম-পানি কিংবা বাতাসের গুণগত পরিবেশের স্বাভাবিকতা ঝুঁকির মাঝে, লিখেছে ‘দি গার্ডিয়ান’। অবশেষে বলতেই হয় এটিই ধনবাদের নিয়ম ও নিয়তি।
হারুনূর রশীদ, লণ্ডন শুক্রবার ১৩ই এপ্রিল ২০১৮ইং