লন্ডন: শুক্রবার, ২৭শে মাঘ ১৪২৩।। পৃথিবীতে যে সমস্ত আদিম বর্বরোচিত কাজ-কর্ম আজও প্রচলিত রয়েছে, তার মধ্যে এটি একটি। মিশরে অনেকটা প্রচলিত এই কর্ম-কান্ড ঘটে থাকে মানুষের ভিড়ের মধ্যে। আর এর মূল লক্ষ্য হলেন মহিলারা। অনেকটা, প্রকাশ্যে মহিলাদের গণধর্ষণ।
মিশরীয়দের ভাষায় ‘তাহারুশ’। এই ‘তাহারুশ’ বা ‘নিগ্রহ’ বলতে প্রকাশ্যে মহিলাদের শারীরিকভাবে আঘাত করা, বিবস্ত্র করা, গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা, এবং সুযোগ পেলে তাঁদের চরম সর্বনাশ করা।
সর্বদাই এই নিগ্রহ ঘটে ভিড়ের মধ্যে, এবং নিগ্রহকারীদের সংখ্যা হয় অজস্র। ফলে না যায় সেই সমস্ত লাঞ্ছনাকারীদের চিহ্নিত করা, না যায় তাদের কোনও শাস্তি সুনিশ্চিত করা।
অনেক প্রাচীনকাল থেকেই মিশরীয়দের মধ্যে রাস্তাঘাটে মহিলাদর বা বালিকাদের উত্যক্ত এমনকি যৌন নির্যাতন ব্যাধির মত চলে আসছে। এই যৌন নির্যাতনের ঘটনা বলতে গেলে মিশরীয় নারী আর বালিকাদের গা সওয়া হয়ে গিয়ে তাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মধ্য প্রাচ্যের কোনও কোনও দেশেও এ ধরনের জংলী কর্মকান্ডের প্রচলন রয়েছে বলতে গেলে এক বীভৎস প্রথার মত।
প্রকাশ্য দিনদুপুরে মহিলা নিগ্রহের মত এমন ধরনের গর্হিত কাজ বিগত বছর দশেক কিংবা তারও বেশি সময় ধরে মিশরে চলে আসছে অনেকটা প্রচলিত প্রথার মত। রমাদান উদযাপনের সময়েই বলতে গেলে আয়োজনই করা হয় তাহারুশের। দুষ্ট লোকেরা আস্কারা পেয়ে পেয়ে এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে এখন দস্তুরমত খেলার আদলে এই যৌন হয়রাণির আয়োজন করা হয়। ইদ পার্বনের সময় দুষ্ট বজ্জাত লোকেরা রাস্তায় নিজেদের মধ্যে একটির ভিতর আর একটি মানববৃত্ত তৈরি করে।
বৃত্ত তিনটির কেন্দ্রে এনে ফেলা হয় এক বা একাধিক পথচারী মহিলাকে। প্রথম বৃত্তটিতে দাঁড়ানো পুরুষদের লক্ষ্য হয় একেবারে কেন্দ্রে থাকা মহিলাদের কাছে পৌঁছনো, এবং তাঁদের শারীরিকভাবে ভোগ করা।
দ্বিতীয় বৃত্তে দাঁড়ানো পুরুষরা চেষ্টা করে প্রথম বৃত্তে থাকা খেলোয়া়ড়দের সরিয়ে তাদের জায়গা নিতে। এর ফলে প্রবল ঠেলাঠেলির সৃষ্টি হয়।
আর তৃতীয় বৃত্তে থাকা খেলোয়াড়দের কাজ হল, ভিতরে ঘটে চলা সমস্ত ঘটনাকে পথচারীদের চোখ থেকে আড়াল করে রাখা। এর মধ্যেই কিছু খেলোয়াড় আবার আক্রান্ত মহিলাদের রক্ষা করার ভান করে।
আদপে তাদেরও লক্ষ্য থাকে আক্রান্ত মেয়েটিকে ভোগ করে নেওয়া। তাছাড়া ওই উত্তুঙ্গ জনগণকে ওই হাতে গোনা কয়েকজন ’রক্ষাকারী’র পক্ষে যে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, তা বলাই বাহুল্য।
বর্বরোচিত এই নির্যাতনের খবর বৃহত্তর দুনিয়ার কাছে প্রথম প্রকাশ্যে আসে যখন আমেরিকান সংবাদসংস্থা সিবিএস-এর রিপোর্টার লারা লোগান তাহারুশে নিগৃহীত হন।
মিশরের রাষ্ট্রপতি হোসনি মোবারকের পতনের পরে লারা গিয়েছিলেন ইজিপ্টে খবর সংগ্রহ করতে। মিশরের তাহরির স্কোয়্যারে তাহারুশে উন্মত্ত জনগণ ঘিরে ধরে লারাকে। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে যৌন অত্যাচার চলে তাঁর উপর। কয়েক মাস পরে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানান তাঁর এই লাঞ্ছনার কথা।
২০১৬-র শুরুর দিকে তাহারুশের মতো ঘটনা লক্ষ্য করা যায় জার্মানি-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও। উন্মত্ত জনগণের হাতে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হন ইউরোপের প্রায় হাজারখানেক মহিলা।
সেইসব দেশের প্রশাসন জানায়, মধ্য-প্রাচ্য থেকে আগত উদ্বাস্তুরাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, উদ্বাস্তুদের হাত ধরে তাহারুশ সংস্কৃতির আগমন ঘটে গিয়েছে ইউরোপেও। এর পরেই এই বীভৎসতার উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মেলে।
এই একবিংশ শতকেও তাহারুশ বা প্রকাশ্য দিনে-দুপুরে নারী নির্যাতনের মতো বর্বরোচিত ঘটনা যে নির্বিচারে প্রতি বছর চলে আসছে, তা অবশ্যই মানবতার লজ্জা।
বর্তমান মানবসমাজ একদিকে নারীর সম্মান রক্ষার জিগির তোলে, অন্যদিকে সেই নারীরই সম্মানহানিকে উৎসবের আদলে দেখতে চায়। এই অমানবিকতা বন্ধ হোক, এটাই একমাত্র কাম্য।
“Taharrush is about large groups of Arab men surrounding their victims and then subjecting them to sexual assault. They form circles around women, and if there are enough men, drag the women along with the mob, rip their clothes off and physically assault them. The inner circle of men is the one assaulting the women, while the middle circle consists of spectators. Another outer circle tries to divert attention. Some men are placed strategically to act as if trying to help the women.” (ইন্টারনেট ও ইন্ডিয়া টাইমস.কম থেকে অনুদিত)