আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার।। মৌলভীবাজারের কুশিয়ারায় অবৈধ পথে বন্ধ হচ্ছেনা বালু বিক্রি। মাসে বিক্রি হয় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার বালু, স্থানীয়দের নানা অভিযোগ। ভারত থেকে আসা কুশিয়ারা নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় লিজের নামে অবৈধ পথে বালু বিক্রি বন্ধ হচ্ছেনা। বরং স্থানীয়দের বাঁধায় স্থান পরিবর্তন করে নদী গর্ভের অন্য যায়গা থেকে বালু তুলে প্রতি মাসে অন্তত প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করছে “তালুকদার এন্টারপ্রাইজ” নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বালাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে একটি বিশেষ চুক্তি থাকলেও সেই চুক্তি ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষের স্থাপনায় ও বাসা-বাড়িতে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে এসব বালু।দেশের সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী। নদী পাড়ের ঘর-বাড়ি ভাঙ্গন ও জেলে সম্প্রদায়ের মৎস আহরণে বাঁধা সৃষ্টি করায় সম্প্রতি কয়েকদিন যাবৎ রাজনগর উপরজেলার ফতেপুর ইউপির জাহিদপুর গ্রামে একাধিক সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছিল। নদীতে পাতানো জাল ছিড়ে ফেলায় কয়েক দফা ট্রলার ভর্তি বালুসহ ট্রলার শ্রমকিদের আটকেও রাখেন জেলেরা। এতে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ এসে সরজমিনে এসে কিছুটা মিটমাট করেন।
কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ পথে এভাবেই ট্রলার ভর্তি করে বালু নিয়ে বিক্রি করা হয়।
একজন হারুনূর রশীদসহ শতাধিক ব্যক্তি বিগত ২২জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দেন। একই সাথে স্থানীয় পানিউন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু কোন ফলোদয় হয়নি।
|
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী আশরাফ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে ২০১৭ সালে কালনী কুশিয়ারা ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় কুশিয়ারা নদীর জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন মোতাবেক নদীর “এলাইনমেন্ট” সহ নদী পাড়ের যাতে কোন রকম ক্ষয়ক্ষতি না হয় তা অনুসরন পূর্বক খনন কাজ করতে চুক্তি করে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। চুক্তিতে বলা হয়, “খননকৃত বালু শুধুমাত্র মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন শ্রীহট্র অর্থনৈতিক জোনের ভূমি উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হবে”। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক চুক্তিটিকে বুড়ি আঙ্গুল দেখিয়ে কুশিয়ারার জাহিদপুর থেকে দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ বালু তুলে উজানে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করেন।
পরবর্তীতে জনসাধারণের বাঁধার মুখে পড়ে ভাটি অঞ্চলের আব্দুল্লাহপুর থেকে বালু তোলা হচ্ছে এখন। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ১৫/২০টি করে ট্রলার বুঝাই বালু উঠিয়ে উজানে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। বালু ক্রেতারা জানিয়েছেন, এক ট্রলার বালু প্রায় ৫০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করা হয়। এভাবে ১৫ ট্রলারের দাম পড়ে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে অবৈধ পথে প্রতি মাসে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়।
ওই প্রতিষ্ঠানসহ সিন্ডিকেটরা মাত্র কয়েকদিনের মাথায় “আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ” হলেও কোন অদৃশ্য কারণে অবৈধ পথে বালু বিক্রি বন্ধ করতে পারছেনা পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর এই কালো পথে বালু পাচার করায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব আয়।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর থেকে রাজনগর উপজেলার হলদিগুল পর্যন্ত চুক্তিতে দেয়া প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা যেন এখন সোনার খনি। নামে-বেনামে স্থানীয় নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে ওই ঠিকাদার বালু বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে অবৈধ পথে বালু উত্তোলন যাতে বন্ধ করা হয়, গেল ২২ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় হারুনুর রশীদসহ নদী পাড়ের শতাধিক ব্যক্তি। এই অভিযোগের ২ মাস অতিবাহিত হলেও বিষয়টি নজরে আনছেনা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তালুকদার এন্টারপ্রাইজ’র মালিক আশরাফ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে আলাপচারিতা হলে তিনি বলেন, তিনি শ্রীহট্র অর্থনৈতিক জোন ছাড়া অন্য কোথাও বালু বিক্রি করছেন না। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জানান, শুধুমাত্র শ্রীহট্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে বালু পাঠানোর চুক্তি হয়েছিল “তালুকদার এন্টারপ্রাইজ” এর সাথে। কুশিয়ারায় অবৈধ পথে বালু বিক্রির অভিযোগ এখনো পাইনি। শ্রীহট্র অর্থনৈতিক জোন ছাড়া অন্য কোথাও বালু বিক্রি করলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
|