মুক্তকথা প্রবন্ধ॥ মায়া! মহব্বৎ! সম্ভবতঃ অন্য শব্দে বলতে গেলে বলতে হবে আকর্ষণ। বৌদ্ধ ধর্মসহ বিশ্বের প্রায় পরিচিত সকল ধর্মই ‘মায়া’ শব্দটিকে নিয়ে শুধুই ইতিবাচক কোন আলোচনা করতে পারেনি। ধর্ম করতে পারেনি এর অর্থই হলো ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে যিনি বলছেন তিনি পারেননি। ধর্মতো একটি শব্দ মাত্র। ধর্ম শব্দের নিজের উদ্যোগে কিছুই করার নেই। মানুষ কেউ না কেউ তাকে ব্যবহার করতে হয়। এটাই এ বিশ্ব চরাচরের মৌলিক বিধান। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ধর্ম একদিকে যখন বলে মায়া ছাড়া কিছু চলে না। ঠিক একই সাথে বিপরীতে আবার বলে মায়া পরিত্যাগ খুবই ভাল। ধর্মের এই দ্বন্দ্বাত্মক ভূমিকা গোটা মানবজাতিকেও এক অনন্ত অসীম দ্বান্দ্বিক সমস্যার আবর্তে রেখেছে মানব সভ্যতার শুরু থেকে। সকল জ্ঞানের সুত্রই বলে, সমগ্র এ সৃষ্টি জগৎ মায়া বা আকর্ষণেরই ফসল। মায়া বা আকর্ষণ ছাড়া এ বিশ্ব সৃষ্টিজগৎ এক মূহুর্ত টিকে থাকতে পারবে না। অথচ কেনো জানিনা সকল ধর্মই ‘মায়া’ চিরন্তন সত্য যতবার বলেছে তার একই পরিমানে বলেছে মায়া পরিত্যাগেই পরিত্রাণ। মূলতঃ যারা বলেছেন তারা নিজেরাই এ মায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। মায়া থেকে বেরিয়ে আসা বলতে কোন তত্ত্ব হতেই পারে না। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এখানেই আমি খুঁজে পাই মনীষি কার্ল মার্কস’এর জগদ্বিখ্যাত উক্তি- এ সৃষ্টি জগৎ দ্বান্দ্বিক। কোথায়ও কিছুতেই একত্ব নেই। দ্বৈত শক্তির মায়া বা আকর্ষণই সর্বত্র কাজ করে যাচ্ছে প্রতিটি মূহুর্ত। এই দ্বৈত শক্তির সর্বোৎকৃষ্ট উপমা ও সমাধান দিয়ে গেছেন কালের শ্রেষ্ট মহাপুরুষ নবী মোহাম্মদ(সঃ), আল্লাহ ও শয়তানের উদৃতি বা সূত্র দিয়ে। শয়তান আল্লাহ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী! আবার শয়তান আল্লাহ ভয়ে ভীত। আল্লাহ তারও প্রভু। আল্লাহর প্রতি তার নিখাদ প্রেম, শ্রদ্ধা ভালবাসা সবকিছু। কিন্তু সে প্রতি মূহুর্তে আল্লাহকে মোকাবেলা করে চলছে অনাদি অনন্তকাল। কেউ কাউকে ছাড়া উভয়ের অস্তিস্থই বিলীন। এই যে অনন্ত নাছোড় সম্পর্ক স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির, এটিই মায়া। এ মায়া কোনভাবেই পরিত্যাজ্য নয়। যতই বিজ্ঞান পড়ুন, যতই ধর্মের নতুন নতুন সূত্র তৈরী করুন এ মায়া থেকে বেড়িয়ে আসা যায় না। রক্তের বাঁধন অমোগ সে মায়ারই এক অবিচ্ছেদ্য রূপ। শুধুই মানুষ নয়, বস্তু সহ, অমোগ সে বাঁধনে সৃষ্টি জগতের সকল প্রাণীকূলই আটকে আছে। একমাত্র মানুষই তার প্রয়োজনে সে মায়া থেকে সরে আসতে চেষ্টা করে কিন্তু অমোগ সে বিধান লঙ্গনের উপায় কারো নেই। স্রষ্টা শক্তির রহস্য বা শ্রেষ্টত্ব মনেহয় এখানেই। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মানুষ এই মায়াময় সৃষ্টি জগতের সেরা প্রাণী। সৃষ্টিশক্তিকে মোকাবেলার চিন্তা আর কোন প্রাণীর পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। একমাত্র মানুষই সে চিন্তা করে এবং সে আলোকে কাজও করে। মানুষ সৃষ্টিকে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে চায়। এ কাজ করতে গিয়ে মানুষ, মানুষকেও নিয়ন্ত্রনে রাখতে চায়। তাইতো মানুষকেই দেখতে পাওয়া যায় সৃষ্টি শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করেই চলেছে। মোকাবেলা করে চলতে চায় সৃষ্টি শক্তির। মানুষ প্রকাশ্যেই বলে সৃষ্টিকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এক মানুষ যখন এ কাজকে শয়তানের কাজ বলে নিষেধ দেয়, অন্য মানুষ তখন দু’হাত তুলে এর পক্ষে কথা বলে। মানুষ বুঝে এবং বিশ্বাস করে সৃষ্টির মূলে কোন না কোন অদেখা মহাশক্তি কাজ করে যাচ্ছে। সে শক্তি সচেতন না-কি অবচেতন না-কি স্বয়ংক্রিয় সে মানুষ আজো জানতে পারেনি মৌলিক অর্থে। হয়তোবা এ কারণেই মানুষ, অজ্ঞাত বলে সে রহস্য উদ্ঘাটন করতে চায় কায়মনবাক্যে! সত্যব্রতী হয়ে। অতীতকালের জ্ঞানী-গুণীজনেরা শয়তান প্রকৃতির যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে একমাত্র মানুষকেই সে নমুনায় দেখা যায়। মানুষ ছাড়া সারা বিশ্বের সকল প্রাণীকূল খাদ্য ও যৌন চাহিদার তাগিদে চলে থাকে। কেবল মানুষই এ দু’টুর বাইরে গিয়ে তৃতীয় চিন্তায় চলতে পারে। অনেক ধর্ম প্রবর্তকই বলেছেন শয়তান মানুষকে দিয়েই তার কাজ করে। তাই সুস্থ মস্তিষ্কে মানুষকে বলা যায় শয়তানের আদি ও আসল রূপ! মানুষ শয়তানেরই আরেক প্রতিভু। |