তুরস্কে সামরিক বিদ্রোহ দমন
মৃত্যুদন্ড ফিরতে পারে" />
২জন জেনারেলসহ ২৮৩৯জন সৈনিক গ্রেপ্তার
হারুনূর রশীদ: তুরস্ক, এবার নিয়ে পর পর চারবার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে অতীতে। বিগত তিন দফায় অভ্যুত্থান সফল হয় কিন্তু এ যাত্রায় চরমভাবে বিফল হয়েছে। এই বিফলতা তুরস্কের জন্য ভাল না মন্দ তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ বনাম গণতন্ত্রায়নের স্বার্থে। আরও বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের অশান্তি, মিসর সিরিয়ার রাজনৈতিক সীমাহীন ভোগান্তির পটভুমির বিচারে।
গতকাল শুক্রবার ১৫ই জুলাই ২০১৬, দিনগত রাতে একদল তার্কিশ সৈনিক প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে এক সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। তারা রাজধানী আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে সামরিক টেঙ্কবহর নিয়ে রাস্তায় নামে। কিন্তু এরদোগানের আইফোনের আহ্বানে সাড়াদিয়ে সাধারণ মানুষ অভ্যুত্থান ঠেকানোর জন্য রাস্তায় নেমে আসলে সৈনিকরা ব্যর্থ হয় ও গ্রেপ্তার হয়।
এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানে এ পর্যন্ত বিবিসি’র খবরে জানা যায় যে ২৬৫জন মারা গেছে ১৪৪০জন জখমপ্রাপ্ত হয়েছে।
সামরিক অভ্যুত্থান কোন কালেই রাজনৈতিক সমাধান নয়। আমাদের জানামতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয় চলমান সমাজের প্রতিষ্ঠিতরা, যারা কোন না কোন উপায়ে দেশের পরিচালনার কলকাটি নাড়তে বিফল হয় তখন তারাই তাদের ব্যর্থতার দায়ভার থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে সামরিক বাহিনীর কাঁধে সোয়ার হয়ে সাময়িক সটকে পড়ে। পরে ধীরে ধীরে আবার অবস্থা একটু সহনশীল হয়ে আসলে নতুন মোড়কে দেশ পরিচালনায় হাজির হয়। এ হলো সামরিক অভ্যুত্থানের একটি রূপ। আর একটি রূপ আছে আর সেটি হলো, সামরিক বাহিনী নিজেরা নিজেদের উচ্চাকাঙ্খা পূরণের উদ্দেশ্যে অভ্যুত্থানে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় এসব অভ্যুত্থানে বিদেশী মদত থাকে।
সামরিক অভ্যুত্থান সব সময়ই একটি দেশকে অগ্রসরমান অবস্থা থেকে পেছনে টেনে নিয়ে যায়। সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে এমন যে কোন দেশের দিকেই যদি আমরা তাকাই তা’হলে কি দেখি? প্রতিটি সামরিক অভ্যুত্থানের ঠেলা সামলাতে গিয়ে দেশগুলোকে আজ অবদি খেসারত দিয়ে যেতে হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসাবে দেখালে কোন ভুল হবে বলে মনে হয় না।
তুরস্কেরই একজন বিরুধি রাজনীতির নামি লেখক ও সাংবাদিক লেভেন্ত গুলতেকিন বলেছেন প্রতিবারের সামরিক অভ্যুত্থান তুরস্ককে পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে দিয়ে গেছে। তিনি আরও লিখেছেন, এভরেন, যিনি গেল বছর ৯৭বছর বয়সে মারা গেলেন, একটি অতি অগণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রেখে গেছেন তুরস্কের জন্য যা ১৯৮২ সালে চালু হয়েই জমায়েত ও কথা বলার উপর বিধিনিষেধ জারি রাখে। মারাত্মকভাবে শ্রমিক ইউনিয়ন বন্ধ রাখে আর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এই প্রথমবার সাধারণ মানুষ সামরিক বাহিনীকে হিংসাত্মক হস্তক্ষেপ থেকে পেছনে হাটতে বাধ্য করেছে, এটি একটি ভাল দিক। কিন্তু এই মানুষই ভোটার থেকে অস্ত্রবাজ হয়ে উঠে নেতৃত্বের ব্যবহার পদ্ধতির বৈপরিত্বের কারণে। রাস্তায় নেমে সামরিক বাহিনীকে ঠেকিয়ে দেয়া এই মানুষকে যদি গণতন্ত্রায়নের কাজে ব্যবহার করা হয় তবে তা হবে তুরস্কের জন্য ইতিবাচক দিক।(গার্ডিয়ান)।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের বরাত দিয়ে বিবিসি’র খবর ছিল: তুরস্কে অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত ২জন জেনারেলসহ উচ্চ পদবির অফিসার নিয়ে প্রায় ২,৮৩৯জন সৈনিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন শনিবার দিন পর্যন্ত ১৬১জন নাগরিকের হত্যাসহ ১৪৪০জনের জখমী হবার মধ্য দিয়ে দমিত এই অভ্যুত্থান তুরস্কের গণতন্ত্রের উপর একটি কালো দাগ।
১০৪ জন সন্দেহভাজন অভ্যুত্থানকারীকেও হত্যা করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আহ্বানে সাড়াদিয়ে অভ্যুত্থানকে দমন করার জন্য সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে যায়। মানুষের এ জোয়ার দেখে খালি টেঙ্ক ফেলে সৈনিকরা পলায়ন করে।
২৭৪৫জন বিচারককে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম বলেছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান, প্রেসিডেন্ট ওবামা’র কাছে দাবী করেছেন, আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় আশ্রিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেন এর গ্রেপ্তার। স্বরাষ্ট্র সচিব জন কেরি বলেছেন যদি ইমাম ফেতুল্লার কোন দোষ পাওয়া যায় তা’হলে তাকে বহিষ্কার করা যেতে পারে। ইমাম গুলেন তার বিরুদ্ধে আনীত এরদোগানের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রধান মন্ত্রী ইলদিরিম বলেছেন অবস্থার কারণে আমরা মৃত্যুদন্ডকে আবার জাগ্রত করতে পারি।
তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্তে যেখানে সিরিয়ার আইএস’দের সাথে আমেরিকান বাহিনী যুদ্ধ করছিল তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তুরস্কের ধারণা ওখানে ষঢ়যন্ত্রকারীদের অনেকেই রয়েছে।