হারুনূর রশীদ।। মিদনাপুর, ইন্দোর, ভারত এর অমিত দে (Amit Dey tagged you and 47 others in a post. You can choose if you want to add it to your Timeline.) গত ৪ঠা এপ্রিল লিখেছিলেন নিচের কথা কয়টি। আমি পরে দেখবো ভেবে সেই যে রেখেছিলাম আর দেখা হয়নি। আজ ওই ফাইলটি এমনিতেই পেয়ে গেছি তাই কিঞ্চিৎ শব্দ চয়ন সংশোধন করে পত্রস্ত করলাম। অমিত খুব ছবি প্রিয় মানুষ বলে আমার মনে হয়েছে। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় কিছু নয় বরং অভিনন্দনযোগ্য। মোট ৬৫টি নাটক-সিনেমার নাম দিয়ে তিনি লিখেছেন-“সংস্কৃতি সুস্থ না হলে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা কমার কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে হয় না।” অমিতের ক্ষোভ আমাদের শিক্ষা সংস্কৃতির উপর।
কাল রাতে, আমি যখন একটি টিভি আলোচনা দেখছিলাম তখন দেখেছি ও শুনেছি একই ধরনের কথা বলছেন আমাদের নন্দিত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। প্রাচী বলছিলেন যে, আমরা আমাদের সন্তানদের জন্মের পর থেকে কি শিক্ষার ব্যবস্থা রেখেছি। আমিও বলি, শিশুকালের জন্য তো আমাদের কোন ব্যবস্থাই নেই। কিশোর-কিশোরীদের জন্য আমাদের যে প্রাথমিক শিক্ষা সেখানে একটা জগাখিচুরী ব্যবস্থা। আমাদের নিজেদের ভাষা সংস্কৃতির পাশাপাশি শিশু বয়সেই ভিন্ন ভাষা সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়ে শিশুদের বড় করে তুলছি। এর পর তো ওই শিশুকে দোষ দেয়ার কিছু থাকে না। আমারও ধারণা তাই। দুনিয়ার কোথায়ও এমন পদ্বতি আছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা একটি ধর্মের অনুসারী ঠিকই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সেই ধর্মের নামে আমরা ভিন্ন ভাষা সংস্কৃতিকে আমাদের করে নেবো। এ বিষয়ে আমাদের চিন্তাবিদদের গভীর মনোযোগী হয়ে, কোন ধরণের পূর্ব সিদ্ধান্তিত মতে প্রভাবাহ্নিত না হয়ে, আমাদের নব ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর শান্তিময় নান্দনিক ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে শিশু-কিশোরদের জন্য পাঠ্যলিপি প্রণয়নের দায়ীত্ব স্বইচ্ছায় নেবেন, এই প্রত্যাশা করতে পারি। নতুবা প্রাচীর ভাষায় এভাবেই চলতে থাকবে।
আমার দেখা গত কালের ওই টিভি আলোচনায় অধ্যাপক আনোয়ার সাহেব দূর্ণীতি দমন প্রসঙ্গে খুবই মজার এবং ঐতিহাসিক একটি কাহিনীর উল্লেখ করেছিলেন। কাহিনীটি এই- তখন ইরাণের বাদশাহ্ রেজা শাহ্ পাহলভি। তিনি ক্ষমতায় এসে একটা কিছু ভাল করার চিন্তা করছিলেন। ওই সময় দেখলেন একটি রাস্তার কাজে ঠিকাদারের অর্থ আত্মসাতের কারণে নতুন রাস্তায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। রেজা শাহ্ চিন্তা করলেন, এভাবে হলে তো দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যাবেনা। তিনি বিভিন্ন উপায়ে ওই ঠিকাদারকে একটি উঁচু ভবনের ছাদে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসলেন। ঠিকাদার কোম্পানীর ওই ব্যক্তি তো মহাখুশী যে শাহেন শাহ্ তাকে দাওয়াত দিয়ে এনেছেন অবশ্যই কোন বড় আকারের কাজ দেবেন।
বেশ কিছু প্রয়োজনীয় আলোচনার পর রাস্তার কাজের ওই ফাঁটলের কথা তুলে তার বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগের কাগজাত দেখিয়ে রেজা শাহ্ ঠিকাদারকে বললেন যে, তুমি যে অপরাধ করেছো তার শাস্তি দুই পথে। এক তুমি নিজে এই দালান থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারো নতুবা খোলা মাঠে তুমাকে গুলি করে মারা হবে। কোনটি তোমার পছন্দ তুমি নিজেই বলো। লোকটি তখন বাঁচার কিঞ্চিৎ আশায় ঝাঁপ দিয়েছিল ভবনের উপর থেকে। এর পর থেকে ইরাণে ঠিকাদারদের দূর্ণীতি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। আজও ইরাণে না-কি ঠিকাদারীতে কোন দূর্ণীতি নেই। অধ্যাপকের ইংগিত স্পষ্টতঃই বুঝতে পেরেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ছিল।
অমিতের কথায় আসি। অমিত আরো লিখেছিলেন-
Amit wrote: “আজ বলিউড বলতে বলিকাঠ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজটাকে জলাঞ্জলি দেওয়ার জন্য যা যথেষ্ট। বাংলার প্রলয়, চতুষ্কোন, বাইশে শ্রাবন, পরবাসিনী, মেঘে ঢাকা তারা, চাঁদের পাহাড়, মিশর রহস্য, বোমকেশ বক্সী, নৌকাডুবি, নোবেল চোর, বেলা শেষে, আমি সুভাষ বলছি, এগারো, রাজকাহিনী, বাদশাহী আংটি, জাতিস্মর, মনচোরা, বাস্তু শাপ, ছোটদের ছবি, নির্বাক, আরশি নগর, ছায়ামানুষ, অপুর পাঁচালী, নির্বালিত, দ্যা লাইট স্বামী বিবেকানন্দ, আবর্ত, ছায়াময়, গয়নার বাক্স, শব্দ, চ্যাপলিন, রুপকথা নয়, তাসের দেশ, আমি আদু, ভূতের ভবিষ্যৎ, শঙ্খচিল, মনের মানুষ, ZULKFIQUER, সত্যান্বেষী, আবার বোমকেশ, হর হর বোমকেশ, রয়েল বেঙ্গল রহস্য, লড়াই, c/o স্যার, বাড়ি তার বাংলা, গোয়েন্দা, অলীক সুখ, হেমলক সোসাইটি, মুক্তধারা, অ্যাক্সিডেন্ট, যেখানে ভূতের ভয়, খাদ, রংমিলান্টি, নকশাল, আসা যাওয়ার মাঝে, একটি নদীর গল্প, কল্কিযুগ, চোরাবালি, সন্ধ্যে নামার আগে, হনুমান. কম, শুকনো লঙ্কা, মুশলমানির গল্প, গোরা, হাফ সিরিয়াস, শূন্য অঙ্ক, নিশব্দ, দ্যা জাপানিজ ওয়াইফ, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’- এদের কাছে এরা তো কেবল শিশু। ভাবতে লজ্জা করে তবুও আমরা গলা ফাঁটিয়ে হেট স্টোরি দেখতে যাই। আমার প্রশ্ন হল আমাদের কী সত্যিই একটা সমাজ আছে?
যে সব সিনেমা বাবা মায়ের কাছে বসে দেখা যায়না সেগুলো কী সত্যিই ভালো কিছু? নিজের বিবেকের কাছে কারো কী এই প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করেনা। আসলে আজ আমরা স্বাধীন, প্রকৃতপক্ষে এর অর্থ আমরা উলঙ্গতায় স্বাধীন। আমরা সংস্কৃতিতে স্বাধীন নই। আজ আমরা, মনে হয় অসভ্যতার দিকে ছুটছি। সংস্কৃতি সুস্থ না হলে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা কমার কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে হয়না। হলিউডের INCEPTION এর মতো সিনেমাগুলোতেও আজ অশালিন ছবি নেই, আর আমরা ? যে দেশ বিবেকানন্দের জন্ম দেয়, চৈতন্যদেবের জন্ম দেয়, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ধর্মের সৃষ্টি করে। হিন্দু মুশলমানকে যে দেশ এক করে দেয়, সে সংস্কৃতির দেশে আমরা কী করছি।
আমরা আইনশৃঙ্খলার দোষ দিই বৃথাই। আসল কথা আমরা আমাদের চরিত্রের কাছে দোষী। সমাজের অবনমন রোধে আজ বাংলা সিনেমা সাহিত্যনির্ভর তাই সকলের উদ্দেশ্যে অনুরোধ এসব কুরুচিকর ছবি বর্জন করুন, আর পছন্দের সামাজিক সিনেমা দেখুন। আপনি ২০০ বছর আগের টাকাওয়ালা লোকের নাম বলতে পারবেন না কিন্তু হজরত মহম্মদের নাম বলতে পারবেন, মা সারদার নাম বলতে পারবেন, মাদার টেরেসার নাম বলতে পারবেন তাই যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন সমাজ প্রতিষ্ঠার, ধন্যবাদ…”
লন্ডন, শুক্রবার
২৬ আগষ্ট ২০১৬