একমাত্র মৌলবীবাজার জেলায়ই
৯৪টি প্রাথমিক ও ৩৯টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষালয় বন্যা কবলিত কুশিয়ারাসহ ৪টি নদ-নদীতে আবারও বাড়ছে পানি উৎকন্ঠায় আড়াই লাখ মানুষ |
বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি খুব খারাপ রূপ নিয়েছে। দেশের প্রায় সবক’টি সংবাদ ও গণমাধ্যম সারাদেশে বন্যার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। বন্যার কারণে বহু বিদ্যালয় কিংবা মহাবিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বন্যাজনিত কারণে সিলেট বিভাগের চার জেলায় ৬ শতাধিক মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক ও প্রাইমারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৪৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। শুধুমাত্র জগন্নাথপুর উপজেলায় ৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট জেলায় ১৯৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, এবার বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় মোট ৫ হাজার ৪৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮১৯ টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ৪৯৩ টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ছিল। তবে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে পাঠদান শুরু করা হবে।
মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীতে দ্বিতীয় দফায় ৬ সেঃমি পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৮. ৪২ সে:মি: এসে দাড়িয়েছে। সোমবার বেলা ১২টার খবরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর সেতু পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ধরা হয়েছে ৮.৫৫ সে:মি:। ভারতের ঢল ও লাগাতার বৃষ্টিতে পানি আরেক ধাপ বেড়েছে। এছাড়াও জেলার মনূ নদে আরও ৩২ সে:মি:, ধলাই নদে প্রায় ২ মিটার ও জুড়ী নদে বেড়েছে আরও ১৩ সে:মি:। জেলা জুড়ে বন্যাক্রান্ত হয়ে ক্ষতিরমুখে পড়েছেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
সোমবার মুশুলধারে বৃষ্টিতে কুশিয়ারা নদী পাড়ে গেলে দেখা যায়, নদী পাড়ের মানুষের প্রায় সবার উঠানে হাঁটুসম ও ঘরে ১৫ থেকে ২০ সে:মি: পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বসতির মায়ায় এসব মধ্যবৃত্ত পানি বন্দি মানুষ ঘরের খাটের উপর বসে সময় পাড় করছেন। আর খেটে খাওয়া ও নি¤œবৃত্ত মানুষের ঘরের খড়কোটোর বেড়া পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যাদের পাঁকা স্থাপনা রয়েছে, তাদের ছাঁদে কিংবা বাড়ান্দায় পাশের বাড়ির কেউ কেউ ধান-চাল ও হাস-মুরগি রেখেছেন। কেউ কেউ এ সহযোগীতা না পেয়ে পাশের ওয়াপধা সড়কে ভ্রাম্যমান বসতি বানিয়ে গবাদি-পশু ও পরিবার নিয়ে থেকেছেন।
নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নে ১১টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৫শ নারী-পুরুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি তরফ থেকে দুই বার ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও তা অপ্রতুল বলে দাবী করছেন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ এসব ত্রাণ সহায়তায় তাদের চলে না। তারা পরিবার নিয়ে বেশিরভাগ সময় না খেয়ে রয়েছেন। বানভাসীর দাবী সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠন যদি তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতেন তাহলে হয়তো তাদের বিশিরভাগ সময় উপোষ থাকতে হতো না। এদিকে নদী পাড়ের উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের শামীম আহমদ বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় গরীব-দুস্থদের কাঁচা ঘর-বাড়ি জলের গতি ও ঢেউয়ের বেগে ধসে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণ সহায়তা আসছে না। তিনি বলেন, সদরসহ দুই উপজেলার প্রায় ১ লাখ পানি বন্দি মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা থেকে বাঁচাতে হলে নদী খনন করা এখন সময়ের দাবী।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার বিকেল ৩টায় রাজনগর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শুপ্রভাত চাকমা বলেন, বন্যা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা কমে আসছে। আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যাও কমেছে। তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে দুই দফা ত্রাণ সমাগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আজো জলমগ্ন এলাকায় গিয়েছেন। মানুষের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুলের বিষয়টি জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, এরকম অভিযোগ আসেনি। অনেকে ত্রাণ পেলেও বলবে পাইনি।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, জেলা জুড়ে ৯৪টি স্কুল জলমগ্ন রয়েছে, আর আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে চালু রয়েছে ৬৪টি স্কুল। তিনি বলেন, আগামী ৩ জুলাই স্কুল খুলবে। ওই সময়ে যদি বন্যার উন্নতি না হয়, তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেয়া হতে পারে।
এদিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, জেলা জুড়ে ৩৯টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান বন্যা কবলিত রয়েছে।