মুক্তকথা নিবন্ধ।। হত্যাদণ্ডের বিধান কার্যকরের অমানবিক নমুনার কারণে সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী নিন্দিত। মৃত্যুদন্ডের ভয়ঙ্কর বিধান আর অতি বিতর্কিত বাদশাহ মোহাম্মেদ বিন সালমানের সেই সৌদি আরবে অতিসম্প্রতি প্রবাসীদের জন্য স্থায়ী বা অস্থায়ী ভিত্তিতে আবাসিক অনুমোদন(রেসিডেন্ট পারমিট) দেয়ার আইনী ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে দেশটির শুরা পরিষদ আবাসিক অনুমোদন(রেসিডেন্ট পারমিট) আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে।
সৌদিদের আরব, আরব মুল্লুক তথা সারাবিশ্বেই এখনও বহুল আলোচিত একটি দেশ। একদিকে সম্পদের প্রাচুর্য্য অন্যদিকে রাজপরিবারের লোকজনের অবাধ ভোগবিলাস বিশ্বব্যাপী আলোচিত সমালোচিত হয়ে আসছে সুদীর্ঘকাল থেকে। দেশের চেয়ে বেশী আলোচিত তাদের বাদশাহ মহামান্য মোহাম্মদ বিন সলমান। দুনিয়ার এই একটি মাত্র দেশ যেখানে প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষকে দেখিয়ে খোলা আকাশের নিচে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়ে থাকে। তাদের মৃত্যুদণ্ডের ধরন শিরোচ্ছেদ। এটি অতি রক্ষণশীলতা থেকে সৃষ্ট এক অমানবিকতা।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এ বছরের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত সৌদি আরবে কমপক্ষে ১০০ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যাটা ১৪৯ ছিল বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক তথ্যে জানা যায়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম খোঁজে যতটুকু জানা যায়, এ বছরের গত এপ্রিল মাসের এক মঙ্গলবার একদিনে ৩৭ জনের শিরশ্ছেদ করা হয়। সন্ত্রাসি হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সে সময়ই জানা গিয়েছিল রাজধানী রিয়াদ, মক্কা এবং মদিনা শহরে এ মৃত্যু পরোয়ানা কার্যকর করা হয়েছিল। সাজাপ্রাপ্তদের ১জনের অপরাধ এতই গুরুতর ছিল যে মুণ্ডচ্ছেদের পরে তাকে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছিল।
সৌদিদের সেই আরব স্থায়ী বা অস্থায়ী ভিত্তিতে বসবাস করার অনুমতি দেয়ার আইন প্রবর্তন করার ঘোষণায় একটি বিষয় সকলেই বুঝতে পারছে যে ধীরে ধীরে হলেও একটি বিশাল পরিবর্তনের হাওয়া বইছে সেখানে। নব্য প্রবর্তিত এই ভিসা যাদের দেয়া হবে, তারা বিশেষ কিছু সুবিধাও ভোগ করতে পারবে বলে ওই বিধানে রয়েছে। ‘প্রিভিলেজড ইকামা'(বিশেষ সুবিধার অনুমোদন) নামে এই প্রকল্পটি সাধারণভাবে পরিচিত হয়ে উঠছে সৌদি গ্রিন কার্ড নামে বলে বিবিসি মজা করে লিখেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রবাসীদের সাধারণত স্থানীয় একজন অভিবাবকের(স্পন্সর) প্রয়োজন হয়। এ না হলে প্রবাসীরা সেখানে আবাসিক অনুমোদন(রেসিডেন্ট পারমিট) পান না। প্রস্তাবিত এ আইন অনুযায়ী একজন বিদেশী নাগরিক নির্ধারিত ফি দিয়ে সৌদি আরবে বসবাস, কাজ, ব্যবসা ও নিজের সম্পদ তৈরি করতে পারবেন। শত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও এটি নিঃনন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক।
একই সাথে প্রবাসীদের জন্য এখন যে স্থানীয় অভিবাবক(স্পন্সর) দরকার হয়, এ আইনের আওতায় যারা স্থায়ী বা অস্থায়ী আবাসিক অনুমোদন(রেসিডেন্ট পারমিট) পাবেন, তাদের আর সেই অভিবাবকের(স্পন্সর) প্রয়োজন হবে না। ফলে এটি নিশ্চিত যে এতো আলোচিত সৌদি আরবে আইনটি কার্যকর হলে দেশটির বর্তমান জটিল ও আমলাতান্ত্রিক অভিবাসন(ইমিগ্রেশন) পদ্ধতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে। আইনের এ সুযোগ সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীগনও নিতে পারবেন। বর্তমানে সৌদি আরবে অনেক সফল বাংলাদেশী ব্যবসায়ী বা চাকুরে আছেন। সৌদি গ্রিন কার্ড পদ্ধতি চালু হলে এবং তাঁরা চাইলে গ্রীন কার্ড সুবিধা নিয়ে পুঁজি বিনিয়োগেরও সুযোগ পাবেন।
সৌদি আরব পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলোর মত দুনিয়ার মানুষের কাছে আদর্শস্থানীয় খ্যাতিসম্পন্ন একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠুক এটি কে না চায়। যতটুকু খেয়াল আছে বছর তিনেক আগে যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান এমন একটি ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছিলেন। সৌদিদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোন ইতিবাচক পরিবর্তন যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যই শুধু নয় অর্থনৈতিক টানাপোড়নের বর্তমান বিশ্বমানুষের পথের দিশা হলে হতেও পারে।