বহুল সমালোচিত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ধারা বিলুপ্ত হলো। এই ৫৭ধারাসহ আরো কয়েকটি ধারা বিলুপ্ত করে নবরূপে বিন্যস্ত করে সংযোজনের মাধ্যমে প্রণয়ণ করা হয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮’র। পত্র-পত্রিকা থেকে জানা গেছে ওই খসড়া গতকাল মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করেছে। এ উপলক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, নতুন আইন পাস হলে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বিলুপ্ত হবে। প্রস্তাবিত এই আইনে জামিনযোগ্য ও জামিন অযোগ্য বেশ কিছু ধারা রয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট সচিব। উল্লেখ্য, গত ৩০শে জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়। ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করা হলেও নতুন আইনে ৫৭ ধারার বিষয়বস্তুগুলো আরও বিশদ আকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ আইন সংসদে পাস হলে ১৪ বছরের কারাদন্ডের পাশাপাশি কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। বিশেষ করে হ্যাকিং, মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে বা ভয়ভীতি সৃষ্টির জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে এবং ডিজিটাল উপায়ে গুপ্তচারবৃত্তির মত অপরাধে উপরোক্ত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার ৫ই ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮’এর খসড়া অনুমোদিত হয়। পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন যে, সাইবার ক্রাইমের আধিক্যের কারণে এ আইন পাশ করার প্রয়োজন হয়েছে। আগে সাইবার ক্রাইমের জন্য কোনও আইন ছিল না। এখন এই জাতীয় সব অপরাধের বিচার এই আইনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। সচিব আরো বলেন, আইনে ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করা, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিবের কথা উল্লেখ করে ইত্তেফাক লিখেছে, অপরাধ ও দন্ড বিষয়ে সচিব আরো জানান, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও দন্ডের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে(সিআইআই) বেআইনি প্রবেশ বা হ্যাকিংয়ের জন্য ৭বছরের জেল, ২৫লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়া হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ করে ক্ষতিসাধান বা নষ্ট বা অকার্যকর করলে বা সেই চেষ্টা করলে ১৪ বছরের কারাদান্ড, এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে। কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসে বেআইনি প্রবেশের ক্ষেত্রে এক বছরের জেল, তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসে বেআইনি প্রবেশে সহযোগিতা করলে তিন বছরের কারদন্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে। কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম থেকে কোনো উপাত্ত, উপাত্ত ভান্ডার বা তথ্য বেআইনিভাবে সংগ্রহ বা স্থানান্তর করলে বা কোনো উপাত্তের অনুলিপি বেআইনিভাবে সংগ্রহ করলে সাত বছরের কারাদন্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে নতুন আইনে। কম্পিউটার সোর্স কোড ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস বা পরিবর্তন করলে তিন বছরের জেল বা তিন লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপপ্রচার চালান বা তাতে মদদ দেন, তাহলে ১৪ বছরের কারাদন্ড, এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হবে।
রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা বা জনগণ বা কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করার উদ্দেশ্যে কেউ কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বা বেআইনি প্রবেশ করলে বা তাতে সহযোগিতা করলে তিনি সাইবার সন্ত্রাসের অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবেন। সেজন্য তার ১৪ বছরের কারাদন্ড, এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ড হতে পারে। ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে কেউ যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রচার বা প্রকাশ করেন বা করান যা ধর্মীয় অনুভূতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহলে তাকে ১০ বছরের জেল, ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়া হবে। যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারার আওতাধীন কোনো মানহানিকর অপরাধ করেন, তাহলে তিন বছরের কারাদন্ড, পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রচার করেন বা করান যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাহলে তার সাত বছরের কারাদন্ড, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড। কোনো ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অনলাইন লেনদেন করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড, পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে। ওয়েবসাইট বা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক’ কোনো তথ্য পাঠালে তিন বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।
কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত যদি কেউ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করেন, প্রেরণ করেন বা সংরক্ষণ করেন, বা করতে সহয়তা করেন তাহলে তা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সেজন্য ১৪ বছরের কারাদন্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।
ইত্তেফাকের বর্ণনায়, এই আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনের সংজ্ঞায় ডিজিটাল উপাত্ত ভান্ডার বলতে টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও বা অডিও আকারে উপস্থাপিত তথ্য, জ্ঞান, ঘটনা, মৌলিক ধারণা বা নির্দেশাবলী বোঝাবে। সূত্র: ইত্তেফাক