মুক্তকথা: লন্ডন ২২শে জুন ২০১৬: রাত ২.৪৩::
হাতাহাতি না হলেও তিক্ত লড়াই হয়ে গেল ওয়েমব্লি এরেনায় প্রায় ছয়হাজার দর্শকের সামনে। দু’ঘন্টা ব্যাপী বিবিসি চালিত ওই বিতর্কে দুই পক্ষে অভিবাসন, অর্থনীতি আর সার্বভৌমত্ব বিষয়ে নাড়িকাটা তর্কযুদ্ধ হয়। খুবই প্রাণবন্ত কিন্তু তীক্ষ্ম আক্রমনাত্মক ওই বিতর্কে স্কটিশ রক্ষনশীল দলীয় নেত্রী রুথ ডেভিডসন পুনঃ পুনঃ বরিস জনসনের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং মিথ্যা বলার জন্য বরিসকে দায়ী করেন।
উত্তরে বরিস জনসন ততবারই বলেন যে ইউনিয়নে থাকা মানেই হল আমাদের দেশকে অনেক অনেক পেছনের দিকে টানা। তিনি বলেন ইউনিয়নে আছে বলে আজ স্কটল্যান্ড কোনকিছু বিদেশে রপ্তানী করতে পারেনা। আমরা ব্রাসেলসের হুকুম তামিল করে চলতে পারিনা। আমরা নিজেদের হুকুমে চলতে চাই। ইউনিয়নওয়ালাদের নিজের আত্মবিশ্বাস নেই। হাসির বিষয়, তারা মনে করেন ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসলে আমরা চলতেও পারবো না চালাতেও পারবো না। এর চেয়ে আহাম্মকি কথা আর কিছু হতে পারে? তার নিকাশি বক্তব্যে এরেনার মধ্যে তার সমর্থকেরা মুহুর্মুহু জয়োধ্বনিসূচক করতালি দিয়ে তাকে সাবাশী দেয়। শেষমেশ তিনি বলেছেন এই গণভোটে আমরা যদি বের হয়ে আসার পক্ষে ভোট দেই তা’হলে তা হবে আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মত।
সমাপণী বক্তব্যে রক্ষণশীলদলীয় রুথ ডেভিডসন বলেন শুক্রবার ঘুম থেকে উঠে আমরা দেখতে চাইনা যে আমরা পেছনে পড়ে গেছি। বরিস গং রা মিথ্যার বেসাতি করছেন। তারা যা বলছেন তাদের একটি কথাও ঠিক নয়। ঐক্য সবসময়ই শক্তিশালী। সুন্দর সুশ্রী জীবন যাপনের জন্যই মানুষ সংঘবদ্ধ হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করতে হলে ঐক্যের বিকল্প কিছুনেই।
এর আগে গত ১৯শে জুন এই প্রাক্তন লন্ডন মেয়র বরিস বলেছিলেন দেশের নিয়ন্ত্রণকে দেশের মানুষের হাতে রাখুন ২৩ তারিখের নির্বাচনে ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসায় ভোট দিয়ে। তিনি আরো বলেছিলেন শরণার্থী যারা ১২ বছর ধরে এ দেশে, তাদের রাজক্ষমা দিয়ে গ্রহন করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই দিন তিনি আরও বলেছিলেন যে আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থাকার পক্ষে ভোট দিতে পারিনা।
করবিন অভিবাসনের পক্ষে
ওই ১৯শে জুন ২০১৬ গণভোটকে সামনে রেখে শ্রমিক দলীয় নেতা জেরেমি করবিন বলেছিলেন ‘কঠোর সংযমী হওয়া’ এই বিষয়টির উপর ভোটারগনকে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন একটি দেশ হয়ে আমরা যখন বের হয়ে আসার পক্ষে ভোট দেবো, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে এর পরেই কথা উঠবে আবাসন নিয়ে, চাকুরী নিয়ে এমনকি সামাজিক নিরাপত্ত্বা নিয়েও কথা উঠবে। তখন কিন্তু বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে উঠবে!
বিবিসি’র জনি ডায়মন্ড দেখিয়েছেন কোন কোনজন “ইউনিয়ন ছাড়া” প্রচারণার পক্ষে কাজ করছেন-
রক্ষণশীল দলীয় নেতা মাইকেল গোভ এবং লন্ডনের প্রাক্তন মেয়র বরিস জনসন ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। একইভাবে শ্রমিক দলের গিসেলা স্টুয়ার্ট শ্রমিক দলের পক্ষে নয় তিনি কাজ করছেন ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে।ওই একই পথে হাটছেন ইউকেআইপি’র ডগলাস কার্সওয়েল এবং সুজান ইভান্সও। তারা ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছেন।
বৃটেন রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ব্যক্তি ইউকেআইপি নেতা নাইজেল ফারাজ রক্ষণশীলদের সাথে না থেকে অপর এক বেরিয়ে আসা পক্ষের সাথে কাজ করছেন।
প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব লর্ড ওয়েনের মত প্রাক্তন রক্ষণশীল দলের চেঞ্চেলার লর্ড লসন ইউনিয়নে থাকার পক্ষে নন, কাজ করছেন বের হয়ে আসার পক্ষে।
রক্ষণশীলদের চাঁদাদাতা পিটার ক্রুডাস কাজ করছেন পরিত্যাগের পক্ষে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের “ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি” বের হয়ে আসার পক্ষে কাজ করছে।