মুক্তকথা সংবাদ।। নিউজিল্যান্ডের দু’টি মসজিদে বন্দুক আক্রমণে ৪৯জন নিহত ৫০জন আহত হয়েছেন। ৪৯জন নিহত এবং ৫০জনের মত আহত হয়েছেন বন্দুকের গুলিতে। নিউজিল্যান্ডের খৃষ্টচার্চ শহরের দু’টি মসজিদে জুম্মার নামাজের সময় বন্দুকধারীর বেপরোয়া গুলিবর্ষণে মর্মন্তুদ এ ধর্মবিদ্বেষী ঘটনা ঘটে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেচিন্দা আরডের্ন এ ঘটনাকে একটি সন্ত্রাসী হামলা ও দেশের জন্য একটি ‘কালো অন্ধকার দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ ২০ বছর বয়সী এক যুবককে খুনী দায়ী করে গ্রেপ্তার করেছে এবং আগামীকাল তাকে আদালতে হাজির করা হবে। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ বিবিসি’র কাছে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
একজন মহিলাসহ আরো দু’জন মিলে ৩জনকে পুলিশ আপাততঃ আটক করেছে। পরে একজনকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। কোন বিশেষ ধর্মকে নিয়ে হিংসাত্মক এ আক্রমণ নিউজিল্যান্ড জাতির ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
বিবিসি বর্ণনা করেছে, ব্রেন্টন টেরেন্ট নামের ওই অষ্ট্রেলিয়ান বন্দুকধারী নিজেই তার ফেইচবুকে হত্যাযজ্ঞের ছবি দিয়ে তার পরিচয় দিয়েছে। সেখানে তাকে ২৮বছর বয়সী বলে দেখা গেছে। তার ফেইচবুকে দেয়া সেই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ওই হত্যাকারী ‘আল নূর’ মসজিদের ভেতর বন্দুক দিয়ে নির্বিচারে নর-নারী ও শিশুদের উপর একেবারে কাছ থেকেই গুলি করছে।
কুখ্যাত এই হত্যাকারীর ফেইচবুকের এই বর্বরতম ঘটনার ভিডিও অন্য কেউ তাদের ফেইচবুকে শেয়ার না করার জন্য নিউজিল্যান্ড পুলিশ অনুরোধ করেছে।ফেইচবুক বলেছে, তারা এই বন্দুকধারীর ফেইচবুক ও ইন্সটাগ্রাম হিসাবই সরিয়ে নিয়েছে এবং আরো কোথায়ও ওই ভিডিও ফুটেজ আছে কি-না তার সরানোর জন্য খুঁজে দেখছে।
এক সংবাদ সম্মলনে প্রধান মন্ত্রী জেচিন্দা আরডের্ন খৃষ্টচার্চ শহর মসজিদের এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী আক্রমণ বলে আখ্যায়িত করে তার টুইটারে বলেছেন এটি হিংসার এক অকল্পনীয় রূপ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হিংসার কোন স্থান নেই। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই আমাদের শ্মরণার্থী সম্প্রদায়ের মানুষ হবেন – নিউজিল্যান্ড তাদের ঘর। তারা আমাদেরই।
আক্রমণকারী প্রথমে আল নূর মসজিদে আক্রমণ চালায়। দ্বিতীয় আক্রমণ হয় লিনউড মসজিদে। ওই মসজিদের ঘটনাটির বিষয়ে পুরো খবর এখনও পরিষ্কার নয়।
শহরের মসজিদগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলেছে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে। পুলিশ আরো বলেছে যে দু’টি মসজিদ থেকেই কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজন একজনের গাড়ীতে বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে।
বেঁচে যাওয়া একজন প্রত্যক্ষদর্শী নিউজিল্যান্ড টিভি’কে বলেছেন যে তিনি নিজ চোখে দেখেছেন বন্দুকধারী সরাসরি একজন মানুষের বুকে গুলি করেছে। সে প্রথম পুরুষদের প্রার্থনাকক্ষকে লক্ষ্য করে পরে মহিলাদের কক্ষে যায়। টিভিকে তিনি আরো বলেন, “আমিতো ভয়ে ভয়ে শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম আর বলছিলাম হে আল্লাহ ওই লোকটির গুলি শেষ করে দাও তারাতারি।”
অল্পের জন্য বেঁচে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ঘটনার জন্য ক্রিকেট খেলা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নিউজিল্যান্ডের প্রতি তার সকল সহযোগীতার কথা উল্লেখ করেন টুইটারে।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেশা মে’ও তার টুইটারে নিউজিল্যান্ডের প্রতি আন্তরিকভাবে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
রাণী ও প্রিন্স ফিলিপ এ ঘটনায় গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং টুইটারের মাধ্যমে তাদের শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।
পোপ ফ্রান্সিসও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং তিনি এই কণ্ডজ্ঞানহীন হিংসার ঘটনায় খুবই মর্মাহত বলে তার ভেটিকান সেক্রেটারী অব স্টেট পিয়েট্র পারোলিন টেলিগ্রাম বার্তায় জানিয়েছেন।
জার্মানীর চেঞ্চেলার এঞ্জেলা মার্কেল ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মেকরন নিরীহ প্রার্থনারত মানুষদের হত্যার এমন ঘটনায় তারা খুবই দুঃখীত ও শোকার্ত। ফ্রান্স যেকোন ধরনের সহিংস জঙ্গিকাজের বিরুদ্ধে সবসময় আছে এবং থাকবে।