‘ক্রেইগ মুররে’ ছিলেন উজবেকিস্তানে বৃটেনের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১০পর্যন্ত ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ছিলেন। উজবেকিস্তানের ইসলামী আন্দোলন আলকায়দার সাথে সম্পৃক্ত, বৃটিশ সরকারের এমন একটি গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে তিনি ২০০২ ও ২০০৪ সালে কমনওয়েলথ অফিসে লিখিতভাবে বলেছিলেন যে এগুলো ডাহা মিথ্যা। তিনি অভিযোগ লিখে বলেছিলেন এগুলো অবিশ্বাস্য, অনৈতিক ও বেআইনী কথা। তিনি তার ওই নালিশে আরো বহু শক্ত কথা তৎকালীন বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। যার ফলে এক পর্যায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সম্প্রতি ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে তিনি মুখ খুলেছেন। যা ইউটিউবে প্রকাশ হয়েছে। তার বক্তব্যের অনুবাদের সাথে হুবহু ইউটিউবের ভিডিওখানি এখানে পত্রস্ত করা হলো।
আমি ২০ বছর ধরে একজন বৃটিশ কূটনীতিক হিসেবে কাজ করেছি। আমি সবসময়ই একজন বৃটিশ হিসেবে নিজেকে দেশপ্রেমিক মনে করি এবং এজন্য নিজে গর্ববোধও করি। আমার মনে আছে যখন আমি প্রথম রাষ্ট্রদূত হয়ে আমার নিজের গাড়ীতে ইউনিয়ন জেক পতাকা উড়িয়ে বের হয়েছিলাম। এ সময়টি আমার জন্য খুব গর্ববোধের সময় ছিল। সবেমাত্র ৬মাস হয়েছে আমি এটি আবিষ্কার করলাম যে দেশে আমি বৃটিশ দূত হয়ে আছি সেখান থেকে আমরা ও আমেরিকা দু’দেশই মানুষকে তুলে আনছি নির্যাতন করার জন্য। এই নির্যাতনে অনেকই মারা যায়। এখন কিন্তু আমার ওই বিশ্বচিন্তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
এর মাসখানেক পর দ্বিতীয় দফা আমরা ইরাক আক্রমণ করলাম নিরাপত্ত্বা পরিষদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে। অবশ্য তাদের অনুমতি না নিয়ে নয়। তবে এটি খুব জেনে শুনেই যে যদি বিষয়টি নিরাপত্ত্বা পরিষদে যায় তা’হলে আমরা বিপক্ষে ভোট দেবো। একজন বৃটিশ কূটনীতিক হিসেবে আমি দেখেছি সকল আভ্যন্তরীন স্মরনি নির্দেশক ওই সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে আলোচিত হয়েছিল। বিভিন্ন কারণেই আমি এসব জানতাম। যারা ইরাকী মানববিধ্বংসী অস্ত্রের কথা বলেছিল সেই এফসিও ইউনিটের আমি প্রধান ছিলাম। আমি জানতাম এবং আমি আপনাকে বলতে পারি ওরাও জানতো সেখানে এরকম কোন অস্ত্র ছিল না। এটি কোন ভুল ছিল না। বরং এটি ছিল সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা।
আমরা বুঝি এটি অসম্ভব, যুক্তরাজ্যের জন্য গর্বের কোন বিষয় নয় অবশ্যই। আমার এখন মনে হয়, হিটলার ও মুসোলিনী ‘লীগ অব নেসন্স’এর সাথে যা করেছিল, আমরা তাই করেছিলাম ইরাক যখন দখল করি। আমি মনে করি এ পর্যন্ত যা আমরা করেছি, আমাদের বোমা বর্ষণের বন্যায় সবসময়ই সত্য ঢাকা পড়ে যায়। লিবিয়ার দিকে দেখো। সর্বনাশা অবস্থা সেখানে। আমরা সেখানে বোমা মেরেছি। নেটো’র বোমা মারার মধ্য দিয়ে আমরা ১৫ হাজার মানুষকে হত্যা করেছি। বিবিসি’তে কখনই সব কিছু তারা বলেনা। আমরা কি ওখানে ভাল কিছু করতে পেরেছি। না পারিনি।
আমি উজবেকিস্তানে দেখেছি। আমি দেখেছি ইমরন সেখানে গ্যাস চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ইমরন সেই কোম্পানী যাকে ইউনিকল বলাও হয় এবং জর্জ সিনিয়র বুশ সেই বোর্ডের একজন। এ ছিল উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান হতে আফগানিস্তানের উপর দিয়ে ভারত সাগরের তীর পর্যন্ত এক বিশাল গ্যাস লাইন। আর এটিই ছিল আফগানিস্তান যুদ্ধের কারণ। তালিবান ও ইউনিকলের মধ্যে আলাপ ছিল নজর রাখার, যদি তালিবানরা পাইপ লাইন তৈরীর নিরাপত্ত্বা দেয়। এ সব আলাপ যে ব্যক্তির মাধ্যমে হতো, সে ছিল মিঃ কারজাই, ইউনিকলের একজন পরামর্শক। তাকে বুশ সিনিয়র ইউনিকলের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল এবং কথা ছিল সে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবে। এটিই তাদের পরিকল্পনা ছিল।
তালিবান এটি না করায় তাই তারা আফগানিস্তান দখল করে।
আমি ভেতর থেকে এসব দেখেছি। সবসময়ই এসব ছিল সম্পদের নিয়ন্ত্রনের জন্য। এগুলো তো দূর্ণীতিই। আমি আপনাকে বলতে পারি এগুলোতে ভাল কিছু পাওয়ার নেই। এ ধরনের পদ্বতি দূর্গন্ধময়। ওয়েস্টমিন্সস্টার দূর্গন্ধ ছড়ায়। বৃটিশ সরকার গভীর এবং গভীরভাবে নীতিহীন অসৎচ্চরিত্র। তারা এসব ভেবেই দেখে না ভিন্ন দেশে তারা কত মানুষকে হ্ত্যা করেছে আর এভাবে যদি তাদের অগ্রাভিযান চলতে থাকে আর এ অবস্থায় যদি ‘না’ ভোট দেয়, সে মানসিকভাবে একটি আকস্মিক তীব্র ঝাপটার মত কাজ করবে।
একটি অস্বাভাবিক অবস্থা দুনিয়ার জন্য ভয়ঙ্কর। একটি দূর্বৃত্তাবস্থার মত। এ অবস্থা কতিপয় মানুষকে ধনবান বানানোর জন্য একটি যুদ্ধে যাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়া আর কি। ওই জন্যই আমি বলি ইহা সম্ভব নয় একজন সুন্দর মানুষ হওয়া এবং ‘না’ ভোট দিন। এ ‘না’ ভোট দিতে আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ নয়।