মুক্তকথা প্রতিবেদন।। অবশেষে কাজের স্বীকৃতি এলো। প্রয়াত কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে ভূষিত হলেন। গত ২৫শে জানুয়ারী শনিবার ২০২০, ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস নোটে তাকে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করার কথা ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছরের মত এ বছরও ভারত সরকার মোট ১৪১জন দেশী-বিদেশী নাগরীককে বিভিন্ন মর্যাদার পদকে ভূষিত করেছেন। তাদের মধ্যে কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম নবম স্থানে রয়েছেন। তিনি মরণোত্তর এ পদকে ভূষিত হলেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি এ বছর যে ১৪১টি পদক অনুমোদন করেছেন তার মাঝে ৭টি পদ্মবিভূষণ, ১৬টি পদ্মভূষণ এবং ১১৮টি পদ্মশ্রী পদক রয়েছে। এই পদক প্রাপকদের মধ্যে ৩৪জন মহিলা রয়েছেন। ১৮জন রয়েছেন বিদেশীদের মধ্য থেকে এবং মরনোত্তর রয়েছেন ১২জন।
অনাদি অনন্তকাল ধরে চলে আসা প্রকৃতির অমোঘ বিধানের অলঙ্ঘনীয় শ্রেষ্টত্বের জয়গানের বিষয়ে নতুন করে বলার কোন প্রয়োজন নেই। সার কথা কর্মই সব। যে যেমন কাজ করে ঠিক সে নমুনারই প্রতিদান আসে। এমন অবস্থা বা ব্যবস্থাকে বৈজ্ঞানিক সত্যও বলতে পারেন আবার প্রকৃতির নিয়মও বলা যায়। যেকোন কাজের ফল বা ফসল পাওয়া প্রকৃতির এক অমোঘ বিধান।
বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন বলেছিলেন কোন বস্তুতে আঘাত করলে যে ধ্বনি বা প্রতিধ্বনি হয় সেটি সেই আঘাতের প্রতিদান যা প্রত্যাঘাত হয়ে আসে। আঘাত একটি কাজ আর ধ্বনি তার ফল। সহজে আমরা যাকে বলি কর্মফল। এ সৃষ্টিজগতে কর্মফলই আসল সত্য। তার উপরে কোন সত্য নেই।
অজানা অনাদি অনন্তকাল ধরে চলে আসা প্রাকৃতিক এই বিধানকে আধুনিক মানব সমাজের লঙ্ঘন করে চলার কোন ফাঁক নেই। তবে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটাতে পারে বেহিসেবি মানুষ। এই ব্যত্যয় ঘটিয়ে মানুষ নিজেদের দূর্বলতারই প্রকাশ ঘটান। এতটু্কুই।
অবসরের পর বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুরোধে রাজী হন দিল্লীতে দেশের “হাইকমিশনার” হিসেবে কাজ করতে। যদিও তার কাছে এ কোন নতুন কাজ ছিল না এর পরও তাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয় বাংলাদেশ-ভারতের সখ্যতাকে নতুন মাত্রার উচ্চতায় নিয়ে যেতে। সারা উপমহাদেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়নে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে এ উপলব্দি থেকে তিনি নিদ্রাহীন নিরলস কাজ করে গেছেন। কেবল সুধিসমাজ নয় ভারতের সাধারণ মানুষের মাঝে বাংলাদেশের সখ্যতা ও ভাবমূর্তিকে প্রশ্নহীনভাবে তুলে ধরতে একমাত্র তিনিই সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ককে যে উচ্চতায় রেখে গেছেন আগামী পাঁচ দশক বাংলাদেশকে ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য দৌড়-ঝাঁপ দিতে হবে না।
বড় অসময়ে চলে গেলেন খাঁটী দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা এ কূটনীতিক। আরো কিছুটা সময় তাকে বড় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। তার এ পদক প্রাপ্তিকে আমরা বাংলাদেশের এক মহান অর্জন বলেই মনে করি। তার দেখিয়ে যাওয়া কূটনীতির পথ অনুসরণই হবে তার প্রতি সত্যিকারের মূল্যায়ন ও শ্রদ্ধা দেখানো।