“ধর্মে বর্ণে নাই ভেদাভেদ, বুকের ভিতর একই সে স্বদেশ” অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে গত ৩ ডিসেম্ভর লন্ডনের মেফেয়ার ভ্যানুতে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত হয়েছে ২য় সম্প্রীতি কনসার্ট ইউকে ২০২৩।
ঊর্মি মাজহারের সঞ্চালনায়, জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর ছিল শিশুদের পরিবেশনা, রূপি আমিনের সপ্তসুর মিউজিক স্কুলের শিশুদের পরিবেশনা, একে একে ফারজানা সিফাত স্বপ্নার সারথী আর্টস ও গৌরী চৌধুরীর সুরালয়ের শিশু শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনার পর সুপ্তী পাল ও তার স্কুলের শিশুদের নৃত্য পরিবেশনা। অদিতি রায় ও তাল তরঙের সাকিবার নেতৃত্বে তাঁদের দলের নৃত্য পরিবেশনা ও ছিল মনোমুগ্ধকর।
মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব ঊর্মি মাজহারের নেতৃত্বে, সম্প্রীতি দলে যুক্ত ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা দেওয়ান গৌছ সুলতান, হিমাংশু গোস্বামী, গৌরী চৌধুরী, প্রশান্ত পুরকায়স্থ বিএমই, মকবুল চৌধুরী, মোস্তফা কামাল, জয়দীপ রায়, জুয়েল রাজ, সঞ্জয় দে, স্মৃতি আজাদ, মুরাদ খান, নজরুল ইসলাম অকিব, অপু চৌধুরী, সৈয়দ এনামুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ও মুনিরা পারভীন।
অনুষ্টানের দ্বিতীয় পর্বে আমন্ত্রিত অতিথিদের আসন গ্রহণ মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি সন্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিজয়ের মাসে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাঁড়িয়ে সন্মান জানান পুরো হলভর্তি দর্শক। অনুষ্ঠানে ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম, রেডব্রীজ কাউন্সিলের সিভিক মেয়র জোসনা ইসলাম, টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের সিভিক মেয়র – কাউন্সিলর জাহেদ চৌধুরী, সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি-বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফ, এটিএন বাংলা ইউকের সিইও হাফিজ আলম বক্স, এন টিভি ইউরোপের ডাইরেক্টর মোস্তফা সারোয়ার বাবু, জিএল এ মেম্বার উমেশ দেশাই, ব্যারিস্টার লুৎফুর রহমান, বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি নারী পরিব্রাজক নাজমুন নাহার।
গবেষক ও সাংবাদিক অপূর্ব শর্মার লেখা কবিতা সংকলন আবৃত্তি করেন নজরুল ইসলাম অকিব, ব্যারিস্টার কামরুল ইসলাম, শতরুপা চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম সাগর। বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য মালজোড়া গান পরিবেশন করেন বাউল শহীদ ও হাসি রানী।
এরপর জুয়েল রাজের রচনা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নাটক “মানুষের জয় হউক” এতে অভিনয় করেন, অপু চৌধুরী, মুরাদ খান, জেসমিন চৌধুরী, স্মৃতি আজাদ, নাজিম উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান সাকলাইন। নেপথ্য সংগীতে ছিলেন অসীমা দে।
সব শেষ পরিবেশনায় ছিল ৮০ জন সঙ্গীত শিল্পীর অংশগ্রহণে কোরাস গানের পরিবেশনা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও দেশের গান, এই পর্বে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না, আমরা তোমাদের ভুলবো না সহ অসংখ্য গান।
শেষ গান ছিল আমার এ দেশ সব মানুষের, সব মানুষের। চাষীদের, মুটেদের, মজুরের। গরিবের নিঃস্বের সকলের। পুরো সমবেত সঙ্গীতের নেতৃত্বে ছিলেন, শিল্পী গৌরী চৌধুরী ও সঞ্জয় দে। যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন, অমিত তে, মিন্টু গোস্বামী, নাগিব ও ওমি। সাউন্ড সিস্টেমে ছিলেন স্বপন জাকি।
আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে সম্প্রীতী কনসার্টের আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা বলেন, প্রবাসে এই ধরণের আয়োজনে নতুন প্রজন্মের সংশ্লিষ্টতা আমাদের আশা জাগিয়ে তোলে। যে মূলনীতির উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল, তার মূল ভীত্তি ছিল একটি ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্ত বারবার বাংলাদেশের সেই পথচলা বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এই ধরনের আয়োজন মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে সূদৃঢ় করবে।