নুরুর রহিম নোমান।।
গত কাল ১৪ই সেপ্টেম্বর ছিল অপুর মৃত্যুর দিন। অপু মৌলভীবাজার শহরের সর্বজনপ্রিয় সদাহাসিমুখের এক রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। সদালাপী অপু ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির প্রশ্নে আপোষহীন এক শক্তিশালী ও সক্রিয় কর্মী। বলিষ্ট মনোবলের অধিকারী এই অপুকে নিয়ে তারই রাজনীতির সহপাটী নুরুর রহিম নোমান অত্যন্ত আপনজনের মত মনের সকল আবেগ মিশিয়ে তার ফেইচবুকে লিখেছেন। নোমানের আবেগ মথিত সেসব কথা যেকোন পাঠকের মনেজগতে কিছুটা হলেও দাগ কাটতে পারবে বলে আমাদের ধারণা। তাই এখানে অপুকে নিয়ে নোমানের সেই সবদিনের স্মৃতিচারণ ও না বলা কথাগুলো আমাদের পাঠকদের জন্য তুলে দিলাম।
নোমান রাজনগরের মানুষ। রাজনগর পোর্টিয়াস স্কুলের ছাত্র ছিলেন। মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে পড়েছেন। যতদূর জানি তিনি একজন প্রগতিশীল রাজনীতি সচেতন মানুষ। অপুকে নিয়ে তিনি এভাবেই শুরু করেছেন-
অর্ধেন্দু বিকাশ দেবরায় অপু; আমাদের বন্ধু, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। শত দু:খের মাঝেও যাঁর মুখ হাসিতে সমজ্জ্বোল থাকতো। আজ সেই প্রিয় অপু’দার মৃত্যু দিবস, আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন!
না, তাঁর এই অকাল মৃত্যু কোন রোগ-শোকে নয়;
১৯৯৩ এর ১৪ সেপ্টম্বর, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা তাঁর
জীবনে স্থায়ী যতিচিহ্ন এঁকে দেয়!
অপু’দা বয়সে বড় হলেও, ১৯৭৭ সালে আমরা মৌলভীবাজার কলেজের (একাদশ শ্রেণী) সহপাঠি। ছাত্র ইউনিয়ন ছিলো আমাদের আদর্শের প্রাথমিক ঠিকানা। অবশ্য অপু’দা তারো আগে থেকেই উত্তরণ খেলাঘরের সাথে যুক্ত ছিলেন। সহপাঠি হিসাবে এবং একই ছাত্র সংগঠনের কর্মী হিসাবে সখ্যতার শুরু এবং দিনে দিনে তা সমৃদ্ধ হয়। একজন ভালো সংগঠক, যে কাউকে আপন করে নেওয়ার একটা সহজাত ক্ষমতা ছিলো অপু’দার। মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা আমরা সমাজ পরিবর্তনের আদর্শের সংগ্রামের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম। যুক্ত হয়েছিলাম সিপিবি’র সাথেও। নানা সীমাবদ্ধতার কারনে এক সময় দেশের বাইরে
চলে আসি। অপু’দা সকল প্রতিকূলতার মাঝেও সেই সংগ্রামেই নিয়োজিত ছিলেন আমৃত্যু। এখানেই তিনি আমাদের(আমার) চেয়ে অগ্রসর, শ্রেষ্ট!
অনেক কথা, অনেক স্মৃতি! অপু’দা, টিপু ভাই (প্রয়াত)এবং আমি, হরিহর আত্মা ছিলাম! ম্যানেজার স্টলের চা-সিঙারা না হলে আমাদের প্রতিটি দিনই যেন অপূর্ণ থেকে যেতো ! টিপু ভাইও অকালে চলে গেলেন! এ’দুজন স্বজন হারানোর কষ্ট , আজীবনের! আমি তখন ইতালিতে। ১৯৯২ সালে দেশে আসলাম। চলে যাওয়ার আগের দিন ম্যানেজার স্টলে আমাদের সেই আগের মতো আড্ডা হলো। আড্ডা শেষে আমি বিল পরিশোধ করতে গেলাম, কিন্তু অপু’দা কোন অবস্থাতেই তা করতে দেবেন না! অনেক চেষ্টা করলাম; বললেন, “ঐ বিল আমি(অপু) দেবো।” আরো বললেন, “নোমান, জানিনা তোমার সাথে আর দেখা হবে কিনা!
আমি না থাকলে তখন আমার কথা তোমার মনে থাকবে!” ঐ কথাগুলো এখনো কানে বাজে, বেদনা বিধুর হই, চোখ আদ্র হয়ে উঠে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়, হৃদয় মোচড় দেয় !
ঐদিন ই কি বুঝে গিয়ছিলেন আমাদের আর দেখা হবেনা! এটাই শেষ দেখা! তাই হয়তো অপুদা’র এই আকুলতা ছিলো! চলে আসার সময় বললেন, কাউকে পেলে উনার পা’র জন্য যেন কিছু Corn Plaster পাঠাই। ইতালিতে এসেই কর্ন প্লাস্টার পাঠিছিলাম। ঝন্টু’দা বলছিলেন, সে এক হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক দৃশ্যের কথা! সনাক্ত করা যাচ্ছিল না! পায়ের ঐ প্লাস্টার তাঁকে সনাক্ত করতে কাজে লেগেছিলো। দেশের মানুষের প্রতি ছিলো যার মমতা। আমাদের প্রিয় শহর মৌলভী বাজার এর প্রিয় মুখ সদাহাস্য অপু’দা অনন্তলোকে ভালো থাকুন, প্রশান্তিতে থাকুন ।
অনেক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রিয় অপু’দা।