মূলতঃ বিশ্বনাথের কন্যা এখন বৃটিশ এমপি
রুশনারা আলীর নির্বাচনি প্রচার শুরু
যুক্তরাজ্যে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের লেবার দলীয় প্রার্থী রুশনারা আলী ও তার কর্মী-সমর্থকরা। বিগত ১৩ জুন পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিনের মিউজিয়াম পার্কে অনেকটা অনুষ্ঠানিকভাবেই প্রচার শুরু করেন তারা।
এতে উপস্থিত ছিলেন রুশনারা আলী, লন্ডন মেয়র সাদিক খান, গ্রেটার লন্ডন অ্যাসেম্বলি মেম্বার উন্মেষ দেশাই ও টাওয়ার হ্যামলেটস্ লেবার পার্টি নেতা কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম সহ আরো অনেকে।
রুশনারা আলী বলেন, “তার দলের নির্বাচনি ইশতেহারে আবাসন সমস্যা, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। লেবার পার্টি আগামী পাঁচ বছরে ১৫ লাখ বাড়িঘর তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ১৩ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ, শিক্ষাক্ষেত্রে বেশি করে শিক্ষক নিয়োগ, স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষার তালিকা কমিয়ে আনা ইত্যাদি পরিকল্পনা রয়েছে।”
তার অর্জন সম্বন্ধে বলেন বাসস্থান উন্নয়নে তিনি ১৬৫ মিলিয়ন পাউনড জোগাড় করেছেন। তাছাড়া কোবিদ ১৯ মহামারীর মোকাবেলায় অর্থ যোগান, স্কুল গুলোর জন্যে অনুদান আদায়, রোহিঙ্গ্যা প্রত্যাবর্তন ও উইগোরদের মানবদিকারের জন্যে লড়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য উন্নয়ন, বিশেষ করে ব্রিটিশ বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস যাতে যুক্তরাজ্যে ও ইউরোপে ট্যারিফ ফ্রি প্রবেশাধিকার পায় সেজন্য কাজ করছেন বলে জানান রুশনারা আলী।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বিশাল অ্যাভিয়েশন চুক্তি সম্পন্ন করার কাজ করছি। এই চুক্তির ফলে ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি শুধু লাভবানই হবে না, বাংলাদেশসহ এসব দেশগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”
সাদিক খান বলেন, “রুশনারা আলী পার্লামেন্টে গত ১৪ বছর মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, চীনের উইঘুর মুসলমান ও রোহিঙ্গা কমিউনিটির বিষয় উত্থাপন করেছেন, মানবাধিকারের কথা বলেছেন।”
আগামী ৪ জুলাই যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। পূর্ব লন্ডনের বাঙালি রাজনৈতিক সক্রিয়তা প্রথম দিকে বাঙালি বসতি স্থাপনকারী, নাবিকদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যে বাঙালির উপস্থিতি ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশদের কাছ থেকে তার স্বাধীনতা লাভের অনেক আগে থেকেই, তবে, বিশ শতকের প্রথম দিকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বৃহৎ গোষ্ঠী – বাঙালি সহ – নাবিকরা, যারা লস্কর নামে পরিচিত যুক্তরাজ্যে এসেছিল। ৮০ এর দশকে বাঙালি সম্প্রদায়ের রাজনীতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগ্রাম থেকে যুক্তরাজ্যে সক্রিয়তার দিকে চলে যায়। দ্বিতীয় প্রজন্মের বাঙালি তরুণরা এই রাজনৈতিক সংগ্রামের পুরোভাগে ছিলেন। ১৯৭৮ সালে বাঙালি দ্বিতীয় প্রজন্মের উত্থান ঘটেছিল যারা পরবর্তীতে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করে। ১৯৮২ সালে লন্ডন বরো অফ টাওয়ার হ্যামলেটস-এ প্রথম বাঙালি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আজ, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঙালি কাউন্সিলর নিয়ে গর্ব করতে পারে। ব্রিটেনের বাঙালি সম্প্রদায়ের স্বপ্ন অবশেষে সত্যি হয়েছিল ২০১০ -এ যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে যখন লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী, পূর্ব লন্ডনের বাংলাটাউনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে জয়ী হন। সাংসদ রুশনারা আলীর জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথে। তিনি সাত বছর বয়সে পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। গত চার মেয়াদের সাংসদ ও ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্য রুশনারা আলী এবার নির্বাচিত হলে তিনি হবেন প্রথম বাঙালি বংশোদ্ভুত মন্ত্রী।