দেশে নির্বাচনী হাওয়ায় পাল তুলেছে আওয়ামীলীগসহ মহাজোটের বেশ কয়েকটি অংশীদারী দল। দেশের রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিনের অনুশীলিত বিরোধী পক্ষ বলে খ্যাত ‘বাংলাদেশ ন্যাশনেলিস্ট পার্টি’ বা ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ নির্বাচন বর্জন করে বিভিন্ন নমুনায় অবরোধ-অসহযোগের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য বিএনপি’রই একটি ক্ষুদ্রাংশ ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী দল অবশ্য পলে পলে বলে যাচ্ছেন যে কোন ধরণের নির্বাচন বিরুধী অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডকে সরকার কোন সুযোগই দেবেনা। দেশে শাসনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিগত সময়ের ‘ওয়ান ইলেভেন’এর মত কোন অবস্থা তৈরী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশ সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচনের পথে গণতন্ত্রের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, সামনের দিকে এগিয়ে যাবেই যাবে।
অবস্থাদেখে মনে হচ্ছে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পুনরায় সরকার গঠনের পক্ষে অনেকটাই এগিয়ে গেছে কারণ বিএনপি কোন এক আদেখা-অজানা কারণে আন্দোলনের জোরালো কোন বক্তব্য সাধারণ মানুষের সামনে দাঁড় করাতে পারছেনা। আন্দোলনের মাঠেও তারা দ্বিধাবিভক্ত। একপক্ষ বলছে তত্তাবধায়ক সরকার চাই তো অন্যপক্ষ বলছে অন্তর্বর্তী সরকার চাই। এমন অবস্থায় বিরুধী পক্ষের এক হবার কোন সুযোগ নেই। ফলে, নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনের পর বিএনপি দলের অভ্যন্তরেই আরো বেশী চাপের সন্মুখীন হবে বলেই আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক মহলের ধারণা। আওয়ামীলীগ হয়তো ভাবছে নির্বাচন শেষ করে সরকার গঠিত হয়ে গেলে বিশ্বের শক্তিধর গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কথা বলার সুরও পাল্টে যাবে। তারা এখন যে সুরে কথা বলছে নির্বাচনের পর সরকার গঠন হয়ে গেলে তাদের সে সুর আর থাকবে না। ফলে দেশের রাজনীতিতে তখন যে চাপ আসবে সে চাপে বিএনপির আন্দোলন থেমে যাবেই শুধু নয় বিএনপি বিলুপ্ত হওয়ার পথ ধরবে। কারণ, একান্ত বিএনপি’র একপক্ষ কর্মি ছাড়া রাস্তায় নেমে লড়াই করে আন্দোলন-এর পক্ষে কেউ যেতে রাজী নয়। দেশের আপামর জনগন আন্দোলন নিয়ে মাথা ঘামায় না। সাধারণ মানুষ সকল সময়ই ডাল-ভাত-রুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদের কাছে প্রথম ও প্রধান কাজ আগে পেটের চাহিদা মেটানো তারপর অন্যকিছু।
ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত। |
যতদূর খেয়াল আছে বিগত জাতীয়পার্টি(এরশাদ) সরকারের আমলে প্রেসিডেন্ট এরশাদ ও তার সরকারকে স্বৈরাচার বানাতে গিয়ে জনগনের যে সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গিয়েছিল বর্তমানে তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কিছু মানুষ আওয়ামীলীগ বিরোধী আছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। যারা আছে তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। এমন অবস্থা আওয়ামীলীগের জন্য আশীর্বাদ। ফলে, এ ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ চাইছে সুষ্ঠু নির্বাচনই হোক। সে বহির্বিশ্বের কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণেই হোক তবে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বিএনপি’কে কোন সুযোগ দিতে রাজী নয় দলটি। আওয়ামীলীগ তাই নিজেদের দলেরই বহু লোককে বিভিন্ন নমুনায় মনোনয়ন দিয়েছে বিশেষ করে স্বতন্ত্রে দাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে। এতে করে নেতৃত্বের আসল মানুষ বেরিয়ে আসবে দলও সমৃদ্ধ হবে আর নির্বাচনও সুষ্ঠ ও ভেজালমুক্ত থাকবে। বহির্বিশ্বকেও দেখাতে পারা যাবে যে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।
বস্তুত এরকম একটি সুষ্ট নির্বাচনও দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। এ রকমটি না হলে, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচণ্ড চাপে হয়তো পড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। আর তাই আওয়ামীলীগ চাইচে আসলেই সকলের জন্য একটি সুষ্ঠ নির্বাচন হোক যাতে বিশ্বকে দেখানো যাবে যে সংবিধান অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে হয়েছে এবং বাংলাদেশ তা করতে পারে। আর এমন আস্তা থেকেই সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীকে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি চলছে। পক্ষান্তরে বিএনপি হয়তো কৌশল নিয়েছে যে তারা আপাততঃ বিরোধীধারাকে জিইয়ে রেখে নির্বাচনের পরেই তারা জোর আন্দোলন দাঁড় করাতে সক্ষম হবে। তাদের ধারণা এখনই নির্বাচন নিয়ে সরকার দলের ভেতরে চলছে কোন্দল; নির্বাচন শেষে সরকার গঠন করতে গিয়েই এ কোন্দল হানাহানিতে পরিণত হবে, আরো বেড়ে যাবে তখন শুরু হবে দলে আভ্যন্তরীন কোন্দল পাশাপাশি থাকবে বৈদেশিক চাপ। সে সুযোগকেই কাজে লাগাবে বিএনপি।
এতোসবকিছুর পর একটি বিষয় ঠিকই বুঝা খুব কঠিন যে আওয়ামীলীগের হাতে কি এমন যাদুরকাঠি আছে যার কারণে দীর্ঘকাল প্রচেষ্টার পরও বিএনপি আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ব্যর্থ হলো। এই না পারার পেছনে কি এমন অদৃশ্য কারণ কাজ করছে, দেশের সুধি, সুশীল ও রাজনৈতিক মহলসহ কোন মহলই বিষয়টি সামনে আনতে পারেন নি। এ কেমন ব্যর্থতা!