দেশ মাতৃকা থেকে।। লন্ডন: শুক্রবার, ১২ই ফাল্গুন ১৪২৩।। আধুনিক যুগে ফাসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড ব্যবস্থাটাই সবদেশে প্রচলিত। কিন্ত প্রাচীনকালে কিছু কিছু দেশে নিয়ম ছিল যতটা সম্ভব কষ্ট দিয়ে মানুষকে মারা যায় তার চেষ্টা করা। এজন্য আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষ হত্যার ভয়ংকর সব উপায়।
বর্তমান বিশ্বে সবদেশে না হলেও কিছু দেশে মৃত্যুদণ্ড প্রচলিত আছে। বর্তমান যুগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে। কিন্ত প্রাচীনকালে অনেক দেশে নিয়ম ছিল যতটা সম্ভব কষ্ট দিয়ে মানুষকে মারা যায় তার চেষ্টা করা। এজন্য অবলম্বন করা হতো হত্যার ভয়ংকর সব উপায়। আসুন জেনে নিই তার কয়েকটি-
ব্রাজেন বুলঃ প্রাচীন গ্রীক কারিগরদের আবিষ্কার এই ব্রাজেন বুল। এটি আসলে একটি পিতলের তৈরী ষাড়। এর পেটের দিকটা ফাঁপা। পিঠের উপর একটা ঢাকনা থাকে। এই ঢাকনা দিয়ে অপরাধীকে পেটের ভিতরে ঢুকানো হয়। এরপর ঢাকনা বন্ধ করে পেটের নিচে আগুন দেয়া হয়। আগুনের আচে পিতল উত্তপ্ত হতে থাকে। ভেতরে থাকা মানুষটি উত্তাপে সিদ্ধ হয়ে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ব্রাজেন বুল নামকরণের কারণ হলো, বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত এই ভিক্টিমের আর্তনাদ বাইরে বেরোনোর সময় অনেকটা ষাড়ের আওয়াজে পরিণত হত।
ইঁদুর দিয়ে মৃত্যুদণ্ডঃ ১৬ শতকে ডাচ বিদ্রোহের সময় এই পদ্ধতির কার্যকরভাবে ব্যাবহার শুরু হয় ডাচ নেতা দাদরিক সনয় এর হাত ধরে। এই পদ্ধতিতে আসামীকে উলঙ্গ করে একটা কুঠুরিতে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত। কুঠুরির ভেতরে রুগ্ন ইঁদুর ছেড়ে দেয়া হত। এক পর্যায়ে ইঁদুরগুলো ওই আসামীর মাংস কুরে কুরে খেতে শুরু করত। এক পর্যায়ে মাংসে পচন ধরে বা রক্তপাতে সে মারা যেত।
বাঁশ দিয়ে মৃত্যুদন্ডঃ আশ্চর্য শোনালেও প্রাচীন এশিয়া (বিশেষত চীনে) বাঁশ ঢুকিয়ে মানুষের মৃত্যুদন্ড দেয়া হত। পদ্ধতিটা বেশ সহজ হলেও ভয়ংকর। বাঁশ খুব দ্রুত বাড়ে। দিনে প্রায় এক ফুট মত বৃদ্ধি পায় বাঁশ। এই পদ্ধতিতে অপরাধীকে একটা বর্ধনশীল বাঁশের উপর বেঁধে রাখা হয়। বাঁশ বৃদ্ধি পেতে পেতে একসময় তার শরীর ভেদ করে ঢুকে যায়। রক্তপাতের কারণে একসময় সে মারা যায়।
লিং চিঃ মৃত্যুদণ্ডঃ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একটি ভয়াবহ পদ্ধতি হল “লিং চি”। প্রাচীন চীনে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। ১৯০৫ সালের পর এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ করা হয়।
লিং চি পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে প্রথমে একটা খুটির সাথে দাঁড়ানো অবস্থায় বেঁধে রাখা হত। দুই হাত একসাথে করে মাথার উপর বাঁধা হত। একইভাবে নিচে পা বাধা হত। এরপর একজন জল্লাদ ছুরি দিয়ে প্রথমে বাম স্তন (পুরুষ মহিলা সবক্ষেত্রেই) এর কিছুক্ষণ পর ডান স্তন কেটে ফেলত। কিছুসময় পর হাতের বাহু এবং পায়ের উরুতে কেটে দিত। যন্ত্রণা বাড়ানোর জন্য সময় নিয়ে কাটা হত। এভাবে শরীরের বেশ কয়েক জায়গায় কাটা হলে রক্তক্ষরণের কারণে আসামী মারা যেত। এরপর লাশটিকে জনসাধারণের দেখার জন্য ঝুড়িতে করে ফেলেও রাখা হত।
দ্য র্যাকঃ প্রাচীণ গ্রীসে এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত। যা পরবর্তীতে দাস প্রথার যুগে দাস এবং নিগ্রো হত্যার জন্য ইউরোপেও এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছিল। দ্য র্যাক আসলে একটি কপিকল পদ্ধতি। একটা টেবিলে প্রথমে ভিক্টিমকে শোয়ানো হয়। এরপর হাত এবং পা দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়। এরপর দড়িটিকে একটি পুলির সাথে জুড়ে দেয়া হয়। একজন জল্লাদ হাতলে চাপ দিলে দড়ি টান টান হতে থাকে। বিপরীত দিকে হাত এবং পা টানা হতে থাকে। যার ফলে একসময় লিগামেন্ট এবং পেশি ছিড়ে যায়। এক পর্যায়ে অপরাধী মারা যেত।
চিরে ফেলাঃ এই পদ্ধতিতে একটা করাত দিয়ে আসামিকে কেটে ফেলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হত।
চামড়া ছিলে নেয়াঃ প্রাচীন ইউরোপে কালো জাদুকর এবং ডাইনিদের এভাবে সাজা দেয়া হত। পা থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে পুরো শরীরের চামড়া ছিলে ফেলা হত। প্রচন্ড যন্ত্রণায় এক সময় আসামী মারা যেত। (দেশ মাতৃকা থেকে)