আনসার আহমেদ উল্লাহ।।
লন্ডন: ঐতিহাসিক সাতই মার্চ পালন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা দাবী করে বলেন, ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্সে প্রদত্ত ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণই ছিলো মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। বক্তারা বলেন, মাত্র ১৯ মিনিটের সেই কালোজয়ী ভাষণের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় এবং পাক হানাদার মুক্ত করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন করে। সভায় কোন কোন বক্তা ৭ মার্চের দিনটি ‘জাতীয় দিবস’ ঘোষণা ও সরকারীভাবে পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী জানান।ঐতিহাসিক সাতই মার্চ উপলক্ষ্যে সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ নিউ মেজবান রেস্টুরেন্টর পার্টি হলে গত ৭ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ বশারত আলী এবং সভা পরিচলনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।
সভার শুরুতে ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার সংগ্রামসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশ ও প্রবাসে ভূমিকা রাখার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। সভা চলাকালে বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ড. সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। তিনি ঐক্যবদ্ধ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান এবং সফলভাবে দিনটি পালন করার জন্য সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান।
সভামঞ্চে উপবিষ্ট থেকে সভায় বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, সহ সভাপতি যথাক্রমে মাহাবুবুর রহমান, সামছুদ্দিন আজাদ ও লুৎফুল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদিন দেওয়ান ও আব্দুল হাসিব মামুন, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিজবাহ আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক ফরিদ আলম, উপ প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক সোলায়মান আলী ও নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল। সভায় কবিতা আবৃত্তি করে নতুন প্রজন্মের ফাহমিদা রহমান।
সভায় ডা. মাসুদুল হাসান বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিলো। সেই চক্রান্তের কতা বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ রাস্তায় রেসকোর্স ময়দানে আসেন এবং তার অমর ও ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। যে ভাষণ জাতিকে স্বাধীনতার সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি বলেন, যারা দলের সভায় আসেন না তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কাউকে আর ছাড় দেয়া হবে না। দলের সুবিধাবাধীদের ব্যাপারে হাইকামান্ডকে জানানো হবে। মাহাবুবুর রহমান ও আবুল মনসুর খান তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ শুনার স্মৃতি চারণ করেন। সামছুদ্দিন আজাদ তার বক্তব্যে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা এবং আমাদেও জাতীয় জীবনে সাত মার্চেও ভাষণের গুরুত্ব সংক্ষেপে তুলে ধরেন।
লুৎফুল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ দলের হাইব্রীড নেতা-কর্মীরা ধারণ করেন না, লালন করেন না, যা দু:খজনক। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের চেতনায় দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশ ও দলের জন্য কাজ করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। মোজাহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে দলীয় সভা-সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিত না থাকার সমালোচনা এবং সুযোগ সন্ধানী নেতা-কর্মীদের চিহ্নিত করার দাবী জানানোর পাশাপাশি সভায় বক্তব্য দিয়ে চলে যাওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য দলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মিজবাহ আহমেদ বলেন, আর কারো কথায় নয়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেই দেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর সকল বাঙালী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেন, আর কারো ভাষণ শুনেন না কেনো?ফরিদ আলম তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীর অনুপস্থিতির সমালোচনা আর যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর বিপুল উপস্থিতির প্রশংসা করে বলেন, যারা ১৫ আগষ্ট আর ৭ মার্চের সভায় আসে না তাদের চিহ্নিত করে মূল্যায়ন করতে হবে। শাহীন আজমল বলেন, ৭ মার্চের ভাষণেই বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট ভাষায় স্বাধীনতার কথা বলেন। তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের দিনটি জাতীয়ভাবে পালনের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান। তার এই বক্তব্য জোড়ালোভাবে সমর্থন করেন ডা. মাসুদুল হাসান।
শেখ আতিকুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগই প্রার্থী ছিলো। ফলে অনেক জায়গায় বিএনপি জয়লাভ করেছে। এটা দলের জন্য অশনী সংকেত। তাই আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে এখন থেকেই ভাবতে হবে।