বন্যানিমজ্জিত সমশেরনগর ইউনিয়নের মরাজানেরপার গ্রাম। ছবি: মুক্তকথা
কমলগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির এখন উন্নতি হচ্ছে। দুসপ্তাহ আগে রোববার ১৪ই জুলাই রাত ৩টায় ধলাই নদীর কমলগঞ্জের রামপাশায় সর্বশেষ ভাঙ্গনটি সংগঠিত হয়েছিল। সর্বশেষ ভাঙ্গনটি নিয়ে ধলাই নদীতে ভাঙ্গন ছিল ৪টি। এসব ভাঙ্গনে অন্তত ১১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। তাৎক্ষনিক বন্যাক্রান্ত হয়েছিল প্রায় ৮শত পরিবার। এ সময়ই ভারি বর্ষণে লাউয়াছড়া বনে পাহাড় ধসে গাছ পড়ে এক ঘন্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। ঢলের পানিতে নিমজ্জ্বিত থাকায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর-কুলাউড়া ও শমশেরনগর-তারাপাশা সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটেছিল এবং দীর্ঘদিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এসবের ফলে জনদূর্ভোগ চরমে উঠেছিল। এ সকল সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী ও চাকুরীজীবিরা দুর্ভোগে পড়েছিলেন বেশী।
বন্যায় আক্রান্ত রামপাশা গ্রাম। ছবি: মুক্তকথা
ওই একই সময় উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ধলাই নদী ছাড়াও লাঘাটা ও ক্ষিরনী নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছিল। হাজার হাজার পানিবন্দি মানুষের অসহায়ত্ব প্রকৃতিকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। চরম দুর্ভোগে পড়ে বন্যার্তরা চরম অসহায়বোধ করেছে দিনের পর দিন। তখনও সরকারীভাবে এসব এলাকায় কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। এসময় এক সোমবার বিকেলে ধলাই নদীর পানিকে বিপদসীমার ৪১সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গিয়েছিল।
ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের নতুন ও পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে কমলগঞ্জ পৌরসভা, রহিমপুর, আদমপুর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার, শমশেরনগর ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নসহ ৭টি ইউনিয়নের ১১৫টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। এ ছাড়াও ওই একই সময়ে অতিবৃষ্টির ফলে উজান থেকে আসা পাহাড়ীঢলে কমলগঞ্জের ঘোড়ামারা, কেওয়ালীঘাট, রুপসপুর, রাধাগোবিন্দপুর, মহেশপুর, শ্রীরামপুর, দক্ষিণ ধুপাটিলা, পালিতকোনা, রসুলপুর, বনবিষ্ণুপুর, গোপীনগর, রশিদপুর, নোয়াগাঁও, চন্দ্রপুর, কোনাগাও, বনবিষ্ণুপুর, রায়নগর, রামপুর, রামচন্দ্রপুর, হরিশ্মরন, জালালপুর, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, কান্দিগাও, রামপাশা, কুমড়াকাপন, রামপুর, বিষ্ণুপুর. নারায়ণপুর, কান্দিগাঁও, গন্ডামা, হকতিয়ারখোলা, কেওয়ালীঘাট, জালালপুর, বন্দরগাঁও, সতিঝিরগাঁও, মারাজানের পার, রাধানগর, হরিপুরসহ আরো ২৯টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। এইসাথে ভেঙেছে বহু গ্রামীণ সড়ক। বন্যার সাথে সাথে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য দুর্গতদের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০০প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছিল যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কমলগঞ্জ পৌরএলাকা ও রহিমপুরে বন্যাক্রান্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছিল বন্যার পরের দিন। এ অবস্থা থেকেই বন্যার ভয়াবহতা অনুমেয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমলগঞ্জে ১২মেট্রিক টন চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ইতিমধ্যে বেশকিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বন্যা কবলিত গ্রামহগুলোতে।
বন্যালগ্নে রাধাগোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: মুক্তকথা
অবশ্য বসে নেই কেউই। বন্যা নিয়ে সকলেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সদস্য, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মামুনুর রশীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিভিন্ন এলাকা ইতিমধ্যেই পরিদর্শন করেছেন। এদিকে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ কমলগঞ্জ পৌর এলাকা ও রহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল নিজ ইউনিয়নের বন্যাক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। এদিকে গত ৩দিন যাবৎ একনাগারে খররৌদ্রতাপ বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজনকে ভয়ার্ত করে তুলেছে। তাদের মতে এমন খরতাপের শেষে সাধারণতঃ মুষলধারে বৃষ্টি হয়। যদি তাই হয় তা’হলে আরো কয়েকটি ঝুকিপুর্ণ স্থানে ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী মনেকরছেন।
|