লন্ডন: বৃহস্পতিবার, ৬ বৈশাখ ১৪২৪।। ২০১৬ সাল জুড়ে বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিক ঘটনায় বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম হয়েছিল বাংলাদেশ। এসব খবরের মধ্যে অন্যতম শিরোনাম ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকারদের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি। ঘটনাটি ওই সময় দেশে-বিদেশে তোলপাড় তুলেছিল। এই কেলেঙ্কারিটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মাসে।
এ ঘটনার পরই চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই ঘটনার কারণে দুঃখজনকভাবেই বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান সহ পাঁচজনকে। ওই সময়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা (৮১ মিলিয়ন ডলার) লুট হয়। সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল হ্যাকাররা।বাংলাদেশের চুরি গিয়েছিল ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরৎ আসে ২ কোটি ডলার। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের হাতে রয়ে যায়। তদন্তে সেটা স্পষ্ট হলেও তারা গড়িমসি শুরু করে। অনেক চাপ দেওয়ার পর গত ১২ নভেম্বর দেড় কোটি ডলারের মতো ফেরত দেয় বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়। ওই সময়ই ‘আনন্দবাজার’ অনলাইনে লিখেছিল-“এর আগে চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ‘বাংকো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিনাসকে’ (বিএসপি) বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি হওয়া টাকার ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির একটি আঞ্চলিক আদালত।” অবশিষ্ট ছ’কোটি ডলার নিয়ে টালবাহানা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। একই কারণে গত ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফিলিপিন্স সফর থেকে ফেরার পর এক বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, “ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)-কে অবশ্যই পুরো টাকা ফেরত দিতে হবে। মোট রিজার্ভের ৬৬ মিলিয়ন ডলার এখনও উদ্ধারের বাকি আছে। সেই টাকা দেবে রিজাল ব্যাংক। তারা এ ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে। তাদের অর্থ ফেরত দিতেই হবে।” সফর থেকে ফিরে মন্ত্রী আরো বলেছিলেন, “ফিলিপিন্সের আদালতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ওই দেশের সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি বলেছিলেন, “ফিলিপিন্সের আদালতে আমরা একটি রায় পেয়েছি। আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছি। ওই দেশের আইন প্রতিমন্ত্রী ও চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁদের সহযোগিতা চেয়েছি এবং তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করে চলেছেন।” কবে নাগাদ এই টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে, এই প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী অবশ্য বলেছিলেন, “আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। পুরো আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই আমরা টাকা ফেরত পাব।”
হ্যাকাররা সুইফট কোড জালিয়াতির মাধ্যমে এই চুরি করেছিল। তদন্তে ধরা পড়ে এই সাইবার চুরির ঘটনা ঘটেছে ফিলিপিন্স থেকে।
চুরি যাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তরিত হয়েছিল ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কে (আরসিবিসি)। আর শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়ান ব্যাঙ্কে যায় ২ কোটি ডলার।
সুইফট কোডের মাধ্যমে অভিনব এই চুরির পরপরই শ্রীলঙ্কার অর্থ ফেরত পাওয়া গেলেও, ফিলিপিন্সে আসা সব অর্থ উদ্ধার করা যায়নি। আট কোটি ১০ লাখ ডলারের অধিকাংশই রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে দেশটির বিভিন্ন স্থানের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এ ভাবেই ওই টাকা আইনগতভাবে বৈধ টাকায় (সাদা টাকা) পরিণত করেছিল চোরেরা।
পরবর্তীকালে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির শুনানিতে অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত ক্যাসিনো মালিক কিম অং দেড় কোটি ডলার ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিন ধাপে তিনি ওই টাকা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে জমা দেন। পরে এই অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাঙ্ককে একটি আইনি নথি ও প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছিল।
এতোসব কিছুর পর এখনও চুরি যাওয়া টাকা ফেরৎ পাওয়া যায়নি। ফলে অসুবিধেয় আছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। টাকা ফেরত না আসা পর্যন্ত তাদের বাজেয়াপ্ত করা কম্পিউটারগুলো ফেরত দিতে চাইছে না সি আই ডি। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবশ্য গ্যারান্টি দিয়েছিলেন, চুরির অর্থ কোনও ভাবেই আটকে রাখতে পারবে না ফিলিপিন্স। ফেরত দিতেই হবে।
-আনন্দবাজার ও আরো কয়েকটি অনলাইন অবলম্বনে