রেজাউল করিম।। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বালিকান্দি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির উপর। মৌলভীবাজার সদরের বালিকান্দি গ্রামের বালিকান্দি জামে মসজিদ পরিচালনা নিয়ে ও আয়-ব্যয় হিসাবে স্বচ্ছতা না থাকার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। মসজিদের মোতাওয়াল্লী সৈয়দ জহির উদ্দিন এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও ওয়াক্ফ প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সে সূত্রেই জানা গেছে যে, মসজিদের মোতাওয়াল্লীকে বাদ দিয়ে পুরাতন কমিটির কয়েকজন সদস্য নতুন কমিটিকে মসজিদ পরিচালনায় বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন।
সরজমিনে গিয়ে মসজিদের যুগ্ম মোতাওয়াল্লী ফজলুল করিম রেজা থেকে জানা যায়, মসজিদের নামে ব্যাংকে যে একাউন্ট ছিল সেখানে মোতাওয়াল্লী, সভাপতি ও সেক্রেটারীর মধ্যে যেকোন দুইজনের স্বাক্ষরে লেনদেন গৃহীত হতো। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু সদস্য মিলে ব্যাংক একাউন্ট থেকে মোতাওয়াল্লী ও সভাপতির স্বাক্ষর ক্ষমতা তুলে নেন। এর পর থেকেই শুরু হয় মসজিদের যাবতীয় হিসেবে অনিয়ম। এমতাবস্থায় ভবিষৎত দুর্নীতির আশঙ্ক্ষায় কমিটির কার্যক্রম স্থগিতাদেশ চেয়ে মোতাওয়াল্লী বাদী হয়ে গত ২২/০২/২০১৭ সালে(মামলা নং-১২/২০১৭) মৌলভীবাজার সহকারি জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে দু’তরফা শুনানি শেষে ১৫/০৩/২০১৭ তারিখে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর পক্ষে রায় চলে আসে। পরে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে বিবাদী আপিল করেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মসজিদের মোতাওয়াল্লী ও সভাপতিকে না জানিয়ে ২৮/০১/২০১৭ তারিখে, আইন অমান্য করে রাতের আধারে মসজিদ ভাঙ্গা হয়।
সৈয়দ জহির আরো বলেন, সাবেক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার প্রায় দুই বছর পেরিয়ে যাওয়ায়, পুরাতন-নতুন সমন্নয়ে একটি কমিটি ওয়াক্ফ প্রশাসন অনুমোদন দেন। এতে গ্রামের কিছু সংখ্যক লোক নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন গুজব দিয়ে গ্রামে ঘোলাটে পরিবেশ তৈরী করে। পরে ইউএনও ও ওসির উপস্থিতিতে বিট পুলিশিং সভা বসে। সভায় নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরসহ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সভার কোন সিদ্ধান্ত পুরাতন কমিটি মানছেন না।
ওয়াক্ফ প্রশাসনে তাদের দাখিল করা উন্নয়ন হিসাবে অন্তত ১৫ লক্ষাধিক টাকার গরমিল রয়েছে। মূলত আর্থিক হিসাব না দিতে পারার করণে পুরাতন কমিটি এই পায়াতারা করছে। ওয়াক্ফ প্রশাসন দফায় দফায় উন্নয়ন হিসাব চেয়েছে, কিন্তু কোন ব্যাংক স্টেইটমেন্টসহ হিসাবের স্বচ্ছতা দেখাতে পারেনি পুরাতন কমিটি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শওকত বলেন, যখন পুরাতন মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়, তখন দাতা পক্ষ মোতাওয়াল্লীকে না জানিয়ে মসজিদ ভাঙার কাজটি করেন। গ্রামের কিছু সংখ্যক মুসল্লিকে নিয়ে মসজিদের উন্নয়ন কাজ শুরু করেন।
|
তিনি আরো বলেন, বিগত জানুয়ারী মাসে ওয়াক্ফ প্রশাসক নতুন কমিটির অনুমোদন দেন। কিন্তু পুরাতন কমিটির উপর মামলা থাকায় নতুন কমিটির কাছে হস্তান্তর করতে পারছে না বলে তিনি জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শওকত জানান, মসজিদের যা আর্থিক লেনদেন আছে তা কোষাধ্যক্ষের মাধ্যমে রশীদ দিয়ে আদায় করা হচ্ছে। ব্যাংক একাউন্ট না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনার জন্য মোতাওয়াল্লী প্রয়োজন। মোতাওয়াল্লীর আপত্তি থাকায় ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন করা যাচ্ছেনা। কোষাধ্যক্ষের মাধ্যমে যাবতীয় লেনদেন জুম্মাবারে মসজিদে জানানো হচ্ছে।
গ্রামের একজন বাসিন্ধা সৈয়দ মুজাহিদ আলী বলেন, সাবেক কমিটির কোষাধক্ষ্যই সব হর্তাকর্থা। হিসাবে দেখলাম উনার দোকান থেকে মসজিদের মালামাল কিনা হয়েছে। কোষাধক্ষ্য কমিটির সাথে কোন যোগাযোগ না করে একক ভাবে ক্ষমতা খাটিয়ে আয়-ব্যয়ের কাজ করে যাচ্ছেন।
মসজিদের মোতাওয়াল্লি সৈয়দ জহির উদ্দিন বলেন, মসজিদের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অলিউর রহমান কোন ব্যাংকে লেনদেন করেননি, নিজের ইচ্ছেমতো অসংখ্য রসিদ বই ছাপিয়ে লন্ডনে বসে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছেন। যা আমি কিংবা আমার সাবেক সভাপতির জানা নেই। মসজিদের উন্নয়ন কাজে আমরা কখনো বাধা দেই নাই, বরং কিছু সদস্যের অনিয়মের কারণে কমিটির কার্যক্রমে স্থগীতাদেশ চেয়েছি। আমি অনুমোদনের জন্য কমিটি পাঠিয়েছি, অথচ দুর্নীতিপরায়ন সদস্যরাই চক্রান্ত করে গোপনে মোতাওয়াল্লির নাম কর্তন করে কমিটি নিয়ে আসে। সেই কমিটিতে একই পরিবারের ৫ জন ছিল। মূলত আমার প্রস্তাবিত কমিটি পাঠানোর তিন মাস আগে, ২৬ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেই কমিটি অনুমোদন না হওয়ার রেশ ধরেই কিছু সংখ্যক লোক অনিয়ম ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে নতুন কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এবিষয়ে ওয়াক্ফ প্রশাসনের জেলা পরিদর্শক মোঃ নাছির উল্ল্যাহ বলেন, গত ১৪/০১/২০২০ তারিখ ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ওয়াক্ফ প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে। যেহেতু পূর্বের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে তাই নতুন কমিটিই পরিচালনা করবে। আর্থিক হিসাবের মধ্যে মসজিদের নিয়মিত আয়-ব্যয়ের হিসাবে কোন সমস্যা নাই। তবে উন্নয়নমূলক হিসাবের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ আছে। এব্যাপারে এখনও কোন তদন্ত হয়নি, ওয়াক্ফ প্রশাসন ঢাকায় বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।
মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি ও গ্রামের পাঞ্চায়তের মুরব্বি হাফিজ জালাল উদ্দিন জানান, মসজিদ নিয়ে গ্রামে ২টি পক্ষ হয়ে গেছে। এটি কোন ভাবেই কাম্য নহে। মসজিদ আল্লাহর ঘর, মসজিদের মুসল্লি হিসেবে যারাই মসজিদে আসবেন সবাই সমান, অন্য কিছু ভাবা ঠিক হবেনা। মসজিদের আয়-ব্যয়ের বিষয়ে তাঁর কোনকিছু জানা নেই। তাকে আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বাক্ষরের কথা জানালে, আয়-ব্যয় জানা না থাকায় তিনি স্বাক্ষর করেননি।
|