লন্ডন: শনিবার, ১লা পৌষ ১৪২৩।। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে নিজেদের পক্ষে নেয়ার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরুধী সুবিধাভোগী অমুক্তিযোদ্ধাদের মিথ্যাচার এখন সর্বব্যাপী হয়ে সর্বগ্রাসী রূপ নিতে যাচ্ছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যাচ্ছে, দেখা যাবে জামাতও মুক্তিযোদ্ধার দল হয়েগেছে। আর এই মুক্তিযোদ্ধা সাজার বেপরোয়া অভিযানে যে যেভাবে পারছে নিজস্ব সামান্য কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য অকপটে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। এতো গেল একদিক। অন্যদিকে অন্তর থেকে জামাত-বিএনপি’র মৌন সমর্থক একপক্ষ অপরাজনীতিকদের মরণপণ চেষ্টা একটাই, যে কোনমূল্যে হোক মুক্তিযুদ্ধকালীন জিয়ার পাকিস্তানী অনুচরবৃত্তির ইতিহাসকে মুছে দিয়ে তাকে খাঁটী মুক্তিযোদ্ধা দাড় করাতে না পারলে তাদের পছন্দসই সুবিধাবাদী রাজনীতির হাতিয়ার একেবারে ভাঙ্গা ধনুকসম হয়ে যায়। অতএব কোন না কোন ছলছুঁতোয় জিয়াকে পাকিস্তানী চর নয় খাঁটী মুক্তিযোদ্ধার লেবাসে রাখতে হবে।
আমি ছোট্ট একটি গেরিলা দলের সহঅধিনায়ক ছিলাম। আমার কাছে এই মুক্তিযুদ্ধ জীবন যুদ্ধও ছিল। আমাদের সাথের ৬জন যোদ্ধা বেঘোরে শত্রুর হাতে ধরা পড়ে শহীদ হন। স্বাধীনতার পর আমরা কয়েকজন এতো খুঁজাখুঁজি করেছি এদের হত্যাকান্ড আর বধ্যভুমি আবিষ্কারের কিন্তু আজও সঠিকভাবে কিছু উদ্ধার করতে পারিনি। দিনের পর রাত আর রাতের পর দিন করেছি কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। যা পেরেছি তা অনেকটা লোকমুখে শুনা কাহিনী। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজই আমার পরিচিত একজনের ফেইচবুকে আমার ওই সহযোদ্ধাদের একজনের বিষয়ে তারই ভাই পরিচয়ে যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে আমি শুধু অবাকই হইনি বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেছি।
ঠিক একই সময় পেয়ে গেলাম আরেক সুবিধাবাদী এক সময়ের জাসদকর্মি আসিফ নজরুলের জিয়া সংক্রান্ত একটি লেখার প্রতিবাদ। লিখেছেন আরিফ রহমান আর প্রকাশ করেছেন অনলাইন ‘ঢাকাটাইমস’। আমার এলাকার ঘটনাটি নিয়ে পরে অন্য একসময় আসবো। জিয়া সংক্রান্ত মিথ্যাচারের বিষয়টি আগে আনা উচিৎ বিবেচনায় এখানে হুবহু তুলে ধরলাম। নিবন্ধটি পড়ে সহজেই বুঝা যায় এসব দুষ্ট অপশক্তির তল্পিবাহকেরা মিথ্যাচার আর হটকারির সকল সংজ্ঞা নিজেদের বগলদাবা করে লেখনির নামে কি নমুনার মিথ্যাচার শুরু করেছে।
আসিফ নজরুলের জিয়া সংক্রান্ত লেখা প্রসঙ্গে কিছু কথা
আরিফ রহমান
| প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম আলো পত্রিকায় মেজর জিয়াকে নিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুলের লেখাটা পড়লাম। এই লেখা পড়ে বিভ্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। আমাকেই অনেকে জানিয়ে গেলেনে যে লেখাটায় নাকি এত এত এত ‘রেফারেন্স’ যে আমি চাইলেও নাকি ‘উড়িয়ে দিতে’ পারি না। সবার সব কথা শুনে আমার সুকুমার রায়ের ‘নন্দলাল’ কবিতার লাইন মনে পড়ে গেলো-
‘ভ্যালারে নন্দ; বেঁচে থাকো চিরকাল’
আরে ভাই খালি রেফারেন্স দেখলেই হয়? রেফারেন্সের বইটা পড়বেন না?
জনাব আসিফ নজরুল খুব সতর্কভাবে একটা কলাম লিখেছেন প্রথম আলো নামক পত্রিকার বিজয় দিবস সংখ্যায়, লেখার শিরোনাম ‘ব্যতিক্রমী সেক্টর কমান্ডার’। প্রথম আলোও একেবারে ইচ্ছাকৃত ভাবেই একটা বিতর্ক তৈরি করতেই লেখাটা ছাপিয়েছে। আমি লাইন বাই লাইন উত্তর দেবো না। আমি শুধু লেখার স্ববিরোধিতাগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি, বুদ্ধিমান পাঠক বাকিটা বুঝে নিতে পারবেন আশা করি।
জনাব আসিফ নজরুল এই লেখায় মোটামুটি ৮-৯ টি বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছেন এবং কিছু আলাপচারিতার কথা টেনেছেন। আমি এই লেখার গ্র্যাভিটি বলতে বুঝবো তিনটি বইয়ের রেফারেন্স-
প্রথমত মেজর রফিকের লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে
দ্বিতীয়ত মঈদুল হাসানের মূলধারা একাত্তর
তৃতীয়ত বেলাল মোহাম্মদের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র
বহু কষ্ট করে হাসি সংবরণ করে বলছি, পারলে এই তিনটা বই পড়ে ফেলুন। জিয়া যে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজে নিষ্ক্রিয় তো থেকেছেনই একই সাথে নিজের প্লাটুনকেও মুভ করতে দেননি সেটা জানতে এই বইগুলো পুরোটা পড়ে আসুন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের ঘটনাটা যে একটা চান্স মাত্র সেটা জানতে হলে বেলাল মোহাম্মদের বই পড়তে হবে আপনাকে। পড়ে দেখুন তখন কীভাবে তারা হন্য হয়ে খুঁজেছেন মেজর রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমকে। অথচ মেজর রফিক তখন সম্মুখ সমরে ব্যস্ত, যুদ্ধ ফেলে রেখে বিলাসিতা করে স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার জন্য কোনো বেতার কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তার ছিল না।
এই সুযোগে পাঠককে জানিয়ে দিতে চাই মেজর রফিকুল ইসলাম ২৫ মার্চের আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন দেশে খারাপ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তিনি তার প্লাটুন নিয়ে বিদ্রোহ করার চিন্তাও করেছিলেন। শুধু চিন্তাই নয় বাস্তবে রূপান্তরও করে ফেলেছিলেন, কিন্ত বাঁধ সেধেছিলেন জিয়া। সিরু বাঙালির ‘যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ন’ বইটা পড়ে দেখবেন পাঠক। পাকিস্তানি জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস করার দায়িত্ব ছিল জিয়ার হাতে, মেজর রফিক জিয়াকে বলেছিলেন-
‘স্যার আপনি বুঝতে পারছেন না, সোয়াতের জাহাজের ঐ কাঠের বক্সগুলোতে করে আমাদের জন্য মাল্টা-কমলা আনা হচ্ছে না, অস্ত্র আনা হচ্ছে। এসব অস্ত্র আমাদের বুকের ওপরেই চালানো হবে।’
স্বাধীনতার ঘোষণা যে জিয়ার আগেই অনেকে দিয়েছেন সেটা আসিফ নজরুল নিজেই স্বীকার করেছেন। নজরুল সাহেব বলেছেন ‘জিয়াউর রহমানের ঘোষণার তাৎপর্য ছিল অন্য রকম’। মজার বিষয় হচ্ছে মেজর রফিক কিংবা মেজর রফিকের মত বহু সামরিক বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধারা জিয়া ঘোষণা দেয়ার আগেই প্রতিরোধ শুরু করে ফেলেছিলেন। জিয়া না থাকলে হয়তো কর্নেল অলি কিংবা অন্য কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন, এটাকে এত ফুলিয়ে দেখার কিছু নাই। মেজর জিয়ার ঘোষণার বহু আগেই অমৃতবাজারসহ বহু পত্রিকার বরাতে মানুষ জেনে যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়ে গেছে।
এবারে আরেকটা পয়েন্টে তথ্য দেই। নজরুল সাহেব লিখেছেন-
‘মুক্তিযুদ্ধের অধোগতি রোধ ও যৌথ কমান্ড-ব্যবস্থায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যুদ্ধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেন জিয়া। তার এই প্রস্তাবে একজন বাদে বাকি সব সেক্টর কমান্ডারের সম্মতি ছিল। মন্ত্রিসভার সমর্থন থাকলে এটি যুক্তিসংগত বলে মেনে নিতে পারতেন তাজউদ্দিন। তাতে যুদ্ধ আরও গতিশীল হতে পারত।’
খুবই ধুরন্দর একটা কথা। মঈদুল হাসানের মূলধারা একাত্তর পড়লে জিয়ার মূল ধান্দাটা বুঝতে পারা যায়। এত কষ্ট করে মূলধারা একাত্তর পড়তে যদি না পারেন হুমায়ুন আহমেদর বিখ্যাত উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ তো অনেক পাঠকের পড়ে থাকার কথা। মেজর জিয়া যে তাজউদ্দিন আহমেদ এবং ওসমানীর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে একটা প্যারালাল সরকার গঠনের চিন্তা করছিলেন ‘যুদ্ধ কাউন্সিল’ এর মাধ্যমে সেটা বুঝতে আসিফ নজরুলের রেফারেন্স দেয়া মূলধারা একাত্তর পাঠই যথেষ্ট। ওসমানী সম্পর্কে জিয়া বলেছিলেন ‘একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের নেতৃত্ব মেনে নিতে আমরা বাধ্য নই’। তাজউদ্দিনের দূরদর্শিতাই সেদিন এই সমস্যার সমাধান করে।
সিরু বাঙালির উপরে উল্লেখিত বইটি পড়লেই বোঝা যায় যুদ্ধের সময় যুদ্ধকে সংগঠিত করা নয় বরং পলায়নপর হয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখা ছাড়া তেমন অবদান জিয়া রাখতে পারেননি। সাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্নেল’ পড়লে দেখা যায় জিয়া তার কমান্ডিং অফিসটি করে ভারতের সীমান্তের ভেতরে নিরাপদ স্থানে। তার কমান্ডিং অফিসে পাওয়া যেত সারি সারি স্কচের বোতল। কর্নেল তাহের বলেছিলেন- ‘যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে গেরিলা যুদ্ধ হয় না।’ পাঠক কর্নেল তাহের কিন্তু সম্মুখযুদ্ধে পা হারান। খালেদ মোশারফ তো মাথায় স্প্রিন্টার নিয়ে বেঁচে ছিলেন আমৃত্যু। আপনারা বলুন জিয়ার তুলনায় কি খালেদ কিংবা তাহেরকে নিয়ে বেশি ইতিহাস চর্চা হয়? তাহলে এই বীরদের প্রতি কি আমরা অবিচার করছি না?
নজরুল লিখেছেন-
‘তিনি সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের, এম এ জলিল বা খালেদ মোশাররফের মতো সম্মুখযুদ্ধের অসীম সাহসী যোদ্ধা ছিলেন না। সমশের মবিন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিনের ন্যায় তার নিজস্ব বাহিনীর অফিসারদের মতো তিনি যুদ্ধ করতে গিয়ে আহতও হননি। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধে তার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম শক্তিশালী প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে, কিছু ক্ষেত্রে তাকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।’
সেই সিদ্ধান্তগুলো কী কী সেটা অবশ্য তিনি বলেননি। কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন। আসলে বলার মত তেমন কিছুই আসলে নেই। জিয়া বিদ্রোহ করেছিলেন নিজে বাঁচতে। বিদ্রোহ না করলে সেদিন তাকে মরতে হতো।
এবারে একদম শেষে এসে কিছু প্রশ্ন রেখে যাই আসিফ নজরুলের প্রতি-
বলুন তো মৃত জামাতকে কে হাতে ধরে এনে জীবন দিয়েছিল?
কে আল বদর কমান্ডারকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল?
বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও যেই কাজটি করার মত ধৃষ্টতা দেখায়নি, সেই আল-বদর রাজাকারদের বাংলার মাটিতে পুনর্জন্ম দেয় কে?
দালাল আইন বিলুপ্ত করে কে?
১১,০০০ গ্রেপ্তার হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেয় কে?
খালকাটা সদাহাস্য দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট জিয়ার হাতে কত হাজার হাজার সেনা কর্মকর্তা/অফিসারদের রক্ত লেগে আছে আসিফ নজরুল কি জানেন? সারাদিন যখন খাল কাটছেন জিয়া তখন রাত বেলা বিভিন্ন সামরিক জেলখানায় চিকন স্টিলের তারে এক সঙ্গে পঞ্চাশজন মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, এটা কি আসিফ নজরুল জানেন না? অর্ধ-মৃত অবস্থায় জীবন্ত কবর দেয়ার হয় শত শত সামরিক অফিসারদের সেটা কি আসিফ নজরুল জানেন না? জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কতগুলো প্রচেষ্টা চলেছে দেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে সেটা কি নজরুল সাহেব জানেন না? (সংখ্যাটা অবিশ্বাস্য; ২১টি),আর ক্যু-এর মিথ্যা অভিযোগে কত শত শত নিরীহ মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ সামরিক অফিসার/কর্মকর্তা/কর্মচারী প্রাণ দিয়েছেন এসব নিয়ে নজরুল সাহেব কয়টা লেখা লিখেছেন?
সবশেষে একটা ভিডিও ক্লিপের লিঙ্ক সংযুক্ত করতে চাই
২০১৪ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির এক আলাপচারিতায় আসিফ নজরুল নিজেই স্বীকার করেন, নিজের মুখে বলেছেন-
‘জামায়াকে পুনর্বাসন করে জিয়া অপরাধ করেছেন।’
আজ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দায় নিয়ে একে একে জামায়াতিরা ফাঁসিতে ঝুলছে, সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় আসিফ নজরুল যখন জামায়াতের পুনঃজন্মদাতা জিয়াকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বীর হিসাবে উপস্থাপন করে আদতে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্থ করার জামায়াতি এজেন্ডাকেই বাস্তবায়ন করছেন। তবে এ প্রজন্ম এখন অনেক সচেতন, কিছু আংশিক রেফারেন্স দিয়ে তাদের মিথ্যা বুঝ দেয়ার দিন শেষ। পাঠক আপনারা আসিফ নজরুলের উল্লেখিত বইগুলো পড়ুন তাহলেই বুঝতে পারবেন জিয়া আসলেই কতটুকু যুদ্ধ করেছেন। উল্লেখিত বইগুলো বিনামূল্যে পড়তে ভিজিট করুন মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ এর ওয়েবসাইট। এছাড়া এখানে আরও অনেক বই-ছবি-ভিডিও পাবেন
(লিঙ্কঃ http://www.liberationwarbangladesh.org)।
(এই লেখায় উল্লেখিত উদ্ধৃতিগুলো মূল বইতে গেলে একটু এদিক সেদিক হতে পারে তবে মূল বক্তব্য ঠিক আছে সেটা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, উদ্ধৃতিগুলো আমার স্মৃতি থেকে বলা।)
লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট