হারুনূর রশীদ॥ সবসময় অবশ্যই বিনয়ভাবে থাকো। এতে কোন খরচ লাগে না।এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়ার পথে বিমানে অভিনেতা দিলীপ কুমারের সাথে দেখা হয়েছিল এক বুড়ো লোকের সাথে। তারপর কি হয়েছিল শুনে অবাক না হয়ে পারবে না। সেই ঘটনার সেই গল্পটি যেমন প্রেরণাদায়ক তেমনি খুবই অনাকাঙ্খিত অথচ অসাধারণ ও অপ্রত্যাশিত এক সাক্ষাতের ঘটনা। বিমানে ভ্রমণ সবসময়ই কিছু না কিছু বেশী পাওয়ার সম্ভাবনায় ভরপুর থাকে। দেশের এক শহর থেকে বিমানে অন্য শহরে যাওয়ার পথে মাঝে মাঝে খুবই তৃপ্তিদায়ক বহু ঘটনা ঘটে যা পরে দেখা যায় জীবনে এমন ঘটনা একবারই ঘটেছে। এতো আনন্দদায়ক দেহমনহরণকারী ঘটনা সচরাচর ঘটার প্রশ্নই আসে না। শুধু বিমান ভ্রমণেই এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। বিমান ভ্রমন তাই শুধু শুধু ভ্রমন ঘুরানোর বিষয় নয়, তার চেয়েও অনেক বেশী কিছু পাওয়ার থাকে। যেকোন মানুষই উড়োজাহাজে চেপে যখন এক শহর থেকে অন্য শহরে যায় পথিমধ্যে অনেক অনেক সুন্দর মনলোভা ঘটনা ঘটে যা অন্য কোন বাহনযাত্রায় নাও ঘটতে পারে। এমনও বহু মানুষের সাথে দেখা হবে যাদের সাথে জীবনে অন্য কোথায়ও দেখা হওয়ার কোন সুযোগই থাকে না। তেমনি, এক শহর থেকে আরেক শহরে বিমানে যাওয়ার পথে, চিত্রাভিনেতা দিলীপ কুমারের জীবনেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল। দিলীপ কুমার তখন তার অভিনয় জীবনের জ্বলজ্বল উজ্জ্বল সময় পার করছেন। বলতে গেলে গোটা বিশ্বের কে না তাকে চেনে। একদা এক আকাশ যাত্রায় দিলীপ কুমার বসেছিলেন এক বুড়ো যাত্রীর পাশে। বুড়ো সে লোক গায়ে তার খুব সাদামাটা একটি সার্ট ও পরনে একটি পাজামা! দিলীপ কুমার সে সময় খুবই নামী-দামী একজন চিত্রাভিনেতা। দুনিয়ার সর্বত্র তিনি সুপরিচিত। এক নামে সকলেই তাকে চেনে। ফলে বিমানের বহু লোক বার বার তার দিকে তাকাচ্ছিল। অনেকেই তার সাথে করমর্দনের চেষ্টা থেকে শুরু করে চোখে দেখা, কাছে এসে দু’টু কথা বলার চেষ্টাসহ সে কতই না চেষ্টা চালাচ্ছিল অন্যান্য যাত্রীগন। এমন অবস্থায় দিলীপের পাশে বসা বুড়ো ভদ্রলোক একমনে তার সামনে রাখা চায়ের কাপ থেকে কিছুক্ষন পরপরই চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন আর কখনও উড়োজাহাজের জানলা দিয়ে বাহিরে দেখছিলেন আবার কখনও হাতে রাখা সংবাদপত্রের পাতায় নজর দিচ্ছিলেন। দিলীপের প্রতি তার সামান্যতম কোন আগ্রহ ছিল না। দিলীপ কুমারের চোখ এড়ালো না বুড়োর এমন নির্লিপ্ততা। বলে কি আমার প্রতি ভদ্রলোকের কোন আগ্রহ নেই। এ কেমন করে হয়। আমি ভারতীয় চলচ্চিত্রের একচ্ছত্র অধিপতি! দিলীপ ভাবলেন, লোকটি নিশ্চয়ই ছবি দেখিয়ে নয়। জীবনেও মনে হয় কোনদিন সিনেমা ছবি দেখেনি। তিনি বুড়ো লোকটির প্রতি একটু ক্ষানিক চোখে চোখ রাখলেন! বুড়ো লোকটিও তার দিকে একনজর চেয়ে হাসিমুখে বললো “হ্যালো”। বুড়োর সাথে দিলীপের কিছু আলাপ করার খুব ইচ্ছে জাগলো। তিনি বুড়ো লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন-“আপনি কি ছবি দেখেন?” বুড়ো উত্তর দিতে গিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, তবে খুবই কম। বহু আগে আমি একটি ছবি দেখেছিলাম।” এ সুযোগে দিলীপ বললেন, আমি ফিল্মে কাজ করি। বুড়ো মানুষটি উত্তর দিলেন, বললেন “অহঃ তা তো খুবই ভাল। তা আপনি ছবিতে কি করেন?” দিলীপ অবাক হয়ে উত্তর দিলেন, “আমি একজন অভিনেতা”। একটু হেসে বুড়ো মানুষটি আবারো উত্তর দিয়ে বললেন-“অহঃ চমৎকার”। এ পর্যন্তই তাদের আলাপ হলো। দিলীপ খুবই স্বাভাবিক কারণে একটু ভাবনায় পরেছিলেন। পরে, উড়োজাহাজ যখন নামলো, দিলীপ কুমার আশ্চর্য এ বুড়ো লোকটির সাথে করমর্দন করে বিদায় নিতে গিয়ে বললেন- “আমি দিলীপ কুমার”। বুড়ো উত্তর দিয়ে বললেন, “ধন্যবাদ। আমি জেআরডি টাটা”। দিলীপ তার জীবনে এমন ঘটনাটি কখনও ভুলেন নি বরং তার আত্মজীবনীতে মনখুলে খুব উজ্জ্বল করে লিখে গেছেন। আত্মজীবনীতে দিলীপ লিখেছেন-সে ছিল তার কাছে নিরহঙ্কারের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ যা তাকে সবসময় মনে করিয়ে দেয় যে তুমি কত বড় মাপের মানুষ সেটি বড় কথা নয়, বড় কথা হলো তোমার পাশে বসা মানুষটিও যে তোমার চেয়েও অনেক অনেক বড় তা ভাবনায় আনা ও বুঝতে পারা। আর সে ওজন দিয়ে পাশের মানুষটিকে বুঝতে পারাই মূল কথা। ফলে মনে রাখা ভাল, সবসময় অবশ্যই বিনয়ভাবে থাকা জীবনকে গড়ে তোলার জন্য অতি উত্তম। সবার সাথে বিনয়ের ভাব নিয়ে থাকা জীবনকে অতি অবশ্যই স্বার্থক করে তোলে আর এতে কোন খরচ লাগে না। |