মৌলভীবাজার অফিস: মঙ্গলবার, ৪ঠা পৌষ ১৪২৩।। আজ ২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহীদ দিবস। ৭১’ এর ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসের আমেজ কাটিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি ফেরার আগে ২০ ডিসেম্বর সকালে মৌলভীবাজার সরকারী স্কুলে অকস্মাৎ মাইন বিস্ফোরনের ঘটনায় ২৪জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। তখন থেকে এই দিনটি জেলাবাসী স্থানীয় শহীদ দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। তাদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে স্কুল মাঠের পূর্ব-দক্ষিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতি সৌধ।
এই দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। ৪নং সেক্টরের নিয়ন্ত্রনাধীন মৌলভীবাজার এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর আজিজুর রহমান জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র, গোলা বারুদ, গ্রেনেডসহ বিভিন্ন ধরনের জীবননাশী সরঞ্জাম লোকালয় ও ক্যাম্প থেকে কুঁড়িয়ে মৌলভীবাজার সরকারী স্কুলের একটি কক্ষে এনে জমা করছিলেন। ২০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দুটি যানবাহনে করে বেশ কিছু সমর সরঞ্জাম নিয়ে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই সব খালাসে ব্যস্ত হয়ে উঠেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এমনি সময় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরনে কেঁপে উঠে শহর এলাকা। আতংকগ্রস্থ মানুষ দিগ্বিদিগ ছুটাছুটি শুরু করে। স্কুল প্রাঙ্গনে ঘটে যাওয়া মাইন বিস্ফোরনে তখন ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রান হারান। বিজয়ী বেশে তাদের আর বাড়ি ফেরা হলো না। দেখা হলো না মা, বাবা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজনকে। বীর শহীদদের ছিন্ন ভিন্ন দেহ হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে স্কুল প্রাঙ্গনে পাশাপাশি স্থানে সমাহিত ও দাহ করা হয়। এতে এক সামাজিক সম্প্রীতির ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে।
এই দিনটি মৌলভীবাজারবাসীর হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে রবে যতো দিন বহে যাবে মনু, কুশিয়ারা, আকাশে উড়বে লালবৃত্ত খচিত সবুজ পতাকা। এই দিনে যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন, সুলেমান আলী, রহিম বক্স খোকা, ইয়ানূর আলী, আছকর আলী, জহির মিয়া, ইব্রাহীম মিয়া, আব্দুল আজিজ, প্রদীপ চন্দ্র দাস, শিশির রঞ্জন দেব, সত্যেন্দ্র দাস, অরুন দত্ত, দিলীপ দেব, সনাতন সিংহ, নন্দ লাল বাউরী, সমীর চন্দ্র সেন, কাজল পাল, হিমাংশু পাল, জিতেশ চন্দ্র দেব, আব্দুল আলী, নূরুল ইসলাম, মোস্তফা কামাল, আশুতোষ দেব, তরনী দেব ও নরেশ চন্দ্র ধর।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, ২০ ডিসেম্বরকে মৌলভীবাজারবাসী স্থানীয় শহীদ দিবস হিসাবে দীর্ঘ দিন ধরে পালন করে আসছে। সরকারী স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে মাইন বিস্ফোরনে ওইদিন কোম্পানী কমান্ডার রহিম বক্স খোকা ও কোম্পানী কমান্ডার সুলেমান আলীসহ ২৪জন মুক্তিযোদ্ধা মারা যান।