মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। গত বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যর সাধারণ নির্বাচন হয়ে গেলো। এবারের এ নির্বাচনে বৃটেনের বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের আগের ৩জন এমপি থাকা অবস্থায় এবারও দাড়িয়েছিলেন। সাথে পপলার এন্ড লাইমহাউস আসন থেকে নতুন একজন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এ চারজন নিয়ে মোট ৯জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী দাঁড়িয়েছিলেন। তন্মধ্যে পুরানো ৩জন এবং নতুন ১জন মোট ৪ জন বিজয়ী হয়েছেন।
বিজয়ীগন হলেন- বেথনালগ্রীন এন্ড বো আসনে রুশনারা আলী, হ্যাম্পস্টিড থেকে টিউলিপ সিদ্দিক, লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন থেকে রূপা হক ও পপলার এন্ড লাইমহাউস থেকে নতুন সাংসদ হিসেবে আপসানা বেগম জয়ী হয়েছেন।
এই চারজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী মহিলার প্রত্যেকেই শ্রমিকদল থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। এ নির্বাচনে শ্রমিকদল বহু আসনে পরাজিত হয়; অনেকটা তাদের ভরাডুবি বলা যায়। কিন্তু রাজধানী লণ্ডনের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ চার মহিলা নিজগুণে জয় নিয়ে ঘরে ফিরেন। তারা আপন যোগ্যতায় উজ্জ্বল হয়ে বৃটিশ সাংসদের যোগ্যতায় উদ্ভাসিত।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বাকী ৫ ব্রিটিশ বাংলাদেশী বিজয়ী হতে পারেননি। তাদের মধ্যে ৩ জন নারী আর ২ জন পুরুষ।
এবার শ্রমিক দল থেকে সর্বোচ্চ ৭ বাংলাদেশী প্রার্থী, লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও কনজারভেটিভ পার্টি থেকে একজন করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসেন। পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন এন্ড বো আসন থেকে হাউজ অব কমন্সের আবারো বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক শ্যাডো এ্যাডুকেশন মিনিস্টার রুশনারা আলী। সিলেট বিশ্বনাথে জন্ম গ্রহণকারী রুশনারা আলী এই নিয়ে টানা চতুর্থবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন।
রুশনারা আলী তার নিকটতম প্রার্থী থেকে ৩৭,৫২৪ ভোট বেশি পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৪৪,০৫২। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী নিকোলাসের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৬৫২৮। ফলে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৩৭৫২৪ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বাঙ্গালী কমিউনিটি খুবই প্রফুল্ল চিত্তে তার এ বিজয়কে বরণ করেছে।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে একনাগারে তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। তিনি ২৮ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। টিউলিপের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কনজারভেটিভের জনি লুক পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৯২ ভোট।
ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটি অব আর্টসের ফেলো টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালে এ আসন থেকে প্রথমবার পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। লন্ডনে জন্ম নেওয়া এই ব্রিটিশ বাংলাদেশি ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে টিউলিপ ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন। ওই কাউন্সিলে তিনিই ছিলেন প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী কাউন্সিলর।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দীক যুক্তরাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. শফিক সিদ্দিক দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে টিউলিপ হলেন দ্বিতীয়। যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ইংরেজি , রাজনীতি ও সরকার বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন।
লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল আসনে লেবার পার্টির হয়ে পর পর তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন রূপা হক। ২৮ হাজার ১৩২ ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। রুপা হক এর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কনজারভেটিভের জুলিয়ান গ্যালেন্ট পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩২ ভোট।
এমপি রূপা হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে। বাংলাদেশে আদি বাড়ি পাবনায়। রূপা হক কেমব্রিজে রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুপা হক এখনও পড়াচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান, অপরাধবিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যায়নের মতো বিষয়। রূপা হক এর আগে লন্ডনে ডেপুটি মেয়র হিসাবে স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রুপা হক মাল্টিকালচারাল কমিউনিটির একজন একনিষ্ট কণ্ঠস্বর হয়ে পার্লামেন্টে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরব ছিলেন এবং এজন্য তার নির্বাচনী এলাকাসহ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে।
নির্বাচনে হাউজ অব কমন্সে প্রথমবারের মতো যোগ হওয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত এমপি আপসানা বেগম। টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে এবার প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয় লাভ করেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী আফসানা বেগম।
তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। লেবার পার্টির পপলার এন্ড লাইমহাউজ (সিএলপি) ব্রাঞ্চের সাবেক সেক্রেটারী ও বর্তমান ভাইস চেয়ার আপসানা বেগম জীবনের প্রথম ইলেকশনে বিজয়ী হয়ে সকলকেই একটু অবাক করে দিয়েছেন।
তিনি তার আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২৮৯০৪ ভোট বেশি পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনের মোট ভোটার ৯১,৭৬০ জন। আপসানার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৩৮,৬৬০। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী- কনজারভেটিভ পার্টির- অলুয়া শনের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৯৭৫৬।
সম্ভবত এবারের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ছিলেন – আপসানা বেগম! ব্রিটিশ- বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আপসানা বাংলা ভাষায় লিখতে ও পড়তে পারেন এবং লন্ডনে কমিউনিটি ল্যাঙ্গুজ রক্ষা সংগ্রামে আপসানা বেগম হচ্ছেন সামনের কাতারের বলিষ্ঠ কন্ঠ। এম এ সনদধারী আপসানা যুক্তরাজ্যে একটি বিখ্যাত চ্যারিটেবল সংস্থায় নেতৃস্থানীয় কাজ ছাড়াও ডাইভার্স কামিউনিটির বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আপসানাকে নিয়ে এবারের নির্বাচনে বাঙ্গালী সম্প্রদায় মোট ৪জন বাঙ্গালী এমপি’র দেখা পেল।