ইমাদ উদ-দীন, মৌলভীবাজার।। নিয়ম না মেনে মৌলভীবাজারের মুদি, স্টেশনারি, হার্ডওয়্যার কিংবা ফার্মেসির দোকানেও দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। আর যে দোকানগুলোতে শুধু বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস তারাও মানছেন না কোনো নিয়ম নীতি। ঝুঁকিপূর্ণ ওই গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানগুলোতে নেই অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা। আর বিস্ফোরক অধিদপ্তর, স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নেয়া হয়নি কোনো অনুমোদনও। জেলার ৭টি উপজেলা শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলোতেও কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র খোলা হচ্ছে এলপি গ্যাসের দোকান। অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা না রেখে ঝুঁকিপূর্ণ এমন দোকান খোলায় উদ্বিগ্ন আশপাশের দোকান ও বাসা বাড়ির মালিকরা। এমন দৃশ্য জেলার সবক’টি উপজেলায় অধিকাংশ এলপি গ্যাসের দোকানে।
নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় বাসা বাড়ি কিংবা হোটেল রেস্তোরাঁয় প্রতিনিয়তই বাড়ছে এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা। আর এই চাহিদাকে পুঁজি করে শহর, শহরতলী ও গ্রাম এলাকায়ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান। সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে এলপিজি সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায়ও ওই সকল দোকানিদের নেই কোনো বাড়তি সতর্কতা।
জানা যায়, খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই ১০টির বেশি সিলিন্ডার না রাখার বিধান থাকলেও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাইসেন্সবিহীন এসব দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ওই জ্বালানি। আইনের তোয়াক্কা না করে ওই সকল দোকানিরা শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চালাচ্ছেন শহর ও গ্রাম এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসা। মৌলভীবাজার শহরে এলপি গ্যাসের ৬-৭টি ডিলার থাকলেও খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ২৫-৩০টি। অন্যান্য ৬টি উপজেলায়ও প্রায় ২৫-৩০টি ডিলার থাকলে শহর ও গ্রামের হাটবাজার গুলোতেও মিলে রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক এলপি গ্যাসের দোকান। বাসা, বাড়ি, দোকান ও সড়কের পাশের এসব দোকানে অনিরাপদে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ফলে আশঙ্কা রয়েছে বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির।
প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চালালেও তা বন্ধে নেই কোনো পদক্ষেপ। এলপিজি গ্যাস কোম্পানিগুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার মজুত আইন অনুসরণ করছে না। মৌলভীবাজারের খুচরা এলপিজি গ্যাস বিক্রয়কারী অধিকাংশ দোকানগুলোতেই নেই প্রাথমিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় ড্রাই পাউডার, বালু ও কার্বনডাই অক্সাইডসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। শহরের সবগুলো খুচরা দোকানে দেখা যায় যেখানে থাকার কথা ৮-১০টি সিলিন্ডার সেখানে এসব দোকানে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির অসংখ্য সিলিন্ডার।
জানা যায়, বিস্ফোরক আইন ১৯৮৪ এর দ্যা এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি মজুত করা যাবে না। এ ছাড়াও আটটি গ্যাসপূর্ণ মজুতের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১নং ধারায় বলা হয়েছে আগুন নেভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুতগারে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুত রাখতে হবে। এ আইন অমান্য করলে যেকোন ব্যবসায়ী ২ বছর ও অনধিক পাঁচ বছরের জেলসহ ৫০ হাজার টাকায় দণ্ডিত হবেন। এবং অর্থ অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত আরো ৬ মাস কারাগারে থাকার বিধান রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডারের দোকান খুলতে প্রথমেই নিতে হয় বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। কিন্তু পুরো জেলায় তার উল্টো চিত্র। কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম মজুত না রেখেই এখানকার মুদি দোকান থেকে শুরু করে চা দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান এমনকি ফার্মেসির সঙ্গেও বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার। মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন সড়কে সরজমিন ঘুরে দেখা যায় কোনোরূপ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে এলপি সিলিন্ডার গ্যাস। আর গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীরাও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই বাসা বাড়ি কিংবা হোটেল রেস্তরাঁয়ও তা ব্যবহার করছেন। দোকানগুলোতে দেখা যায় অমেরা, বসুন্ধরা, টোটাল, পদ্মা, যমুনা, জামাই, অরিয়ন, লাফাজসহ বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানির প্রস্তুতকৃত সিলিন্ডারের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে বিভিন্ন দোকানে দেখা যায় অনেক কোম্পানির সিলিন্ডারের গায়েই উৎপাদন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পাওয়া যায়নি।
শহরের কুসুমবাগ পেট্রোল পাম্পের সামনে পদ্মা এলপি সিলিন্ডার কোম্পানির ডিলার মেসার্স আখন্দ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ওয়াজেদ আখন্দ ডিলার হিসেবে বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রের কাগজ দেখিয়ে জানান সব দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী তিনি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন খুচরা ব্যবসায়ীরা এই নিয়ম মানছেন না। তিনি বলেন, প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে দিন দিন অবৈধভাবে এলপি সিলিন্ডার বিক্রি বাড়ছে।
মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান চৌধুরীর বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় থেকেও ছাড়পত্র নিতে হয়। তিনি বলেন, যদি এসব নিয়ম কেউ না মানেন তাহলে আমরা মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ব্যবস্থা নেবো। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো ১০টার বেশি এলপিজি সিলিন্ডার রাখা যাবে না। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব নিয়ম খুচরা ব্যবসায়ীরা মানেন না। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।