ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন-এর চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের ৮ম মহাসচিব বান কি মুন এবং নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সাথে ঢাকায় জিসিএ এর নতুন আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর এক ভার্চুয়াল সভার মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকীর প্রতি উৎসর্গীকৃত এ ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর প্রথম সারির একটি দেশ বাংলাদেশ”। তিনি আরো বলেন যে “শিশু, নারী, বয়স্ক মানুষ এবং বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ঝুঁকির বিষয়টি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না”। তিনি এই হুমকি মোকাবেলা এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ নির্ধারিত অবদান(এনডিসি) সম্পন্ন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন-এর চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘের ৮ম মহাসচিব বান কি মুন বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে একটি জনগোষ্ঠি কতটা উদ্ভাবনী হতে পারে বাংলাদেশ তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জিসিএ বাংলাদেশের মাধ্যমে তাঁদের মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করে বাকি বিশ্ব নতুন জলবায়ু বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে।” নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত্তে বলেন, “আমাদের দেশগুলো জলবায়ু অভিযোজনের গুরুত্ব সম্পর্কে খুব সচেতন । পাশাপাশি আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের উপযুক্ত ক্ষেত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে এখন অভিযোজন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে হবে। এর জন্য টাকা খরচের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা স্বল্পমেয়াদী খরচের চেয়ে অনেক বেশি কল্যানকর হবে। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাট্রিক ভার্কুইজেন বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জলবায়ু সহিষ্ণুতা জোরদারকরণে অনেক উদ্ভাবনী সমাধান রয়েছে। এই অঞ্চলের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলার জন্য তাদের যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া জরুরী প্রয়োজন। সমাধান হিসেবে জিসিএ এর ভূমিকার মাধ্যমে জিসিএ বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে সবচেয়ে কার্যকর অভিযোজন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য মন্ত্রীরাও এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়; ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী লিনোপ টেন্ডি দরজি; মালদ্বীপের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হোসেন রশীদ হাসান, নেপালের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শক্তি বাহাদুর বাসনেট, পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহকারী মালিক আমিন আসলাম খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং জিসিএ বোর্ডের সদস্য একে আব্দুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন ও বক্তব্য রাখেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। জিসিএ বাংলাদেশ অফিস মূলত দক্ষিণ এশিয়ায় অভিযোজনের ক্ষেত্রসমূহ শক্তিশালীকরণ এবং সমগ্র অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিসমূহ দূর করতে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম জোরদারকরণে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বকালীন সময়ে এটি জলবায়ু ভিত্তিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা সিভিএফ এবং ভি২০ এর সচিবালয় হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া এটি ডেল্টা জোটের সচিবালয় হিসেবেও কাজ করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ অফিস সুনীল অর্থনীতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে। আঞ্চলিক গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন বাংলাদেশ (জিসিএ বাংলাদেশ) এর ভার্চুয়াল উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একটি প্রেস কনফারেন্স এর আয়োজন করে। প্রেস কনফারেন্স এ মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এমপি এবং মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী জনাব মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন-এর চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের ৮ম মহাসচিব বান কি মুন এসময় বক্তব্য রাখেন। প্রেস কনফারেন্স এর পর প্রথম বার্ষিক জিসিএ সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। এটি আঞ্চলিক অভিযোজন অগ্রাধিকারের বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান স্টেকহোল্ডার এবং নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনার সুযোগ প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নেতা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি সংগ্রহ করা যাতে জানা যায় যে জিসিএ বাংলাদেশ কিভাবে তাদের সর্বোত্তম সমর্থন করতে পারে তার পন্থা উদ্ভাবন করা। জিসিএ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় জিসিএ এবং তার সহযোগীদের দ্বারা চিহ্নিত জলবায়ু অভিযোজনের অগ্রাধিকা্র এর ওপর গুরুত্বারোপ করবে। এটি স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন কার্যক্রম, শহুরে প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার জন্য পানি, অধিকতর স্থিতিশীল অবকাঠামো, জলবায়ু অর্থায়ন, যুব নেতৃত্ব এবং জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রকৃতির ব্যবহার নিশ্চিত করার উপায় বের করে তার বাস্তবায়নের পথে প্রয়োজনীয় সম্পদ বিনিয়োগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার বিষয়ে কাজ করতে প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। চীনের বেইজিং-এ আরেকটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এটি এশিয়ার দ্বিতীয় আঞ্চলিক কার্যালয়। |