মিশরের প্রাচীন ফারাহ তোতেন খামেনের ভাঁজ করা খাটের সন্ধান
লন্ডন: কেনো রাজা তোতেনখামেন ভাঁজ করা খাট ব্যবহার করতেন এখনও তার কোন সুরাহা করতে পারেননি গবেষকগন। তবে তাদের ধারনা, খুব সম্ভবতঃ রাজা তোতই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রথম ভাঁজ করা তক্তপোষ তৈরী করান ও ব্যবহার করেন।
রাজা তোতেনখামুন খুবই অভিজাত ও আধুনিকতম নমুনার তাবু খাট ব্যবহার করতেন। নতুন এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে মিশরের হাজার হাজার বছর আগের রাজা তোতেন খামেন ঘুমানোর জন্য অত্যাধুনিক চিন্তাধারার তিন ভাঁজের তাবু খাট ব্যবহার করতেন। তার সেই তক্তপোষকে ইংরাজী জেড অক্ষরের নমুনায় তিন ভাঁজ করে রাখা যেতো। সম্প্রতি পিড়ামিডের অভ্যন্তরে রাজা তোতেন খামেনের গুপ্ত কক্ষ আবিষ্কার হলে তাতে তাঁর ব্যবহার্য্য বহু জিনিষপত্র অনেকটা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিন ভাঁজের সেই তক্তপোষ খুঁজে পাবার পর গবেষকদেরতো চোখ চড়কগাছ। তিন বা সাড়ে তিন হাজার বছর আগে এতো অত্যাধুনিক নমুনার খাট প্রাচীন মিশরীয় কারিগরেরা বানাতে পারতো, এ যেনো এক অবাক করা আবিষ্কার।
১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার নামের একজন বৃটিশ প্রত্নতত্ব গবেষক সর্বপ্রথম বাদশাহ-এর মালসামানায় ভরপুর সমাধির গুপ্ত কক্ষে প্রবেশ করেন। জাপানের মুসাসিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল বাদশাহ এর খাটপালঙ্ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন। তারা হতবাক হয়েছেন প্রসংশা করেছেন বাদশাহ এর রুচিবোধের। এতো হাজার বছর আগে তৈরী এ খাট সেই সময়ের জন্য অচিন্তনীয়রূপে আরামদায়কতো ছিলই অকল্পনীয় ছিল তার অত্যাধুনিক নির্মাণ কৌশল। এক কথায় সেটা ভাবা যায় না। রাজার এই খাট বিষয়ে ইতিপূর্বে বিস্তারিত কোন গবেষণা হয়নি।
গবেষক কার্টার প্রায় একশত বছর আগে এই খাটের রেখাচিত্র অংকন করেছিলেন। গবেষকদের মতে এটিই একটি আসল আকারের তাবু খাট যা বিশ্বের আর কোথায়ও দেখা বা পাওয়া যায়নি। ওই সময়ের আর কোন ফারাহ বা বাদশাহ এর তোতেন খামেনের ওই খাটেরমত অনুরূপ কোন খাট বা পালঙ্ক পাওয়া যায়নি। তোতেন খামেনের এই তিনভাঁজের খাট সত্যি মুগ্ধকরা। যারা দেখেছে, সেসব গবেষকদের মনে আরো জানার কৌতুহল জাগিয়েছে।
মানবেতিহাসের প্রথম অত্যাধুনিক শোবার পালঙ্ক বা খাট?
গবেষকদের বিশ্লেষণে জানা যায় যে রাজা তোতেন খামেনের আগে দু’ভাঁজের খাট ছিল। তোতের আগের রাজারা তা ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনভাঁজের খাট তোতের আগে কেউ ব্যবহার করেছেন আজ অবদি এমন কোন বাস্তব ইতিহাস খোঁজেও পাওয়া যায়নি। ফারাহ্ দের ১৮তম বংশের দু’ভাঁজের খাট পাওয়া গেছে মিশরের জেবেলেইন এলাকায়। এতে এটি স্পষ্ট যে তোতেন খামেনের আগে দুই ভাঁজের খাট ব্যবহার হতো। যাইহোক, তোতেন খামেনের তিনভাঁজের তাবুখাট সত্যি উদ্ভাবনি ক্ষমতার পরিচয় বহন করে এবং অধিক মজবুত ও আরামদায়ক। বিশেষভাবে তিন ভাঁজের ওই তাবুখাট কেবলমাত্র রাজা তোতের জন্যই বানানো হয়েছিল, গবেষণায় তা অনুধাবন করা গেছে। খাট তৈরীর কারিগরী দিকের বিশ্লষণের পর জাপানী গবেষক নিশিমতো একথা বলেন। তাবুপালঙ্ক বা তাবুখাট খানা বানানো হয় কাঠের তৈয়ারী ৪খানা সিংহ পায়ের আদলের উপর। সিংহের পায়ের থাবা, মিশ্রিত তামা ধাতুর বাক্সদিয়ে ঢাকা। যার উপর সারা খাটের ওজন পড়ে। সিংহের পায়ের নমুনায় পা লাগানো খাটকে তিনভাঁজে নেয়া বেশ কৌশলের পরিচয়বাহী। এছাড়া পালঙ্কের পায়ার উপরে বসার বা ঘুমাবার জন্য একটি মাদুর লাগানো। সেই মাদুর ‘লিলেন’এর পাতলা তিনখানা সূতা দিয়ে বোনা বা বাইন করা। এসব কারুকাজই, হাজার বছর আগের মানুষ করেছে এটি শুনতেও অবাক হতে হয়। তথ্যসূত্র: এন্সিয়েন্ট অরিজিন