লন্ডন: বুধবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। ইতিহাসের “ফেরাউন” অর্থাৎ দুনিয়ার প্রাচীণতম বাদশাহ দের দেশ মিশর সর্বশেষ যে পদক্ষেপ নিয়েছে এতে আশাহত হতে হয়। গেল অক্টোবরে মিশর সরকার বহু আলাপ-আলোচনার পর ‘ভেট’ প্রথা প্রবর্তন করেন এবং জনসেবা খাতে সংস্কার আনেন। এরপরে গত নভেম্বরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক মিশরীয় মুদ্রার দরপতন করে, যা মাসব্যাপী উচ্চদরে চলে আসছিল এবং ভর্তুকী দেয়া তেলের দাম বাড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। এখন, মিশরীয় আদালত, ২০১১ সালের বিপ্লব পরবর্তী প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী ধর্মীয় ইসলামী দল “মুসলিম ব্রাদারহুড” এর প্রতি ক্ষমাশীলতা দেখাইতেছে!
ওই সময়ের ‘ব্রাদারহুড’ চালিত প্রেসিডেন্ট মুরশি’র সরকার বহু মিশরীয়কেই সে সময় ক্রুদ্ধ আর ক্ষিপ্ত করেছিল কারণ তারা দেখেছিল যে মুরশি সরকার ইসলামী মৌলবাদী পরিকল্পনা চাপাইয়া দেবার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।
হাজার হাজার মানুষ সেই ২০১২ ও ২০১৩ সালে রাস্তায় নেমে এসেছিল মুরশি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। ২০১৩ সালের জুলাই মাসের দিকে দেশটি এতই বিভক্ত হয়ে পরে যে সামরিক বাহিনী থেকে হস্তক্ষেপ আবশ্যক হয়ে উঠে এবং প্রেসিডেন্ট মুরশি পদচ্যুত হন। এর পর বিপ্লবী সামরিক জান্তার প্রধান, জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল শিসি ‘ব্রাদারহুড’ দলকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করে দলের কয়েক শত নেতা কর্মীকে হত্যা করে এবং ততোধিক কর্মীকে জেল বন্ধী করে।
পরে মিঃ শিসি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন আর মুরশি ও তার সঙ্গি সাথী লোকজন কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়। তারা জেলে থেকে থেকে কয়েকটি হ্ত্যা ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত মামলার মুখোমুখি হন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে প্রতিবাদী সাধারণ মানুষ হত্যার দায়ে মুরশি’র ২০ বছরের সাজা হয়। কিন্তু ওই বছরই নভেম্বরের ১৫ তারিখে মিশরের উচ্চ আদালত মুরশি ও দলের ধর্মীয় পীর মোহাম্মদ বদি সহ অন্যান্য নেতা কর্মীর মৃত্যুদন্ড রহিত করে, যে বদি ২০১১ সালে জেলখানার প্রহরীকে হত্যা করে পালিয়ে যান। শুধু তাই নয়, আদালত ওই একই মামলার আরো ২১জনের যাবজ্জ্বীবন রহিত করে ও পুনর্বিচারের আদেশ দেয়। এ সময় মুরশিও তার দু’টি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সানিবিচারে যান। এর একটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি কাতারের হয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করছিলেন এবং ৪০ বছরের সাজা হয়েছিল। অন্যটিতে, তিনি বিদেশীদের সাথে মিলে ষঢ়যন্ত্র করছিলেন মিশরকে অস্থিতিশীল করতে আর এই বিদেশীরা ছিলেন পেলেস্টাইনের বর্ণসম্প্রদায় ‘হামাস’, লেবাননের ‘হিজবুল্লাহ’ এবং ইরাণের ‘বিপ্লবী প্রহরী’। এ মামলায় মুরশি ও দলীয় অন্যান্য নেতা কর্মীর ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল। একটি মামলা যা এখনও শুনানীর বাকি রয়েছে, সেই মামলায় মুরশির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিচার বিভাগের প্রতি অশোভন আচরণ করেছেন। ওই মামলাটির শুনানি শুরু হবে আগামী ডিসেম্বরের ১০ তারিখে।
যদিও তাদের মৃত্যু দন্ড হয়েছিল কিন্তু মুরশি ও তার দলের নেতৃবন্ধকে কখনই হ্ত্যা করার ইচ্ছে কারো ছিল না।
ক্ষমতায় আসার পর পরই ‘ব্রাদারহুড’এর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে কিন্তু এখনও লক্ষনীয় মাত্রায় অনুসারী রয়ে গেছে। মিঃ শিসি’র অতিশয় কঠোর শাসনের কারণে ‘ব্রাদারহুড’ দলের অনেক সদস্যই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় যদিও বহু থেকেও যায়। এরাই পরবর্তীতে প্রচন্ড রূপে উগ্র হয়ে উঠে। তারা নেতাদের নামে এমন এক সময় শহীদ মিনার গড়ে তুলতে থাকে যখন দেশের প্রেসিডেন্ট, মিশরে পুনঃরায় বিদেশী বিনিয়োগের প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন। তবে মুরশি মহাশয় জেল থেকে এতো সহজে বের হয়ে আসতে পারবেন বলে মনে হয়না। সরকার শুধুমাত্র ব্রাদারহুডের সাথে একটু আপোশরফায় যেতে ইচ্ছুক বলে মনে হয়।
মিশরের বিচার পদ্বতি আরেকটি আশ্চর্য্যজনকভাবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী রায় দিয়েছে সম্প্রতি। গত জুনে একটি আদালত, মিশরের লোহিত সাগরের দু’টি দ্বীপের শাসন সৌদি আরবের হাতে ছেড়ে দেবার প্রেসিডেন্ট শিসি’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। এর একমাস আগে, অপর একটি আদালত, দ্বীপদ্বয়ের শাসন ক্ষমতা সৌদির হাতে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী ৪৭জন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সাজা মওকুপ করে দেয়। অবশ্য মিশরের বিচার ব্যবস্থা রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত বলে সুনাম আছে। যেমন মুরশি যখন গ্রেপ্তার হয়ে ছিলেন প্রতিবাদকারী মানুষ হত্যার জন্য ঠিক অনুরূপভাবে জেনারেল শিসি সহ তার নেতৃত্বাধীন কোন সামরিক অফিসারকেই ২০১৩ সালের আগষ্টে নরহত্যার জন্য আইনের মোকাবেলা করতে হয়নি।
(দি ইকোনমিস্ট থেকে অনুদিত। অনুবাদ হারুনূর রশীদ)