মাটি ব্যবহার করে দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য বিভিন্ন নমুনার বাসন-কোশন বানানোকে আমাদের বাংলা সংস্কৃতিতে কুমারের কাজ বলে থাকি। আরো পরিশুদ্ধ ভাষায় মৃৎশিল্প বলা হয়। খুবই প্রাচীন এ শিল্পকর্ম। কমবেশী দুনিয়ার সকল দেশেই সম্ভবতঃ এ শিল্পের অবস্থান রয়েছে। কবে, কখন, কোথা থেকে এর প্রচলন শতভাগ সঠিক করে বলা অনেকটা মুশ্কিল।
খৃষ্ট জন্মের ৯ থেকে ১০হাজার বছর আগে মাটি পুড়ে পাত্র তৈরী শুরু করেছিল মানুষ বলে গবেষকদের ধারনা। চেক প্রজাতন্ত্রে আবিষ্কৃত মৃৎপাত্রের বয়স খৃষ্ট জন্মের ২৯থেকে ২৫হাজার বছর আগের বলে ইউরোপীয়ানদের দাবী। ২০১২ সালের জুন মাসে চীন দেশে আবিষ্কৃত প্রাচীন মৃৎপাত্রের নমুনা থেকে জানা যায় এর প্রাচীনত্ব খৃষ্ট জন্মের প্রায় ২০হাজার বছর আগের। জানা যায় খৃষ্ট জন্মের প্রায় ৮হাজার বছর আগে মিশরে প্রথম গ্লাস তৈরী করা হয়।
বাংলা দেশের বিষয়ে বলতে গেলে মৃৎশিল্প অন্যতম প্রাচীন একটি শিল্প। শুধু শিল্পগুণেই অনন্য নয়, বরং এর শিল্প-সৌন্দর্য বাঙালি ঐতিহ্যকে ঋদ্ধ করেছে। মৃৎশিল্পের কাজে আধুনিক পদ্বতির ব্যবহার এর নান্দনিক সৌন্দর্যের মাত্রা বলতে গেলে দুনিয়ার আর সব শিল্পকর্মকে ছাপিয়ে গেছে। আর এ কারণে দুনিয়াব্যাপী এ শিল্পকলার বিশাল বাজার জন্ম নিয়েছে। সেই বাজার ধরতে বাংলাদেশ এখনও অনেক অনেক পেছনে থেকে দৌড়াচ্ছে।
একসময় ছিল বাংলাদেশের কুমারেরা বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে মানুষের গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সরা, সুরাই, মটকা, পিঠা তৈরির ছাঁচ ইত্যাদি তৈরি করতো। এখন অবশ্য কুমারদের কাজের পরিধি শুধুমাত্র হাঁড়ি-পাতিল বা বাসন-কোসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, রান্নাঘর থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালত পাড়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এর ব্যাপ্তি। আবার গৃহসজ্জার বিভিন্ন জিনিসের দিকেও কাজের পরিধি এগিয়ে গেছে।
অতীব দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষের প্রাচীনতম এ শিল্পকর্মকে দুনিয়া থেকে ঝেটিয়ে বিদেয় করার অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে। এখনও যেটুকু আছে তা’হলো ধনী দেশগুলো মানুষের শিল্পকর্মের অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি কৌশলী কাজ বলে যাদুঘরে রাখার আদলে জিইয়ে রেখেছে। স্কুল-কলেজের উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীগন তা দেখে ও বানানোর কৌশল দেখে ও শিখে জ্ঞান নেয়। আর অনুন্নত গরীব দেশে জীবীকার তাগিদে মানুষই এখনও এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সার্ক অন্তর্ভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল এ শিল্পকর্মকে আধুনিক আবিষ্কারের কলাকৌশল ব্যবহার করে নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আসার প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। এ কাজে ভারত অনেকটা এগিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় কুমারের মৃৎপাত্র সৌন্দর্য্যের নান্দনিকতা নিয়ে ক্রেতাদের নজর কাড়তে সক্ষম। হাটি হাটি পা পা করে বাংলাদেশও চেষ্টা করছে। তবে একেবারে পিছিয়ে পড়েছে পাথুরে হিমালয় কন্যা ভূটান।
মৃন্ময়পাত্র তৈয়ারীর প্রাচীনতম। অথচ মহাভারতীয় অঞ্চলের নেপাল, ভূটান, আফগানিস্তান, পাঞ্জাব ও সিন্দু দেশে ৪হাজার বছর আগেই এই মৃৎপাত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। সংগৃহীত