২০১৯সাল থেকে এ পর্যন্ত অস্থায়ী বাসস্থানে থাকার সময় ৫৫টি শিশু মারা গেছে গৃহহীন শিশুদের কাছে ক্ষমা চাইলেন মেয়র সাদিক খান |
গত এক বছরে লণ্ডন নগরে ১১,৯৯৩জন মনুষ্য সন্তানকে
খোলা রাস্তায় বিনিদ্র রজনী কাটাতে হয়েছে।
এটি দুঃখজনক হলেও সত্য যে, “লন্ডনের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে গড়ে অন্তত একজন শিশু আছে যারা অস্থায়ী বাসস্থানে বাস করে”। লন্ডন মেয়র সাদিক খান গৃহহীন শিশুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন যারা বড়দিনে “অনুপযুক্ত” অস্থায়ী বাসস্থানে কাটাবে। এটিকে “কেলেঙ্কারি” হিসাবে বর্ণনা করেছেন অনেকে। ম্যাগাজিন বিগ ইস্যু‘র পক্ষ থেকে মেয়র সাদিক খানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বর্তমানে লন্ডন জুড়ে অস্থায়ী বাসস্থানে ৯০,০০০ অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কী বলবেন? মেয়রের সহজ উত্তর- “আমি দুঃখিত।” “২০২৪ সালে লন্ডনের মতো একটি সভ্য শহরে, যুক্তরাজ্যের মতো একটি সভ্য দেশে কোনো শিশুর অস্থায়ী আবাসে থাকা উচিত নয়। এটি আমাকে দুঃখ দেয় যখন আমাকে বলা হয় যে লন্ডনের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে, গড়ে অন্তত একজনশিশু আছে যে অস্থায়ী বাসস্থানে বসবাস করছে। বর্তমানে ১,৮৩,০০০ এরও বেশি লন্ডনবাসীকে ৯০,০০০ শিশু সহ এ ধরনের আবাসন ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে। এই নজিরবিহীন সংকটের জন্য লন্ডন বরোগুলিকে দৈনিক £৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করতে হচ্ছে। এদিকে, রাস্তায় গৃহহীনতা বাড়ছেই। এপ্রিল ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ এর মধ্যে লন্ডনে রেকর্ড সংখ্যক ১১,৯৯৩ জন লোক রাস্তায় বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে।
মঙ্গলবার(২৯ অক্টোবর) লন্ডন মেয়র সাদিক খান রাজধানীতে গৃহহীনতা নিয়ে আলোচনার জন্য জরুরি গোলটেবিল বৈঠক করেন। শীর্ষ এই গোল টেবিল বৈঠকে গৃহহীনতা সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং যাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে তারাই এতে অংশ নেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আবাসন মন্ত্রী রুশনারা আলী এমপি ও এবিষয়ে অভিজ্ঞজনেরা। মেয়র হাউজিং সমস্যা নিরসনে রাজধানী জুড়ে ৩,৫০০ হাউজিং নির্মানের লক্ষ্যে £৪.৮ মিলিয়ন বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যা কি-না ২০২৪ সালের একটি ইশতেহারের অঙ্গীকারের অংশ ছিল যেখানে বলা হয়েছিল ২০৩০ সালের মধ্যে লন্ডনে যাতে কারো রাস্থায় রাত যাপন করতে নাহয়। “তবে বাস্তবতা হলো লন্ডনে এবং সারা দেশে আবাসন সমস্যার কারনে পরিস্থিতি ভাল হওয়ার চেয়ে আরও খারাপ হতে পারে।” মেয়র এবং কেন্দ্রীয় শ্রম সরকার উভয়ই গৃহহীনতা সংকটের জন্য রক্ষণশীলদের দায়ী করেছেন, পর্যাপ্ত সামাজিক আবাসন নির্মাণে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন- ২০২২-২৩ মধ্যে, মাত্র ৯৪,০০০ নতুন সামাজিক বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে, রাইট টু বাই এর মাধ্যমে ২১২,০০০ টিরও বেশি বিক্রি হয়েছে এবং আরও ৫৮,০০০ ধ্বংস করা হয়েছে।
মেয়র সাদিক খান জানান ফলাফল হল অস্থায়ী বাসস্থানের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। আমি এমন পরিবারের সাথে দেখা করেছি যারা ১৪ বছর ধরে অস্থায়ী বাসস্থানে রয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যের পরিণতি গুরুতর হতে পারে। ২০১৯ সাল থেকে অস্থায়ী বাসস্থানে থাকার সময় মোট ৫৫টি শিশু মারা গেছে। সাদিক খান ২০৩০ সালের মধ্যে লন্ডনে আরও ৪০,০০০ কাউন্সিল বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এই প্রতিশ্রুতি জাতীয় সরকারের কাছ থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অর্থায়নের উপর নির্ভরশীল হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে কিয়ার স্টারমারের সরকার শরৎ বাজেটে নতুন সামাজিক আবাসনের জন্য অতিরিক্ত £৫০০মিলিয়ন বরাদ্দ করেছে। ট্রেজারি বলেছে যে এটি আবাসন সরবরাহে মোট বিনিয়োগ £৫বিলিয়ন এ নিয়ে আসবে।
মন্ত্রী রুশনারা আলী বৈঠকে মেয়রকে আশ্বস্থ করে বলেছেন যে সরকার এ “সেক্টরের সাথে কাজ করতে” প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। “আমি অবশ্যই জানি, তহবিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং তাৎক্ষণিক তহবিল চাপ এবং তহবিল নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন রয়েছে”। “আপনাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না, আপনি চ্যান্সেলরের কাছ থেকে জানতে পারবেন…আমরা জানি আপনার অর্থায়নের নিশ্চয়তা প্রয়োজন।”চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং বিগ ইস্যু অ্যাম্বাসেডর লরনা টাকার-ম্যাকগারভে, যিনি কিশোর বয়সে ১৮ মাস লন্ডনের রাস্তায় ঘুমিয়েছিলেন, গোলটেবিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন “আপনার অর্থ বিজ্ঞতার সাথে ব্যয় করুন, সেক্টরের লোকদের সাথে কথা বলুন, জীবিত অভিজ্ঞদের সাথে কথা বলুন। তবেই আপনি গৃহহীনতা দূর করতে পারেন।”