হারুনূর রশীদ।।
লিখতে বসে ভাবছিলাম কি বিষয় নিয়ে লিখবো। যদিও দেশে বা বিদেশে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীতে লেখার বিষয়বস্তুর অভাব নেই। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবাসন শেষ পর্যন্ত স্থগীত হয়ে গেছে শুনতে পেলাম। শিক্ষক গবেষক আফসান চৌধুরী টিভি আলাপে এসে এই বাণীই আমাদের শুনালেন।
গত ২৩শে জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ভাঙ্গচুর ও ভিসিকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের চেষ্টা, পক্ষান্তরে ভিসি কর্তৃক পুলিশ না ডেকে একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে ডেকে নিয়ে আসা এ দু’টো ঘটনাই অগ্রহনযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলেছে এমন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী দ্বারা সংগঠিত হয়েছে বলে তারা মনে করেন না। তাদের এ কথাও অগ্রহনযোগ্য। তবে ঘটনাটি যে মহা উদ্বেগের বিষয় তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
হকার উচ্ছেদ নিয়ে নারায়নগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি রহমানের উপর খুনের উদ্দেশ্যে হামলা, মামলা নিতে পুলিশের অস্বীকৃতি এবং এখন আইভি রহমানের আজমীর জেয়ারত, রাজনৈতিক মহলে যখন বেশ সুরস আলোচনার বিষয়। এ অবস্থায়ই সরকার দল যখন নির্বাচনী প্রচারণা, ঘোষণা দিয়ে শুরু করেছেন, তখন কোন বিরুধীপক্ষকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এ সবকিছুই ন্যায্যভাবে আলোচনার বিষয়।
এতোসব ঘটনার পাশাপাশি গত ৩০শে জানুয়ারী জিয়া স্বেচ্ছাসেবা ট্রাষ্ট মামলার শুনানী শেষে বেগম জিয়ার ফেরার পথে কয়েদীগাড়ীতে আক্রমণ চালিয়ে নেতা ছিনিয়ে নেয়া রীতিমত ভয়ানক এক ঘটনা। কোন ঘটনা নিয়ে লিখবো মনোস্থির করা অনেকটা কঠিন।
অবশ্য বিরুধীপক্ষ হিসেবে বিএনপি নিজেদের বুঝাতে চাইলেও বস্তুতঃ তারা বিরুধীপক্ষ নন। প্রধানতঃ দু’টি কারনেই তাদের বিরুধীর কাতারে দেখা সঠিক হয় না।
প্রথম কারণ বিগত নির্বাচনে তারা অংশ নেননি। সুতরাং নিয়ম ও আইন মোতাবেক তাদের বিরুধী দাবী করার সুযোগ নেই। দ্বিতীয় কারণ তারা এখনও প্রকাশ্য স্বাধীনতা বিরুধী শক্তি মৌলবাদী জামাতকে নিয়ে রাজনৈতিক জোটে আছেন অর্থাৎ তারা দ্বিজাতি তত্ত্বভিত্তিক পাকিস্তানী নমুনার একটি দেশের মতবাদে বিশ্বাসী। যে মতবাদের ফসল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৯মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাঙ্গালীরা একজাতিতত্ত্বভিত্তিক ধর্মসাম্য বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। ন্যায় ও আইনের এ বিবেচনায় এদেশে, রাজনীতির কোন অধিকারই তাদের নেই। কেবলমাত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী পুঁজি মালিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের রাজনীতির উপর কোন নিষেধাজ্ঞা করতে সরকার সাহসী হচ্ছে না।
এমনি এক ধূসর অন্ধকারাচ্ছন্ন হতাশাব্যঞ্জক অবস্থার মাঝে পড়ে আমার মনোজগৎ যখন চিন্তাজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার উপক্রম ঠিক তখনই মোহাম্মদ আসকর আলীর ফেইচবুক থেকে পাওয়া মোহাম্মদ আব্দুল হান্নানের “আমি একেলা” কবিতাটি পড়লাম। কবিতাটি কোন উচ্চমার্গীয় মনোন্মাদনা জাগানো ছন্দের যাদুকরি কিছু নয়। তবে জীবনের কঠিন বাস্তবতার নিষ্ঠুর সত্যতা ফুটে উঠেছে প্রতিটি ছত্রে ছত্রে। কবিতা পড়ে মনে হয়েছে আব্দুল হান্নান কোন পেশাজীবী কবি নন। তার এ কবিতা, কবি হয়ে উঠার কোন কাব্যচর্চ্চা নয়। নিজের জীবনের নিঠুর কঠিন সত্যটাকে তিনি তুলে ধরেছেন। বিশুদ্ধ মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ তার কোমল হৃদয়ে জীবনের বাস্তবতা এমনই ক্ষতের সৃষ্টি করেছে যে তাকে কাব্যিক ছন্দে লিখার প্রেরণা যুগিয়েছে।
আব্দুল হান্নানের এ কবিতা তার নির্মম কঠিন জীবনালেখ্যই শুধু নয়, তার অগোছালো এ কবিতাখানি অসংখ্য দেশত্যাগী প্রবাসীর মনোযন্ত্রনায় ক্ষত-বিক্ষত জীবন গাঁথা। যদিও কবিতায় ছন্দের কোন যাদুকরি নেই, কিন্তু যা আছে তা যে কতটা নির্মম কঠিন সত্য তা প্রতিজন প্রবাসী অন্তর দিয়ে উপলব্দি করতে পারেন। যেকোন পাঠকমনে দাগকাটতে সক্ষম তার কয়েকটি শব্দ ব্যবহারের ছন্দময়তা ও ছন্দমাধুর্য্যময় বর্ননা। তিনি লিখেছেন-
“ক্ষীনকায় ভ্রাতুস্পুত্র মলিন বেশে দুর্বল অসহায়,
মোর পানে চেয়ে আশা নিয়ে বসে আছে ঠায়…”