হারুনূর রশীদ
রসিকতা সব সময়ই মনোহারী। বিনোদবিহারে রসিকতা রাজন্যবিলাস। কোথায় কোন যাত্রা পালায় মনে হয় শুনেছিলাম- রাজন যখন চলেন পথে, রসিক থাকে তার পিছু। নিষ্কলুস রস পরিবেশনা, বিনোদন দিয়ে থাকে নিশ্চিতভাবে আমরা জানি। রসিকতা শব্দটাই এক ধরনের হাস্যরসের সৃষ্টি করে। এই রসিকতা শব্দের সাথে কিছু কিছু কর্ম যোগ হলে রসনা তৃপ্ত হয় পেটে খিলধরা হাস্যরোলের অন্তে। যেমন আছে ভোজন রসিক!
এই ভোজন রসিক নিয়ে জীবনের এক ছোট্ট ঘটনা এখানে বলে দিলে সুদীর্ঘকাল ধরে বয়ে বেড়ানো কাহিনীর বোঝা কিছুটা হাল্কা হবে বলেই মনে করি। সে মহাবিদ্যালয়ে পড়ার প্রথম জীবনের ঘটনা। আমাদের এক স্কুল পড়ুয়া বন্ধু তার বোনের বিয়ে খেতে দাওয়াত করলো। আমাদের ওই বন্ধুটির বাবার আর্থিক দৈণ্যতার কারণে এসএসসি পাশের পর তার পড়া-লেখা কপাল থেকে খসে পড়ে। অসুস্থ বৃদ্ধ বাবার সংসারের হাল ধরতে তাকে শহরে সব্জি বিক্রেতার কাজ নিতে হয়। বহু শ্রমের বিনিময়ে কিছু অর্থ উপার্জনের পর একদিন বোনের বিয়ে ঠিক করে। একমাত্র বোন তাই আমরা ঘনিষ্ট ৪বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করে। নিরীহ গরীব হলে কি হবে, খুবই কাছের বন্ধুতো, তাই দাওয়াত না দিয়ে পারেনি। আমরাও সাধ্যের বাইরে গিয়ে ছোট্ট বোনের বিয়েতে যে যা পারি উপহার নিয়ে হাজির হলাম।
খেতে বসে দেখি জনা বিশেক মানুষ বসে খাচ্ছি। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, খুব বেশী করে দাওয়াত করেনি। আরো হয়তো বিশ-পঁচিশ জন আসবে। খুব কৃচ্ছতার মধ্য দিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলেই তার দায়ীত্ব শেষ হয়। কন্যাদায়গ্রস্থ থেকে পিতৃউদ্ধার হয়। এ সময়ে এটিই তার একমাত্র নৈতিক দায়ীত্ব বটে। আমরা খেতে বসলাম। খেতে গিয়ে রসিকতা করে ওকে আরো কিছু মাংস দিতে বলি। এভাবে দু’এক দফা দেয়ার পর তৃতীয় দফায় কিছু বলার আগেই আমাদের বন্ধুটি এসে কানে কানে আমাদের অনুরোধ জানায় রসনা সংযত করার জন্য। কারণ তার আয়োজন সামান্য। আমরা এভাবে লাগামছাড়া খেলে ওর বারোটা বেজে যাবে। সে অনেকটা কাঁদো কাঁদো হয়ে আমাদের বললো, ভাই তোদের নিমন্ত্রণ করে আমি ভুল করেছি। আর কখনও এমন ভুল অন্য কাউকে করতে মানা করবো। এবার তোরা কান্ত দে।
আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের রসিকতা তার জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। সাথে সাথে আমরা খাওয়া শেষ করে উঠে পরি। এক সময় বন্ধুটিকে ডেকে এনে আমরা বললাম, আরো বিশ পঁচিশ জনের খাবার পাকের প্রয়োজন হলে আমরা টাকা দিচ্ছি তুমি উঁনুন চড়িয়ে দাও। উত্তরে বন্ধুটি বললো, না তোদের আর দক্ষিনা দিতে হবে না। আরো দশজনের খাবার পাকে দিয়েছি। দয়াকরে তোরা উঠে পড়েছিস, সেইতো তোদের আশীর্বাদ! ওতেই আমাদের হয়ে যাবে।
আমাদের কাছে যা সামান্য রসিকতা, অন্যের জন্য এই ছোট্ট রসিকতা বিষময় ফল নিয়ে আসতে পারে। যা হতে বসেছিল আমাদের ওই বন্ধুটির বোনের বিয়েতে। রসিকতার সেই বাস্তব ঘটনার অভিজ্ঞতা আমার কোন দিন বিস্মৃত হবার নয়। যদিও অনেকটাই লজ্জাজনক তবুও আমাদের এমনতরো রসিকতা অনেকটা সহনীয় ছিল। আবার কিছু কিছু রসিকতা রয়েছে যার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। অদ্ভুত সে সব রসিকতা! কোন কোন সময় বিপর্যয়েরও হুমকি থাকে।
তেমনি নির্বাক হওয়ার মত এক বেরসিক ছবি পাঠিয়েছেন আমার বহুল পরিচিত এক আওয়ামীলীগ নেতা আমেরিকা থেকে। ছাত্র জমানায় তিনি স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। খুবই শান্ত ভদ্র চরিত্রের সেই রাজনীতিক জনাব মোহাম্মদ বাসিত আমেরিকার বোষ্টন থেকে, রসিকতা করতে গিয়ে যে ছবি পাঠিয়েছেন তা দেখে হতবাক না হয়ে উপায় নেই। শুধু কি ছবি! এর সাথে ছোট্ট কয়েক লাইনের একটি ছড়াও রয়েছে। পাঠক সুবিধার্থে ফেইচবুকের সেই ‘পোষ্ট’টি নিচে তুলে দেয়া হলো।