রাষ্ট্রীয় সম্মাননা নিয়ে অন্তিম শয়ানে শায়িত হলেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ এনামুল হক। গতকাল ১৮ জুলাই মঙ্গলবার বাদ জোহর পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে এসেক্সের চিগওয়েলের গার্ডেন অফ পিস এ তাঁকে শেষ শয্যায় শায়িত করা হয়।
নামাজে জানাজার পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা শাহ এনামদের বীরত্ব ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শাহ এনামুল হককে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের পাঠানো রাষ্ট্রিয় শোকবার্তাটি পাঠ করেন ডেপুটি হাই কমিশনার মোহাম্মদ হযরত আলী খান।
শোকবার্তায় হাই কমিশনার মুনা তাসনিম বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব শাহ মোহাম্মদ এনামুল হক-এর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। জনাব শাহ এনাম নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও বাংলাদেশে এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি-ব্রিটিশ কমিউনিটির মধ্যে ছিলেন একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। ব্রিটেনের দীর্ঘ প্রবাস জীবনে বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতি একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো এবং প্রবাসী বাংলাদেশী-ব্রিটিশ ভাই ও বোনেরা একজন দেশ প্রেমিক প্রগতিশীল অভিভাবককে হারালো। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করার জন্য বাঙ্গালি জাতি তাঁকে চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।’
হাই কমিশনারের শোকবার্তা পাঠের পর তা প্রয়াত শাহ এনামের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন ডেপুটি হাই কমিশনার মোহাম্মদ হযরত আলী খান। রাষ্ট্রীয় শোকের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মুক্তিযোদ্ধা শাহ এনামুল হকের প্রতি শেষ স্যালুট জানান তাঁর রনাঙ্গনের সহযোদ্ধা বর্তমানে ব্রিটেন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ। মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খাঁনের নেতৃত্বে প্রদত্ত এই স্যালুট প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন আবুল কাশেম খান, আব্দুর রহমান, লোকমান হোসেইন, আবু মুসা হাসান, আব্দুর রহিম, আব্দুল মান্নান, আব্দুল মালিক, এনামুল হক, সৈয়দ গোলাম আলী, ইকরামুল হক মিন্ঠু, আশরাফ উদ্দিন ভূইয়া, ইন্জিনিয়ার মিফতা উল ইসলাম, আমির খান ও মাহমুদ হাসান এমবিই প্রমূখ।
শেষ শ্রদ্ধার আনুষ্ঠানিকতা শেষে ব্রিকলেন জামে মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রয়াত শাহ এনামের নামাজে জানাজা। জানাজায় প্রয়াত এনামের দুই পুত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জানাজার নামাজ শেষে শাহ এনামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চিগওয়েলের ‘গার্ডেন অফ পিস এ’ এবং সেখানেই চীরনিদ্রায় শায়িত করা হয় বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই বীর যোদ্ধাকে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা শাহ এনাম গেল ১৪ জুলাই শুক্রবার সকাল ৯ টায় লন্ডনের সেন্ট বার্থ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। ১৯৫৩ সালে বগুড়ার শেরপুরে জন্ম গ্রহন করেন শাহ এনাম। তাদের আদি নিবাস একই জেলার সারিয়াকান্দিতে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শাহ এনাম মাত্র ১৮ বছর বয়সে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সম্মুখ সমরে ফুসফুসে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি আহত হন। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাহত এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতা মার্শাল জোসেফ টিটুর সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় পাঠান। চিকিৎসা শেষে তিনি লন্ডনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। শাহ এনাম ব্রিটেনে নাট্য এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন। মৃত্যুকালে শাহ এনাম স্ত্রী, দুই ছেলে, এক নাতি, এক নাতনি এবং বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।