রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মেলন
ন্যায্য ভাড়ার তালিকা, স্থায়ী স্ট্যান্ড প্রদান ও
ব্যাটারি চালিত ‘রিকশা উচ্ছেদ’ বন্ধের দাবি
ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ এবং দ্রব্যমূল্য কমানো, বর্তমান বাজারদরের সমন্বয় করে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ঐক্যবব্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান করেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কালেঙ্গায় রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন।
গত শুক্রবার(২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কালেঙ্গা এলাকায় মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির ২য় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুস শহীদ সাগ্নিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস।
এছাড়াও সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক রমজান আলী পটু, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুহেল মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা, রিকশা শ্রমিকনেতা দুলাল মিয়া, আশরাফুল আলম খোকন, খোকন মিয়া, ইদ্রিস মিয়া প্রমূখ।
সম্মেলনে মো. গিয়াস উদ্দিনকে সভাপতি ও মো. ইদ্রিস মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস। সম্মেলন উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল কালেঙ্গা বাজার প্রদক্ষিণ করে।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। রিকশা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে ভিটেমাটি হারিয়ে জীবিকার তাগিদে শহরে এসে বাধ্য হয়ে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে জীবন ও জীবিকা রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। তার উপর এরকম সময়ে শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ তৎপরতা শ্রমিকদের আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, কখনো বিদ্যুত অপচয়, কখনো দুর্ঘটনাসহ নানা অজুহাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ চালানো হয়। অথচ খোদ সরকারের বিআরটির প্রতিবেদনে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র হতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। এছাড়াও প্রতিবেদনে মোট সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা হারে ব্যাটারিচালিত সেপ্টেম্বরে ২.২৩ শতাংশ এবং অক্টোবরে ২.৫৪ শতাংশ উল্লেখ করা হয়।
বক্তারা আরও বলেন, সম্প্রতি ব্যাপকভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান ধরপাকড় চলছে এবং যখন-তখন ২,০৮০/- টাকা জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। একদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অবৈধ বলা হচ্ছে আবার অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত এসকল রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক বিক্রিতে কোন বাঁধা নেই, এমন কি এখনও শোরূম খোলে এসব পরিবহণ বিক্রি হচ্ছে।
সম্মেলন থেকে শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ, বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ, যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন, রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানানো হয়।