লন্ডন: বৃহস্পতিবার, ২২শে অগ্রহায়ণ ১৪২৩।। বিবিসি’র খবর বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ২১হাজার রোহিঙ্গা। গেল দু’মাস ওই অঞ্চলে কোন সাংবাদিক বা সাহায্য সংস্থাকে যেতে দেয়া হয়নি। একটি পোড়াবাড়ীসহ গোটা গ্রামের ছবিও প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এখন ওখানে আর কেউ নেই, আছে শুধু ব্রহ্মদেশের সিপাহিরা, পোড়া বাড়ী পাহাড়া দিচ্ছে! মিয়ানমারের(ব্রহ্মদেশ) রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান এই রোহিঙ্গাদের ওপর ব্রহ্মদেশের নির্যাতন এখন অনেক সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম।
কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমরা জানি খুবই কম। এমন একটি প্রশ্নের অবতারণা করে বিবিসি বাংলা খুবই সংক্ষেপে এন এম হাবিবুল্লাহ লিখিত “রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস” থেকে প্রায় ভুলে যাওয়া কিছু মজার তুথ্য প্রকাশ করেছে।
রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি আরাকান ছিল স্বাধীন রাজ্য। ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা বোডপায়া এটি দখল করে বার্মার অধীন করদ রাজ্যে পরিণত করেন। আরাকান রাজ্যের রাজা বৌদ্ধ হলেও তিনি মুসলমান উপাধি গ্রহণ করতেন। তার মুদ্রাতে ফার্সি ভাষায় লেখা থাকতো কালেমা। আর আরাকান রাজ দরবারে কাজ করতেন অনেক বাঙালি মুসলমান।
বাংলার সাথে আরাকানের ছিল গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক। ধারণা করা হয়, রোহিঙ্গা নামটি এসেছে আরাকানের রাজধানীর নাম ম্রোহং থেকে: ম্রোহং>রোয়াং>রোয়াইঙ্গিয়া>রোহিঙ্গা। তবে মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যে আরাকানকে ডাকা হতো রোসাং নামে। ১৪০৬ সালে আরাকানের ম্রাউক-উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নরমিখলা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বাংলার তৎকালীন রাজধানী গৌড়ে পলায়ন করেন। গৌড়ের শাসক জালালুদ্দিন শাহ্ নরমিখলার সাহায্যে ৩০ হাজার সৈন্য পাঠিয়ে বর্মী রাজাকে উৎখাতে সহায়তা করেন। নরমিখলা, মোহাম্মদ সোলায়মান শাহ্ নাম নিয়ে আরাকানের সিংহাসনে বসেন। ম্রাউক-উ রাজবংশ ১০০ বছর আরাকান শাসন করেছে।
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যচর্চ্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল রোসাং রাজ দরবার। মহাকবি আলাওল রোসাং দরবারের রাজ কবি ছিলেন। তিনি লিখেছিলেন মহাকাব্য পদ্মাবতী। এছাড়া সতী ময়না ও লোর-চন্দ্রানী, সয়ফুল মুলক, জঙ্গনামা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ রচিত হয়েছিল রোসাং রাজদরবারের আনুকূল্যে। ভাই আওরঙ্গজেবের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়ে মোগল যুবরাজ শাহ্ সুজা ১৬৬০ সালে সড়ক পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হয়ে আরাকানে পলায়ন করেন। তৎকালীন রোসাং রাজা চন্দ্র সুধর্মা বিশ্বাসঘাতকতা করে শাহ্ সুজা এবং তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এর পর আরাকানে যে দীর্ঘমেয়াদী অরাজকতা সৃষ্টি হয় তার অবসান ঘটে বার্মার হাতে আরাকানের স্বাধীনতা হরণের মধ্য দিয়ে। এই হল সংক্ষেপে রোহিঙ্গা আর আরাকানের ইতিহাস। ব্রহ্মদেশ, আরাকানের উপর জবরদস্তিমূলক দখলদারি করে যাচ্ছে যুগের পর যুগ।