চা-শ্রমিক সংঘের সভায় বক্তারা
দুর্গাপূজায় ন্যায্য বোনাস প্রদানসহ
বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরির দাবি
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে চা-শ্রমিকদের পূর্ণ উৎসবভাতা এবং বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি প্রদানের দাবি জানিয়েছে চা-শ্রমিক সংঘ। গত রোববার(২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরস্থ কার্যালয়ে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।
চা-শ্রমিক সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মধু রজকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল অলমিক, সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরা, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুভাষ গৌড়, সাংগঠনিক সম্পাদক নারী চা-শ্রমিক নেত্রী লক্ষীমনি বাক্তি, দপ্তর সম্পাদক রামনারায়ন গৌড়, প্রচার সম্পাদক কাজল হাজরা, সদস্য সুনীল কর, সবুজ বাউরী, নারায়ন গোড়াইত, ভারতী মৃধা প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে। কিন্তু এবছর এখনো অনেক বাগানের চা-শ্রমিকরা উৎসব বোনাস পাননি। আবার কিছু কিছু বাগানে উৎসব বোনাস প্রদান করা হলেও পূর্ণ উৎসব বোনাস প্রদান করা হয়নি। কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, দেওছড়া, ডবলছড়া, চাতলাপুরসহ বিভিন্ন বাগানে উৎসব বোনাসের পরিবর্তে কর্মে উপস্থিতির উপর হাজিরা/উৎসাহ বোনাস প্রদান করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দুর্গাপূজায় বোনাস প্রদানের জন্য চা-বাগানগুলো সরকারের নিকট থেকে বিশেষ ঋণ সুবিধা আদায় করেও ন্যায্য বোনাস প্রদান করেননি।
![]() |
অথচ বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ (অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ২(২ক) ধারা এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধিমালা-২০১৫ এর ১১১(৫) বিধি অনুযায়ী যে কোন শিল্পে একই কাজে কর্মরত সকল শ্রমিককে সমান হারে উৎসব বোনাস প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমন কি ২০২৩ সালের ১০ আগষ্ট চা-শিল্প সেক্টরে নি¤œতম মজুরির গেজেটে (এসআরও নং ২৪৬-আইন/২০২৩) অনুযায়ী উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকের হারে প্রদান করার আইন আছে।
চা-বাগান কর্তৃপক্ষ এসকল লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছেন। তাছাড়া ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের আইন ও চুক্তি অনুযায়ী সমান মজুরি প্রদান করার বিষয় থাকলেও অধিকাংশ বাগানে ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের কম মজুরি প্রদান করা হয়। দুর্গা পূজার আর এক সপ্তাহ বাকি অথচ রাজনগর চা-বাগানের এখনো বোনাস প্রদান করা হয়নি, এমন কি তাদের তিন সপ্তাহের বকেয়া মজুরিও পরিশোধ করা হয়নি।
চা-শ্রমিক সংঘের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির পরও গত ৭ আগষ্ট চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বাংলাদেশীয় চা-সংসদের মজুরি বৃদ্ধি ছাড়াই ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের মজুরি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা চা-শিল্পের ইতিহাসে নজিরবিহীন। নির্ধারিত মেয়াদের ৭ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর শ্রমিকস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে চুক্তি করে কথিত নেতারা অতীতের ধারায় মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। চা-শ্রমিকরা বংশ পরস্পরায় প্রায় ২০০ বছর যাবত চা-বাগানে বসবাস করে বনের বাঘ-ভাল্লুক, সাপ-জোঁকসহ হিংস্র জীবজন্তুকে মোকাবেলা করে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে চা-শিল্পকে আজকের এই অবস্থানে (চা-উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯ম) নিয়ে এসেছেন। অথচ ২০০ বছর পরও চা-শ্রমিকদের মজুরি ২০০ টাকা হয়নি।
বর্তমান অগ্নিমূল্যের বাজারে চা-শ্রমিকদের মজুরি (সম্প্রতি ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রদানের পর) সর্বোচ্চ ‘এ’ ক্লাস বাগানে দৈনিক ১৮৭.৪৩ টাকা এবং ‘বি’ ও ‘সি’ ক্লাস যথাক্রমে ১৮৬.৩২ টাকা এবং ১৮৫.২২ টাকা। বাংলাদেশে শিল্প সেক্টরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পেয়ে থাকেন চা-শ্রমিকরা। সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত ৪৩ টি সেক্টরে এবং মজুরি কমিশন ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প সেক্টরের মজুরির সাথে তুলনা করলে চা-শ্রমিকদের মজুরি কম। প্রতিবেশি চা উৎপাদনকারী দেশসমূহের শ্রমিকদের মজুরির সাথে তুলনা করলেও আমাদের দেশের চা-শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। প্রতিবেশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিকরা ২৫০ রুপি (৩৫০ টাকা), সিকিম রাজ্যে ৫০০ রুপি (৭০০ টাকা), শ্রীলঙ্কায় চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১৭০০ রুপি (৬৮০ টাকা), নেপালে চা-শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৫০০০ রুপি (১৩,০৫০ টাকা) পায়। এই সকল দেশেও চা-শ্রমিকরা মজুরিসহ সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধির দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে।
বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে একজন শ্রমিকের দৈনিক পরিশ্রমের পর পরবর্তী দিন কাজে যোগদানের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়োজনে দৈনিক তিন বেলা সাধারণভাবে আহারের জন্য ২৫০/- (৫০+১০০+১০০) টাকা দিলেও পেট ভরে না। তাই বর্তমান বাজারদরে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ মা-বাবাকে নিয়ে ৬ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য দৈনিক ন্যূনতম ১,০০০/- টাকা দরকার। বাংলাদেশে ক্রিয়াশীয় জাতীয় শ্রমিক সংগঠনসমূহ জাতীয় ন্যূনতম মূল মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। তাই সামাগ্রিক বিচারে বর্তমান বাজারদর, মূল্যস্ফীতি, সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো, মজুরি কমিশন ঘোষিত মজুরি, দেশের অপরাপর সেক্টরের শ্রমিকদের মজুরি এবং প্রতিবেশী নয়াঔপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ চা উৎপাদনকারী দেশের শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরি পর্যালোচনা করে ৬ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের খরচ হিসাব করে বাঁচার মত মজুরি ও বার্ষিক ১৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রদান করাসহ চা-শ্রমিক সংঘের ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য দাবি জানান হয়।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মতবিনিময় সভা
সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে
দুর্গোৎসব সম্পন্ন করা সম্ভব -পুলিশ সুপার
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম-সেবা বলেছেন, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হতে পারে, তাই কোনো গুজবে প্রভাবিত না হয়ে পুলিশকে জানাতে হবে। তিনি আরও বলেন, সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করা সম্ভব। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক সাহসিকতার সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে আনন্দঘন পরিবেশে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করতে পারেন সে ব্যাপারে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। নিরাপত্তার ব্যাপারে কখনও ছাড় দেওয়া হবে না। সবাই তৎপর থাকলে দুষ্কৃতিকারীরা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এ বাংলাদেশ আপনার আমার সকলের। সবাই এ দেশের নাগরিক। সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। নিজেদের কখনো সংখ্যালঘু ভাববেন না। নির্ভয়ে আপনারা শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করবেন।
গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪২টি সার্বজনীন ও ১১টি ব্যক্তিগত দুর্গাপুজা মন্ডপ কমিটি, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্ট, রাজনৈতিক নেতবৃৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত শরাদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কমলগঞ্জ থানা পুলিশের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।
![]() |
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মো: মাহফুজুল কবিরের সভাপতিত্বে ও উপ-পরিদর্শক আমীর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা বেগম শামসুন্নাহার, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বাবু, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ মো: মাসুক মিয়া, জেলা এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামায়েল রহমান, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক পুষ্প কুমার কানু। অন্যানের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জালাল আহমদ, ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা শিপ্রাংশু পাল, সজল কৈরী, রাজু দত্ত, মন্ডপ কমিটির নেতা লিটন দত্ত, অনিরুদ্র প্রসাদ রায় চৌধুরী, বিজিত দেবনাথ, নিখিল কুমার সিংহ, দেবাশীষ মল্লিক, বিধান দেবনাথ, অজিত মালাকার, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতা সুমন দে, অপূর্ব নারায়ণ, প্রত্যুষ সিংহ প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন পূজামন্ডপের প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ থানার নবাগত ওসি (তদন্ত) মো: গোলাম মোস্তফা, শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো: ওবায়দুল হকসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
![]() |
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বাজার এলাকায় বিশেষ অভিযানে ৪০ বোতল ফেন্সিডিলসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই (নিঃ) প্রাণেশ রঞ্জন দাসের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. সিরাজ মোল্যা (৩৬)। সে গোপালগঞ্জ জেলার গোপীনাথপুর উত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করে তার হাতে থাকা কালো ব্যাগ তল্লাশি করে ৪০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, ফেন্সিডিলের বোতলগুলো কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছিল।
কমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) ওবায়দুল রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় আটককৃত মো. সিরাজ মোল্যা ও পলাতক একজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।