মৌলভীবাজার সংবাদদাতা।। বেতের তৈরী বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ পাইকারী হারে হাজার হাজার বাঁশ বিক্রি, এ দু’টি খাতের চমকে বহুকাল থেকেই ক্রেতাদের নজর কেড়েছে কালার বাজার। নামের বয়ান থেকে মনে হবে কালা নামের কেউ হয়তো এ বাজারটি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এলাকার কেউই ঠিকঠাক করে বলতে পারেন না নামটির উৎপত্তি কোথা থেকে। যারা কিছু পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছেন তারা শুধু বলেন, শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এ বাজার শত বর্ষের পুরোনো। এতোটুকুই! এর বেশী কিছু বলতে পারেন না।
কুশিয়ারা নদীতীরে অবস্থিত এ বাজারে দীর্ঘকয়েক যুগ ধরে উজানের পাহাড় থেকে আসা বাঁশ পাইকারী দরে কিনে নদীপথে নিয়ে যান ভাটি অঞ্চলের মানুষেরা। পাশ্ববর্তী বালাগঞ্জ ও কালীগঞ্জ বাজার থেকে আসা পাইকারেরা বাঁশ, বাঁশ বেতের তৈরী টুকরি, খলই , ধুচইন, হুপা, লাঙ্গল, জোয়াল, বেতের পাটিসহ নানা উপকরণ ক্রয় করে তাদের বাড়ীর কাছের বাজারগুলোতে খুচরা দরে বিক্রি করেন। প্রতি শুক্র ও সোমবার বসা হাটে উপজেলার উত্তর ভাগ, ফতেহপুর, মুন্সিবাজার ও সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গৌরিপুর ও বালাগঞ্জ সদর থেকে শত শত ক্রেতাবিক্রেতা এসে জড়ো হন এই বাজারে।
আবহমান বাংলার কুটিরশিল্পের এক অনন্য ঐতিহ্য রঙিন বেতের বুননে তৈরি শীতলপাটি। গ্রামবাংলার কারও ঘরে অতিথি এলে মাদুর বিছিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ বাংলার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যে উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ। বঙ্গের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ঐতিহ্য শীতলপাটি বিছিয়ে দিয়ে অতিথির আপ্যায়ন। এমন রেওয়াজ হাজার বছরের পুরনো। তবে বর্তমান সময়ে ঐতিহ্যবাহী এসব কাজকে ধরে রাখা কঠিন থেকে কঠিণতর হয়ে দেখা দিচ্ছে। মূলধনের অভাব, ন্যায্যমূল্য, মুর্তা বেতের অভাব ও বাজারজাতকরণের সমস্যায় বিলুপ্তির পথে মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী এ বেতশিল্প। এই কালার বাজার একসময় মুখর থাকতো শীতল পাটীর বাজার হিসেবে। শুধু শীতলপাটী নয় এমনও সময় ছিল এই বাজারের নদীতীরে বিশাল ধানের হাট বসতো। সেসময় পাশের গ্রামগুলো থেকে নদী পথে ছোট ছোট নৌকা ও সড়ক পথে ঘোড়া দিয়ে বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে আসতো কৃষকেরা। পরবর্তীতে ক্রমাগত বাজারের এক পাশ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়াতে ধান বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এখনও যেটুকু আছে তাকে ধরে রাখা খুবই প্রয়োজন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই তা করতে হবে।
শীতলপাটীর বিষয়ে উত্তরভাগ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বেতের তৈরী আসবাবপত্র কারিগর মহেন্দ্র সরকার(৬৫) জানান, ৪০বছর ধরে বাজারে তিনি বেতের তৈরী আসবাবপত্র বিক্রি করে যাচ্ছেন। তিনি দুই হাটে ২-৩ হাজার টাকা বিক্রি করেন। টুকরি ৫০-৬০টাকা, কুলা ১৫০টাকা ও খলৈ ৬০টাকা দরে বিক্রি করেন। তার সাথে বাজারে বিক্রি করেন একই গ্রামের রতেন্দ্র সরকার, কুলেন্দ্র সরকার, উত্তরভাগ গ্রামের সজল সরকার, ইরেশ সরকার ও আমনপুর গ্রামের অরূপ বিশ্বাস। অরূপ বিশ্বাস জানান, তার পিসি(ফুফু) সুর্মিতা বিশ্বাস এসব বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ তৈরী করেন।
বাজারের উন্নয়ন ও শিল্পসমৃদ্ধ এসব কারিগর ও তাদের কাজকে টিকিয়ে রাখার অর্থই হলো ঐতিহাসিক অতীত ঐতিহ্যকে ধরে রাখার মধ্য দিয়ে এলাকার উন্নয়ন। আর এ কাজের পূর্বশর্ত হচ্ছে নদীর ভাঙ্গনরোধ ও শুদবিহীন ঋণদান কর্মসূচী গ্রহন করা।