বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের সুষ্টতা নিয়ে ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক কথা বলেছে। তারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ট গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চায়। সে কারণ সামনে রেখে আমেরিকা ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এর আগে চীনা, শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছিল। ফলে বাংলাদেশের সচেতন সকল মহলে ভারতকে নিয়ে গুঞ্জন চলে আসছিল যে ভারত বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তন দেখতে চায় কি-না। একটি কূটনৈতিক বার্তা এবার ভারতের অবস্থানকেও সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। ‘দৈনিক ষ্টার’সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে এমন খবরই প্রকাশিত হয়েছে।
ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত একজন লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ও ‘ডয়চে ভেলে’র বরাত দিয়ে ‘দৈনিক ষ্টার’ আরও লিখেছে যে, বাংলাদেশের জন্মের সময় থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বের ছিল এবং আছে। যখনই ভিন্ন কোনো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক ততটা বন্ধুত্বের থাকেনি। এতে করে ভারত সবসময়ই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে।’ উৎপল মনে করেন, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকার দেখতে চায় ভারত। কারণ, ভারত মনে করে আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকলে দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত থাকে।
প্রকাশিত এসকল খবর থেকে এটি স্পষ্টই বুঝা গেছে যে, ভারত মনেকরে জামাত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। এরকম সংগঠন বাংলাদেশে শক্তিশালী হয়ে উঠলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার সন্মুখীন হয়ে পড়বে। আর জামাতের মত দলের সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বলেই ভারত বুঝে এবং জানে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার দূর্বল হয়ে পড়লে তা ভারতের জন্য যেমন স্বস্তিদায়ক হবেনা তেমনি গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকার জন্যও সুখকর ফল নিয়ে আসবে না। আর এমন একটি বার্তাই আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে ভারত।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল দিল্লি ঘুরে যাওয়ার পরেই ভারত নিজেদের এ অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরলো। এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারতীয় প্রশাসনের আলোচনাও হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম থেকে আরও জানা গেছে।
অতি সম্প্রতি এক কূটনৈতিক নোটে ভারত এমন কথাই লিখেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। এখানেই শেষ নয়, শেখ হাসিনা সরকারের কথা উল্লেখ করে ভারত বলেছে যে ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কারোর জন্যই মঙ্গলজনক নয় বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্বল হয়ে পড়া। ভারত মনে করে এতে করে জামায়াতের মতো সাম্প্রদায়ীক জঙ্গি সংগঠনের হাত শক্তিশালী হবে।
ভারত জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতও চায় বাংলাদেশে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে মন্তব্যগুলি করেছে তা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করে ভারত।
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে জি ২০-র বৈঠক শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেখানে আসবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং উপমহাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে সমান্তরাল বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। জি ২০-র এ মঞ্চ বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে বলেই সকলের ধারণা।