মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা চলাকালীন সময়ে প্রতিটি মন্ডপ এবং পুরো উপজেলায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কমলগঞ্জ উপজেলা আনসার ও ভিডিপি’র উদ্যোগে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার(১৯ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে এ ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিফিং প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন কমলগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন।
আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষক জাহেদ এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা শামসুন নাহার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়।
উল্লেখ্য, এবছর কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৬৩ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৪৬টি সার্বজনীন ও ১৭ টি ব্যক্তিগত মন্ডপ রয়েছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ২ হাজার পরিবারের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার(১৯ অক্টোবর) সকাল ৮টায় উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের মিরতিংগা চা বাগানে ইউপি সদস্য ধনা বাউরীর পারিবারিক উদ্যোগে নিজ বাড়িতে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সহস্রাধিক মানুষের মাঝে শাড়ী, ধুতি, শার্ট, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি বিতরণ করা হয়।
ইউপি সদস্য ধনা বাউরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল। মিরতিংগা চা বাগানের প্রাথমিক চিকিৎসক সঞ্জয় বাউরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, মিরতিংগা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল হায়াত ইমন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কুল চন্দ্র তাতী, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মন্টু অলমিক, আওয়ামীলীগ নেতা নরোত্তম বর্ধনসহ চা বাগানের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
ইউপি সদস্য ধনা বাউরী বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ২ হাজার মানুষের মাঝে শাড়ী, ধুতি, শার্ট, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি বিতরণ করেছি। আমাদের এ কার্যক্রম সবসময় অব্যাহত থাকবে। পুজার আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমাদের এ আয়োজন। পুজার উপহার পেয়ে সবার মুখে হাসি দেখেছি এতেই আমি খুশি। আমি ও আমার পরিবার সকলের আশীর্বাদ চাই।’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের ২৫টি পূজামণ্ডপে ১ বস্তা(৫০ কেজি) করে ডাল বিতরণ করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেমসাগর হাজরা। বুধবার দুপুর ১টায় কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগান পূজা মণ্ডপ, বেলা ২টায় আলীনগর চা বাগানের ১নং সার্ব্বজনীন পূজামণ্ডপে ও বিকাল ৩টায় মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগান পূজামণ্ডপে গিয়ে বিভিন্ন চা বাগান পূজামণ্ডপেগুলোর সভাপতি-সম্পাদকের হাতে এই শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন তিনি।
আলীনগর চা বাগানের ১নং সার্ব্বজনীন পূজামণ্ডপে প্রাঙ্গণে শুভেচ্ছা উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেমসাগর হাজরা, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন, আলীনগর ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সজল কৈরী, সাংবাদিক সালাহউদ্দিন শুভ প্রমুখ।
এ সময় শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেমসাগর হাজরা বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মহাপ্রসাদ তৈরীর জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল পূজামণ্ডপে ও কমলগঞ্জ উপজেলার চা বাগান অধ্যুষিত ২৫টি পূজামণ্ডপে ১বস্তা(৫০ কেজি) করে ডাল উপহার দিয়েছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সবার জীবনে শান্তির বার্তা নিয়ে আসুক। দেবী দুর্গার আশির্বাদে মঙ্গলময় হোক সকলের জীবন।
তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের পাশাপাশি সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান নারীরা। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিবার থেকে রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর নির্দেশনা মতে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা খাকলে আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে তাঁরা সেখানে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে চান।
গতকাল বুধবার (১৭অক্টোবর) মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ হল রুমে মৌলভীবাজার জেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের নারীরা এসব দাবি জানান। অনুষ্ঠানে অংশ নেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের নারী জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নারীরা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী সুইজারল্যান্ডের (এসডিসি) সহায়তায় ‘অপরাজিতা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ প্রকল্প।
মৌলভীবাজার সদও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিন রহমানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে জেলার ২০ জন নারী নেত্রীর পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় কিভাবে তাঁরা নিজেদের ‘অপরাজিতা’ নামে পরিচয় দিতে অভ্যস্থ হয়েছেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রিপ ট্রাস্ট প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী মো. নজরুল ইসলাম। প্রকল্প বিষয়ক আলোচনা করেন সিলেট এডভোকেসি ও নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী সঞ্জিত কুমার দেব।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার সদও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন চৌধুরী,স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকৌশলী মো: মোয়াজ্জেম হোসেন,সাংবাদিক নজরুল ইসলাম মুহিব।
বক্তারা বলেন, ‘তৃণমূল থেকে আজকে এখানে যে নারীরা এসেছেন সত্যিই তাঁরা অপরাজিতা,তাই যেভাবে আমরা এগিয়ে চলছি সেভাবে আরো সামনে এগিয়ে যাব।’ পুরুষরা যদি তাদের মানসিকতা পরিবর্তন না করে তাহলে বারবার আমাদের ধাক্কা খেতে হবে, অধিক পরিশ্রম ও কাজ করে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে।’
রাজনৈতিক ক্ষমতায়নটা চাচ্ছি যেন নীতিনির্ধারণী ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় নারীর সম-অংশগ্রহণ হয় এবং সিদ্ধান্তগুলো নারীবান্ধব হয়। পুরুষ ও নারীর সম-অংশগ্রহণে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া দাবী করা হয়।
খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট অনিরাপদ এবং হৃদরোগের অন্যতম কারণ। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশেও ট্রান্সফ্যাটের কারণে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগ বিশেষ করে হৃদরোগে মৃত্যু ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত খাদ্য নিশ্চিতকরণে “খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১” পাশ করা হলেও এখনো তা কার্যকরী হয়নি। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রবিধানমালাটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। আজ ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস, ২০২৩ উপলক্ষ্যে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট, হৃদরোগ ঝুঁকি এবং করণীয়” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)।
ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও), যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। সাধারণত বেকারি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে পিএইচও বা ডালডা ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ ওয়েবিনারে জানান, “ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালাটির বাস্তবায়নে আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছি। কোম্পানিগুলোর কিছু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা আশা করছি শীঘ্রই এটির বাস্তবায়ন শুরু করতে পারবো।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট এর সাথে কেবল হৃদরোগ নয়, নানা ধরনের ক্যানসারেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্রবিধানমালার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে আমাদের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।”
২০২৩ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ট্রান্সফ্যাট এলিমিনেশন প্রতিবেদন অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের ৪৩টি দেশ ইতিমধ্যে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ‘সর্বোত্তম নীতি’ বাস্তবায়ন করলেও, বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।