সৈয়দ ছায়েদ আহমদ, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি।।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), শ্রীমঙ্গল’র উদ্যোগে “করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়” বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের সাথে সনাকের ভার্চুয়াল মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধা সাড়ে ৭টায়শিক্ষা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সনাক সহ সভাপতি জলি পাল এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস. এম. জাকিরুল হাসান।
টিআইবি শ্রীমঙ্গল এর এরিয়া ম্যানেজার পারভেজ কৈরী এর সঞ্চালনায় আয়োজিত এ সভায় আরো বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, টিআইবি সিলেট ক্লাস্টারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমা খানম নাজু, বরুনা ফয়জুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার পাল, শ্রীমঙ্গল সনাক সদস্য জহর তরফদার, কবিতা রানী দাস,চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক অনিতা রানী দেব।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বজন আহ্বায়ক এসএ হামিদ, স্বজন সদস্য সৈয়দ ছায়েদ আহমদ, দেলোয়ার মামুন ও চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য জেসমিন খানম প্রমুখ।
সভায় করোনাকালীন সংকট মোকাবেলায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্র্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি ও উদ্যোগ তুলে ধরেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন শ্রীমঙ্গলে অনলাইন পাঠ কার্যক্রম চালু রাখতে জেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারে এর নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন চাবাগান এবং পাহাড়ী এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় সেখানে নোট শীট তৈরী করে পাঠ কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে।
এসময় তারা শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকবৃন্দকে অনলাইন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অনলাইন পাঠ কার্যক্রমের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন অনলাইন ক্লাসে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী দুইজনেরই কিছুটা অনীহা তৈরী হয়েছে। তারপরও শ্রীমঙ্গল এর অভিভাবকগণ অনেক সচেতন তারা নিয়মিত অনলাইনে আসছেন। চাবাগান এলাকায় অভিাবকগণ এখনো অনলাইন সম্পর্কে এতটা অবগত নন। সেখানে আমরা নোট তৈরী করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তিনি এসময় সনাক ও টিআইবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন সনাকসব সময়ই ভালো কাজের অংশিদার, অনলাইন পাঠ বা ক্লাস সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শ এবং সুপারির্শ সাদরে গৃহিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে করোনাকালীন সময়ে বরুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গৃহিত উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন এবং চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার পাল। এরপর করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাস পরিচালনার অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ সমূহ নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ এবং সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরসহকারি শিক্ষক অনিতা রানী দেব।
বক্তাদের আলোচনার প্রেক্ষিতে সনাকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপরিশগুলোর মধ্যে ছিলো চলমান করোনাকালীন সংকটে শিক্ষার্থীদেরকে শিখন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত রাখতে জাতীয়ভাবে গৃহীত কার্যক্রমসমূহে (সংসদ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে পরিচালিত পাঠদান) সর্বোচ্চ সংখ্যাক শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদেরকে উদ্বুদ্ধ করার কাজটি আরো গতিশীল করা; শিক্ষকগণ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিকল্পিত যোগাযোগের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া। শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুর্গম, চা বাগান এবং পাহাড়ী এলাকার শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ নিশ্চিত করা। শ্রেণি শিক্ষক নিজ নিজ শিক্ষার্থীদেরকে সপ্তাহের ৬দিনের জন্য (শনিবারথেকে বৃহস্পতিবার) ৬টি ভাগে তালিকা তৈরি করে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার মোবাইল ফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে পড়ালেখা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের খোঁজ নেবেন; শিক্ষকগণ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিকল্পিত যোগাযোগ যথাযথভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের তথ্য সংরক্ষণ ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ফরমেট (প্রয়োজনে আপনার অনুমতি সাপেক্ষে সনাক এ ধরণের ফরমেট তৈরিতে সহায়তা করতে প্রস্তুত) ব্যবহার করবেন; শিক্ষকদেরকে উক্ত কার্যক্রম কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক তদারকি নিশ্চিত করা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করা; শিক্ষার্থীদেরকে পাঠে উদ্বুদ্ধ করার কাজে এলাকার শিক্ষিত তরুণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংগঠনকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা; নিয়মিত ও করোনাকালে গৃহিত কার্যক্রমের সকল প্রয়োজনীয় হালনাগাদ তথ্য প্রিন্ট ও ডিজিটাল মাধ্যমে উন্মুক্ত করা; করোনকালীন সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ ও নিস্পত্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; প্রাথমিক শিক্ষাখাতে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্নকরণে উদ্যোগ গ্রহণ এবং ব্যয় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং চলমান উপবৃত্তি কার্যক্রম যথাযথভাবে সময়মত সম্পন্ন করতে পূর্ব থেকেই সময়োপযোগী কার্যকর উদ্যোগ গস্খহণ করা ইত্যাদি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সনাক স্বজন এবং ইয়েস গ্রুপের সদস্যগণ এবং টিআইবি কর্মীবৃন্দ।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে “যক্ষা রোগ প্রতিরোধে সংবাদকর্মীদের ভূমিকা” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে স্থানীয় একটি রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি নাটাব শ্রীমঙ্গলের আয়োজনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাটাব শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতি ও সাবেক সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ হরিপদ রায় এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী।
সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ সাংবাদিক মো: কাওছার ইকবাল এর স ালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, দৈনিক খোলা চিঠির সম্পাদক সরফরাজ আলী বাবুল, হীড প্রতিনিধি রাজীব রায়, টিএলসিএ মোঃ মাহবুবর রহমান ও নাটাব বিভাগীয় সমন্বয়ক সুমন চৌধুরী।
যক্ষা রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা তুলে ধরে অতিথিরা যক্ষা রোগ ও এর প্রতিকার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, শুধুমাত্র সচেতনতার মাধ্যমেই এই রোগটি নির্মূল করা সম্ভব। আক্রান্ত ব্যাক্তি ৬মাসের বিনামুল্যে চিকিৎসায় শতভাগ নিমূল করা সম্ভব বলে জানান।
এছাড়াও যক্ষা রোগের বিভিন্ন প্যাথলজি টেষ্ট বিনামুল্যে এবং এর জন্য সরকার দুই হাজার টাকা দিচ্ছে বলে আলোচকগণ জানান। তারা এক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের তাদের পেশাগত দ্বায়িত্বের পাশাপাশি যক্ষ্মা নির্মূলে ভূমিকা রাখার আহবাণ জানান। একই সভায় কুষ্ট রোগ সম্পকেও সংবাদকর্মীদেও অবহিত করা হয়। কুষ্ট রোগের চিকিৎসা এবং তার ঔষধ হাতপাতাল ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না বলে জানান।
মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩০ জন গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন।