মৌলভীবাজার অফিস।। মৌলভীবাজারে ব্যবসায়ী রিপন হত্যার কারণ উন্মোচিত হবার পর সনাক্ত করা হয়েছে খুনিদেরও। ঘটনার সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে মৌলভীবাজার মডেল থানায় এক সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক বৈঠকে(প্রেস ব্রিফিং) এসব তথ্য দেন পুলিশ কর্মকর্তরা। পুলিশ জানায়, দাদন ব্যবসায় লাভমান হতে না পারায় পরিকল্পিত ভাবে পরিচিতরা খুন করে রিপনকে।
রিপন দোকানের পাশাপাশি দাদন ব্যবসা করতো। একই ধরনের ব্যবসা হওয়ায় একই ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের শেখ মোঃ মদন মিয়ার পুত্র আবেদ আহমদের সাথে ব্যবসায়ী দ্বন্দ্ব চলছিল। রিপনের ব্যবসা ভালো চলায় মন্দা চলে আবেদের দাদন ব্যবসা। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আবেদ ও তার সহযোগীরা। তাই রিপনকে প্রাণে হত্যার পরিকল্পনা করে আবেদ। আর এই পরিকল্পনায় যুক্ত হয় সদর উপজেলার জগৎপুর ইউনিয়নের আব্দুর রহিমের পুত্র জাহেদ আহমদ আলাল ও পাগুড়িয়া গ্রামের মৃত মধু মিয়ার পুত্র মিনহাজ মিয়াসহ অন্যরা।
প্রেস বিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ রাশেদুল ইসলাম পিপিএম। এসময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি সোহেল আহাম্মদ, ওসি(তদন্ত) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ওসি(অপারেশন) মোঃ হারুন অর রশিদ, তদন্তকারী এসআই মোঃ তোফাজ্জল হোসেনসহ অনেকেই।
প্রেস বিফিংয়ে বলা হয় গত ১ এপ্রিল গভীর রাতে সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের পাগুড়িয়া গ্রামের কাছন মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া(২৩) কে তার টিনের চালার মুদির দোকানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে রিপনের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের সনাক্ত করে আটক করতে তৎপর হয়। এরই
প্রেক্ষিতে গোপন সুত্রের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে পাগুড়িয়া গ্রামের মৃত মধু মিয়ার পুত্র মিনহাজকে আটক করলে সে রিপন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গত ৯ এপ্রিল সে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজাদারি কার্য বিধি ১৬৪ ধারায়ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দ্বী দেয়। তারই দেওয়া তথ্যানুযায়ী শেখ আবেদ আহমদ ও জাহেদ আহমদ আলালকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, আবেদ আহমদ (২৫) জাহেদ আহমদ আলাল (২৮) ও মিনহাজ মিয়া (২৯। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার আখালকুড়া ইউনিয়নে।
আটককৃত দুজনকে আখাইলকুড়া এলাকা ও অন্যজনকে মৌলভীবাজার শহর থেকে আটক করে পুলিশ। এর সাথে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায় ঘাতকরা খুনের ঘটনা আড়াল করতে রিপনকে খুন করার আগে আশপাশের কয়েকটি দোকানের তালা ভাঙ্গে ও চুরি করে। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় লোকজনের ধারনা হয় চুরি প্রতিরোধেই খুন হয় রিপন। প্রেস বিফিংয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন নিহত রিপনের বাবা কাছন মিয়া। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর কাছন মিয়া বলেন, তার ছেলের ভালো ব্যবহারে তাকে ভালোবাসত এলাকার লোকজন। তাই তার ব্যবসাও ভালো চলছিল। এটি মেনে নিতে পারেনি তার ব্যবসায়ী প্রতিপক্ষরা। তিনি বলেন তার চার ছেলে মেয়েদের মধ্যে রিপন ছিল সবার বড়। তার উর্পাজনে অন্যদের লেখাপড়াসহ পরিবারের যাবতীয় ভরনপোষন চলত। কিন্তু সামান্য স্বার্থের জন্য তারা তার ছেলেকে দুনিয়া থেকে চির বিদায় করে দিল। উল্যেখ্য গত ১ এপ্রিল গভীর রাতে মুদি দোকানী ও দাদন ব্যবসায়ী রিপন মিয়া প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার শেষে দোকানের ভেতরে ঘুমান। সকালে এলাকাবাসী দোকানের দরজা ভাঙ্গা দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করে। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত ছিল।