মন্ত্রী-এমপি, পুলিশ, সাংবাদিকসহ
২৯জনের বিরুদ্ধে মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ২৯ সাংবাদিকসহ মোট ৫২জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে আইনজীবী এম এইচ গাজী তামিম এ অভিযোগ দাখিল করেন।
আইনজীবী এম এইচ গাজী তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে। সেখানে ২০জন মন্ত্রী-এমপি, পুলিশ, সাংবাদিক ও সুশীলকে আসামি করা হয়েছে। যারা গত ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করে উসকানি দিয়েছেন এবং টকশো করে গণহত্যার বৈধতা দিয়েছেন।’
ওই ২৯ সাংবাদিক হলেন-
১. নাঈমুল ইসলাম খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। ২. ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা। ৩. ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেক সভাপতি প্রেসক্লাব, ঢাকা ও সাবেক এমপি। ৪. শ্যামল দত্ত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রেসক্লাব, ঢাকা। ৫. মোজাম্মেল বাবু, সিইও, প্রধান সম্পাদক, একাত্তর টিভি। ৬. নবনীতা চৌধুরী, সাংবাদিক ও টিভি সঞ্চালক। ৭. সুভাষ সিংহ রায়, সম্পাদক, এবি নিউজ ২৪ ডটকম। ৮. আহমেদ যোবায়ের, সাবেক এমডি, সময় টিভি। ৯. তুষার আব্দুল্লাহ, বার্তা প্রধান এখন টিভি। ১০. সাইফুল আলম, সম্পাদক, যুগান্তর। ১১. নইম নিজাম, সাবেক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১২. আবেদ খান, সাবেক সম্পাদক, কালবেলা ও সমকাল। ১৩. প্রভাষ আমিন, বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ। ১৪. ফারজানা রুপা, সাবেক প্রধান প্রতিবেদক, একাত্তর টিভি। ১৫. শাকিল আহমেদ, সাবেক বার্তা প্রধান, একাত্তর টিভি। ১৬. মিথিলা ফারজানা (মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা), সাবেক হেড ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, একাত্তর টিভি। ১৭. জাহেদুল হাসান পিন্টু, সম্পাদক, ডিবিসি। ১৮. মঞ্জুরুল ইসলাম, প্রধান সম্পাদক, ডিবিসি। ১৯. আশীস সৈকত, প্রধান বার্তা সম্পাদক, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি। ২০. মানস ঘোষ, হেড অব নিউজ, এশিয়ান টিভি। ২১. প্রণব সাহা, ডিবিসি। ২২. মাসুদা ভাট্টি, বাংলাদেশের সাবেক তথ্য কমিশনার। ২৩. মুন্নী সাহা, সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন নিউজ। ২৪. জ ই মামুন(জহিরুল ইসলাম মামুন) সাবেক প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, এটিএন বাংলা। ২৫. স্বদেশ রায়, নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৬. সোমা ইসলাম (চ্যানেল আই)। ২৭. শ্যামল সরকার (ইত্তেফাক)। ২৮. অজয় দাশ (সমকাল)। ২৯. আশরাফুল আলম খোকন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উপপ্রেস সচিব।
এ ছাড়া অভিযোগে আরও সাংবাদিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কথিত সুশিল ব্যক্তিদের অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সারা দেশের সাথে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৌলভীবাজারে মাত্র একদিন আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। গেল ৪ঠা আগষ্ট মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে মিছিল সহকারে শিক্ষার্থীরা শহরের চৌমুহনা এলাকায় এলে আ’লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।
ওই ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। মামলায় আসামী করা হয় ৩০৩ জনকে। মামলা দায়ের করেন রাজনগর উপজেলার মেদেনীমহল গ্রামের আব্দুল আজিজ’র পুত্র শিক্ষার্থী আব্দুল কাদির তালুকদার, সদর উপজেলার নিতেশ্বর গ্রামের মোঃ রমজান আলীর’র পুত্র আরিফ আহমেদ ও পাগুলিয়া গ্রামের রাজনগর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাবেদ মিয়া। ওই ৩ মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৭জনকে।
নন-এফআইআর ভুক্ত মামলায় উল্যেখ করা হয়, গেল ৪ঠা আগষ্ট শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে যখন চৌমুহনা এলাকায় আসেন তখন আসামীরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালান। লুটপাটসহ ভাংচুর করা হয় বিভিন্ন দোকানপাট। পৃথক ৩টি মামলার তদন্তভার দেয়া হয় মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুলতানুর রহমান, নাজমুল হোসেন ও শফিকুলকে।
এক মামলার বাদী শিক্ষার্থী আব্দুল কাদির তরফদার বলেন, মামলার আসামী গ্রেফতার করতে পুলিশ তাদের দ্বায়িত্ব পালন করছে না। আসামীরা অহরহ দিনদুপুরে শহরে ঘুরাচ্ছে। যদি তারা আসামীদের গ্রেফতার না করেন তবে শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নেমে তাদের দাবী আদায় করবে।
মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুলতানুর রহমান শুক্রবার বিকেলে বলেন, আব্দুল কাদির তরফদারের দেয়া মামলায় ১৫৫ জন আসামীদের মধ্যে ৪ আসামী গ্রেফতার হয়েছেন। থানার অপর উপ-পরিদর্শক নাজমুল হোসেন বলেন, আরিফ আহমদ’র ৪৯ জনকে আসামী করে দায়ের করা মামলায় ১ জনকে আটক করেছি। অপর মামলায় আরো ২জন গ্রেফতারসহ মোট গ্রেফতার হয়েছেন ৭জন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নজরুল শুক্রবার বিকেলে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কয়জন আটক হয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে বলতে হবে।