-নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় নেতৃবৃন্দ
স্বীকৃতি বড়ুয়া, ১৪ই ডিসেম্বর ২০১৯, নিউইয়র্ক।। ১৯৯২ সালে যে আন্দোলন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম শুরু করেছিলেন, মূলত সেই আন্দোলনের কারণেই বাঙ্গালী জাতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে এক হতে পেরেছিল এবং সেই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করতে পেরেছিলেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচারের দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সংগঠনের নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের নেতৃবৃন্দ।
গত ২৬শে জানুয়ারি শনিবার নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় বিটি ড্রাইভিং স্কুলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার শুরুতেই মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ বিরঙ্গনা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ জননী জাহানা ইমাম এবং সম্প্রতি প্রয়াত অধ্যাপক অজয় রায়, নারী নেত্রী প্রতীতি দেবী, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি লেখক ও সাংবাধিক শাহরিয়ার কবিরের সহধর্মিণী ফাতেমা কবির, সংগঠনের নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের উপদেষ্টা কণ্ঠযোদ্ধা রথিন্দ্রনাথ রায়ের মা বীণাপাণি রায়, সদস্য ওবায়দুল্লাহ মামুনের মা সৈয়দা রহিমা বেগম ও ডানা ইসলামের মা জোবেদা খাতুনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সভার আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন যেই আদর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং যেই যুদ্ধাপরাধী মুক্ত বাংলাদেশের জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আন্দোলন করেছিলেন সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে ধর্মান্ধ মৌলবাধী সাথে আপোষ করা বন্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭২-এর সংবিধান থাকলে আজ শরিয়ত বয়াতির মত একজন বাউলকে কারাগারে থাকতে হত না। ৭২-এর সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা আছে, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্ম হীনতা নয়! কিন্তু আজ ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের যেই তৎপরতা, সারা বাংলাদেশে ওয়াজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর যে এক রম রমা ব্যবসা, পাঠ্য পুস্তকে জামায়েত শিবিরের আদর্শ বাস্তবায়নের যে চক্রান্ত তাতে মনে হয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের পাশাপাশি সত্যিকারের মুসলমানরাও আজ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হয়ে পরছে। বাংলাদেশে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার আছে, তাই আমরা আমাদের দাবি এই সরকারের কাছে উত্থাপন করতেই পারি। আমরা আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শাপলা চত্বরের চক্রান্তকে যেভাবে কঠিন হস্তে দমন করেছিলেন, কোনরকম আপোষ না করে ঠিক একইভাবে তিনি যেন মৌলবাদীদের ও দুর্নীতিবাজদের দমন করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে ৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ৭৫ এর ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত একটি দিনও বিশ্রাম নেননি। বাংলাদেশকে কিভাবে গড়া যায় সেই লক্ষ্যে দিন রাত কাজ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের পরে একজন সামরিক শাসক তথাকতিত বহুদলীয় গণতন্ত্রে নামে কুখ্যাত গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিল এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। সেই কঠিন সময়ে নিজের সন্তান ও স্বামী হারানোর বেদনাকে বুকে নিয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ব্যতীত হই যখন দেখি সেই যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের ওয়াজ মাহফিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের কোন মন্ত্রী বসে আছেন। আমরা হতাশ হই যখন খবরের কাগজে দেখি দেশের হাজার হাজার লুট করে বিদেশে পাচার হচ্ছে। বক্তারা বলেন যাদেরকে খুশি করার জন্য আজ শরিয়ত বয়াতিকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল, তারা দেশকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মত ধর্মান্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার দীর্ঘ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের শক্ত হাতে দমন করতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। আলোচনা সভায় বক্তারা শরিয়ত বয়াতির মুক্তির দাবি জানান এবং আদালত কতৃক দণ্ডপ্রাপ্ত কোন যুদ্ধাপরাধী নামের পূর্বে ‘শহীদ’ শব্দ ব্যাবহার যেন দণ্ডনীয় অপরাধ হয় সেইরকম আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
সভায় বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য যথাক্রমে মূলধারার রাজনীতিবিদ মোরশেদ আলম, সাংবাদিক কৌশিক আহমেদ, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, কবি হাসান আল আবদুল্লাহ, শফি চৌধুরী হারুন, সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল সান্যাল, অধ্যাপিকা হোসনে আরা, রাজনীতিবিদ জহুরুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সঞ্জীবন সরকার, শামসুল আলম, এবং কমিউনিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।