এই সময়ে যে শরণার্থী সংকট ইউরোপকে গ্রাস করতে বসেছে তার হোতা মার্কিণ সরকার ও তার প্রশাসন
লন্ডন, সোমবার
২১শে কার্তিক ১৪২৩
৭ই নভেম্বর ২০১৬
(পরের অংশ)
রাত পোহালেই ৮ই নভেম্বর মঙ্গলবার। আমেরিকার নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে ইতিপূর্বে আমরা আরো দু’টি লেখা পত্রস্ত করেছিলাম। দ্বিতীয় অংশটি ছাপা হয়েছিল গত ২৩শে অক্টোবর। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ অংশটি আজ দেয়া গেল।
ইসরায়েল! তাবৎ দুনিয়ার যে কোন সমস্যার পেছনে একটু হাঁটলেই তাদের পদরেখা পাওয়া যাবে। হিলারির উইকিলিক্সের যে তথ্য মানুষের সামনে এসে হাজির হয়েছে তাতে স্মরণ করা যায় ২০১২ সালের মে মাসে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে ইরানের আলাপ। আর সে আলাপ হয়েছিল ইস্তামবুলে ইরানের পারমানবিক শক্তি কর্মসূচী নিয়ে। যদিও উইকিলিক্সের তথ্যে তারিখ ছিল ৩১শে ডিসেম্বর ২০১২ সাল। এ ছিল তারিখের একটি ভুল।
ওই ইমেইলে এ বিষয়টি পরিস্কার বুঝা যায় যে মূল থেকেই মার্কিণ কৌশল ছিল ছল-বলে-কৌশলে সিরিয়ার সুপ্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করে দিয়ে এক আঁতুর রাষ্ট্রে পরিণত করা যা কি-না ইসরাইলের জন্য প্রয়োজন!
নিচে ফাঁস হয়ে যাওয়া ইমেইলটির ‘স্ক্রিন প্রিন্ট’ পড়ে তাই স্বচ্ছভাবে বুঝা যায়। ওখানে সুস্পষ্টভাবে লিখা আছে- “The best way to help Israel deal with Iran’s growing nuclear capability is to help the people of Syria overthrow the regime of Bashar Assad,” ক্লিনটনের নিজের কথা, যদিও প্রায় সব মার্কিণ গোয়েন্দা বার্তা ছিল যে ইরাণের এটম বোমা বানানোর বিষয় একটি মিথ্যা ও ধোঁকা।
ক্লিন্টন এই মিথ্যাকে বারংবার ব্যবহার করেছেন কেবল মাত্র ইসরাইলের স্বার্থে সিরিয়াকে ধ্বংস করার জন্য।
তিনি সুস্পষ্টভাবে ইরাণের এটম বোমা তৈরীর অলিক কাহিনীকে সামনে এনে বলেছেন যে ইরাণের এই কর্মসূচী, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের একক আধিপত্যের জন্য বিপজ্জনক। তার মতে ইরাণ এটম তৈরী করার সুযোগ পেলে তা সিরিয়ার এটম তৈরীর পথ খুলে দেবে। আর সিরিয়া যদি কোন কলে এটম তৈরীর পথে হাটে তা’হলে সাথে সাথে ইসরাইলের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব ও মিশরও একই পথে হাটবে। অর্থাৎ তারাও “এটম বোমা” বানাবে। আর এ সবকিছুই হলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে। অতএব ক্লিন্টনের কথা, সিরিয়াকে আগে ধ্বংস করতে হবে।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আর ইরাণের পারমানবিক শক্তি কর্মসূচী, একটির সাথে অপরটির কোন সম্পর্ক আছে তা খোলা চোখে দেখতে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে ইসরাইলের সামরিক নেতৃত্ব ভীষণ চিন্তিত। তারা তাদের এটমিক একাধিপত্য হারাতে যাচ্ছেন অথচ কিছু বলতেও পারছেন না। এর ফল দাড়াবে এক নিরাপত্তাহীন অনিশ্চিত পারমানবিক সমতা, যেখানে ইসরায়েল কখনও কোন উস্কানীর বিরুদ্ধে সিরিয়া বা লেবাননে কোন সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারবেনা। এখন যেভাবে পারছে।
ইরাণ যদি একটি পারমানবিক শক্তির দেশ হয়ে যায় তা’হলে অতি সহজেই তার বন্ধু রাষ্ট্র সিরিয়া বা লেবাননের হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে। এখানেই শেষ নয়, ক্লিন্টন আরো বলছেন- “সিরিয়ার বাসার আল আসাদের সরকারের সাথে ইরাণের যে কৌশলী সম্পর্ক রয়েছে এতে ইরাণ কোন সময়ই ইসরায়েলের নিরাপত্তা শক্তিকে পরোয়াই করবেনা। অবশ্য ক্লিন্টন স্বীকার করেন যে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে ইরাণ কখনও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন সরাসরি সামরিক আক্রমণে যায়নি তবে নেপথ্যে থেকে যে কাজ করেছে তার অভিযোগতো রয়েছে।”
ক্লিন্টন আরো বলেন- “ আসাদ শাসনের অবসান এই ভয়ঙ্কর আঁতাতের অবসান করবে। ইসরায়েলি নেতৃত্ব এখন বুঝেন ভাল, কেনো আসাদকে পরাস্ত করা তাদের জন্য মঙ্গলজনক।
আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা ইসরায়েলের জন্য শুধু একটি আশীর্বাদই নয়, তারা যে পারমানবিক একাধিপত্য হারাতে যাচ্ছিল তা বুঝতে সহজ হবে।
এরপর হয়তো আমেরিকা ও ইসরায়েল একটি সাধারণ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে যে কখন কি ভাবে ইরাণের বিরুদ্ধে কিছু করতে হবে যদি ইরাণের পারমানবিক কর্মসূচীতে আশঙ্কাজনক কিছু দেখা যায়।”
বাসার আল আসাদ ও তার পরিবার পরিজনকে সরাসরি হুমকি দেয়ার কথা বলে ক্লিন্টন আরো বলছেন, সংক্ষেপে, “ইরাণকে নিয়ে ইসরায়েলের সাথে আমেরিকার যে উত্তেজনা, হোয়াইট হাউস পারে এই চাপকে সহনশীল মাত্রায় আনতে সিরিয়ার সাথে সঠিক কাজটি করে।”
এই ইমেইল প্রমাণ করে যে মধ্যপ্রাচ্যে যা কিছু হচ্ছে তার সবকিছুরই পৃষ্ঠপোষক মার্কিণ সরকার। শুধুমাত্র ইসরায়েলকে রক্ষা করতে। এ আলোচনার পর কেউ যদি ভাবে যে মধ্যপ্রাচ্যে যা হচ্ছে এবং বিশেষকরে এই সময়ে যে শরণার্থী সংকট ইউরোপকে গ্রাস করতে বসেছে তার হোতা মার্কিণ সরকার ও তার প্রশাসন, তা’হলে মনে হয় মিথ্যাচার হবেনা।
বলা প্রয়োজন যে, ২লক্ষ ৫০ হাজারের উপর মানুষ হত্যা করা হয়েছে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে যার জন্য সকল ধন্যবাদ দিতে হয় মহামান্য মিসেস ক্লিনটন ও ওবামা প্রশাসনকে। কারণ সিরিয়ায় সৃষ্টিকরে বিদ্রোহীদের স্বার্থকরূপে গৃহযুদ্ধের উস্কানী দিয়ে সফলতা অর্জনের জন্য।